বাংলারজমিন

দক্ষিণাঞ্চলের অসহায়ের পাশে মানবিক মানুষ

জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে

২ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৭:০৬ পূর্বাহ্ন

মানুষ মানুষের জন্য- অমর এ বাক্য তথনই বোঝা যায় যখন মানুষ বিপদে পড়ে। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ বোঝার দুর্ভাগ্য অনেকেরই হয়নি। তবে ভয়ংকর ঘুর্নিঝড় সিডরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে নেমেছিল দখিনের মানুষ। নিজের ঘরের খাবার ভাগ করে দিয়েছির অভুক্তকে। ঠিক তেমনি করোনা ভাইরাস আবার সবাইকে এক কাতারে দাড় করিয়েছে। এক ধরনের অঘোষিত লকডাউনে দিশেহারা দরিদ্র মানুষের পাশে সাহায্য সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে এসেছে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ্। যেমন প্রশাসন  বা সিটি কর্পোরেশন তেমনি সাধারণ মানুষও পিছিয়ে নেই। এলাকায় এলাকায় যুবকরা নেমে পড়েছে যার যা সামর্থ তাই নিয়ে। ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসার এ ধরণের মন মানসিকতা বিশ্বে উদাহরণ হতে পারে।
প্রানঘাতি করোনা ভাইরাসের হানার শুরুতে দখিনের মানুষ তেমনে একটা আমলে নেয়নি। কিন্তু যখনই হাসপাতালে ভিড় বাড়তে থাকে, সরকার শক্ত হাতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রন শুরু করে তখনই বিপদটা বুঝতে পারে