অনলাইন

করোনায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনার প্রস্তাব বিএনপির

অনলাইন ডেস্ক

৪ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ১:৩২ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনা ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

আজ শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলো এই সংকট নিরসনে যথেষ্ট নয় বলে আমরা মনে করি। চলমান করোনা সংকট কেবল জীবনের জন্য ঝুঁকি নয়, অর্থনীতির জন্যও তা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। আর এ জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়বে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। এজন্য আমরা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব রাখছি। সরকার এই প্রস্তাবগুলো সদয় বিবেচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্য জিডিপর তিন শতাংশ অর্থাৎ ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।

করোনাভাইরাসের চিকিতসার বিষয়ে স্বল্প মেয়াদী সুপারিশের মধ্যে করোনা চিকিতসক, নার্স, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগীদের চিকিতসার সাথে যুক্ত চিকিতসা সহকারিদের জরুরী ভিত্তিতে পিপিই, কিট ও আনুষঙ্গিক ঔষধ ও দ্রব্যাদি সরবারহ,রাজধানী ঢাকা, জেলা-উপজেলা পর্য়ায়ে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল স্থাপন, পৃথক কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনের ব্যবস্থাগ্রহন, সংশ্লিষ্ট চিকিতসক ও নার্সদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাগ্রহন, পর্যাপ্ত টেস্টিং কিট আমদানী ও উতপাদন,দ্রুত নতুন আইসিইউ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর ও চিকিতসা সামগ্রি শুল্ক আমদানির ব্যবস্থা করা, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল ও রাজধানীর বড় বড় শুণ্য আবাসিক হোটেলগুলোকে সাময়িকভাবে হাসপাতালে রূপান্তরীত করা, নদীতে ভাসমান জাহাজে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা। মধ্য মেয়াদী প্রস্তাবনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতিপয় সিদ্ধান্তের সাথে ঋণগ্রহীতাদের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সুদ মওকুফ ও ঋণের নিয়মিত কিস্তি তিন মাসের জন্য স্থগিতকরণ, সকল ব্যাংককে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা প্রদান, তারল্য বৃদ্ধি করে ফিন্সাশিয়াল মার্কেটের আস্থা বাড়াতে সম্প্রসারণশীল মনিটরিং পলিসি গ্রহন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ন্যুনতম ১৫%-১৬% উন্নীতিকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেইট, সিআর, এসএলআর, রিপো‘র হার কমানো, ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড ক্রয়, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের জন্য এবং বিশেষ করে দশীয় পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য রি-ফাইন্যান্স করা, এসএমইর অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করতে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট রিলিফ প্যাকেজ প্রদান, সরকারের ব্যয় সংকোচন, অপচয় রোধ করে সেই অর্থ দিয়ে রপ্তানীমুখী শিল্প, ঔষধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিল্পকে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান, করনীতির আওতায় করপোরেট করের হার হ্রাস, আপদকালীন সময়ের জন্য কর মওকুফ, ব্যক্তিগত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এডভান্স ইনকামট্যাক্স আদায় বন্ধ রাখা, অপ্রয়োজনীয়, অনুতপাদনশীল ও কম গুরত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেয়া, অপচয় রোধ, কঠোর কৃচ্ছতা সাধন করা, মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যয় কিছুটা মন্থর করা, অসাধু ব্যবসায়ী ও দালাল শ্রেনীর লোকদের ওপর নজরদারি রেখে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, উতপাদন ও সরবারহ চেইন নির্বিগ্ন রাখা, অবিলম্বে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী ডেভলপমেন্ট ব্যাংক ও আইএমএফসহ দ্বি-পাক্ষিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে অর্থ সংগ্রহ করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাজুয়েটি জমা দুযোর্গকালীন সময় পর্যন্ত স্থগিত রাখা, প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে এই সময়ে ছাটাই না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ড স্থবির হওয়ায় তা সচল করতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ, কৃষিখাতে সহায়তা প্রদানে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ, খাদ্য প্রবাহ যেন বন্ধ না হয় সেজন্য ব্যবস্থাগ্রহনের সুপারিশ রয়েছে। গণমাধ্যমের জন্য আর্থিক প্যাকেজ প্রদানের সুপারিশ করে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র,মানবাধিকার, আইনের শাসন,স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, তথ্য প্রবাহ ও জনমতামত তুলে ধরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকি মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। করোনাভাইরাস মহামারীতে সংবাদ কর্মীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যে আর্থিক প্যাকেজ পেশ করা হয়েছে তার অধিকাংশই যুক্তিসঙ্গত। দেশের এই ক্রান্তিকালে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাংবাদিকদের আর্থিক ও অন্যান্য দাবিগুলো সুবিবেচনা করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদী প্রস্তাবনা মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তাদের মৌলিক ভুমিকায় ফিরিয়ে এনে বিধবস্ত অর্থনৈতিক ও ব্যাংকি ব্যবস্থায় যথাযথ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আর্থিক, ব্যাংকিং ও কর ব্যবস্থায় সংস্কার, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কাঠামোগত নীতি গ্রহন, প্রবাসীরা দেশে ফিরলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাগ্রহন কথা বয়েছে।

সংক্রামক মহামারীর প্রসঙ্গ টেনে প্রস্তাবনায় বলা হয়, দেশে ইবোলা, ডেঙ্গু বা করোনা ভাইরাসের মতো মহামারী মোকাবিলায় যথাযথ সক্ষমতা গড়ে তুলতে দক্ষ জনবল, পরীক্ষা কিট, পিপিই, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও আধুনিক চিকিতসা যন্ত্রপাতি সম্বলিত পর্যাপ্ত সংখ্যক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরা যুদ্ধাবস্থার মতো যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। সররকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভেন্টিলেটর নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলা, ইনিভার্সাল হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ প্রয়োজন তা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্ধ বিএনপির ঘোষিত ভিশন-২০৩০ মোতাবেক জিডিপির ৫% উন্নীতি করতে হবে।”
২৭ দফার সুপারিশ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের সুপারিশগুলো জরুরীভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি উদার্ত আহবান জানাচ্ছি।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিতসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, গণমাধ্যমের সাংবাদিক, দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজ্ঞানী, রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিরলস ভুমিকার প্রশংসা করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন বিএনপি মহাসচিব।
করোনা সংক্রামণ থেকে রক্ষায় কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যথাযথ সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহন সুপারিশ রয়েছে এই প্যাকেজ প্রস্তাবনায়।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দলের কার্য্ক্রম তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিও বার্তায় দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের স্থানীয় পর্যায়ে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহন এবং শাটডাউনের কারণে কর্মহীন দুঃস্থ জনগনের মুখে দু‘মুঠো খাবার তুলে দিতে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
মহামারীর ভয়াবহতা অনুভব করে বিএনপি প্রথম থেকেই জনগনের মধ্যে গণসচেতনামূলক সচিত্র লিফলেট, মাস্ক,  বিতরণ করে, দিনমুজুর শ্রেনীর কষ্ট কিছুটা লাগবে সারাদেশে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ড্যাব হেল্প লাইনের মাধ্যমে চিকিতসা সেবা ও সহযোগিতা প্রদান শুরু করেছে। প্রতিদিন এই কার্য্ক্রমের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যতদিন প্রয়োজন আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে এই কার্য্ক্রম অব্যাহত থাকবে।”
‘এটা কী উদাসিনতা না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করেও আইইডিসিআর এর হটলাইনে ফোন করে সেবা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। পত্রিকায় সূত্র অনুযায়ী দেশে গত দুই মাসে ৮ লক্ষ মানুষ করোনা হটলাইনে টেস্টের জন্য ফোন করেছে। আইইডিসিআর একাই ৭০ হাজারের উধের্ব কল পেলেও ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ১‘শ জনকে টেস্ট করেছে তারা। তার মধ্যে ৪৮টি কেইস পজেটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বারংবার তাগিদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বনিম্ন টেস্টিং দেশের অন্যতম। অন্যদিকে ফেটেলিটি রেইটের চিত্র দেখলে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের করোনা মৃত্যুর হার বিধবস্ত ইতালীর তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে করোনা মৃত্যুর হার ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ ইতালীতে করোনা মৃত্যুর হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ। নিসন্দেহে রোগ পরীক্ষার স্বল্পতাই এই হিমশীতল মৃত্যু হারের কারণ। প্রতি হাজারে দক্ষিন কোরিয়া যেখানে টেস্ট করেছে ৬জন সেখানে বাংলাদেশ প্রতি ১০ লক্ষে টেস্ট করেছে মাত্র ৬ জন। এটা উদাসীনতা না উদ্দেশ্যে প্রণোদিত তা আমাদের বোধগম্য নয়। এই মহাদুযোর্গের সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যের অস্বচ্ছতার কারণে জাতিকে কোনো চড়া মূল্য দিতে হয় কিনা সেটাই আশংকা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status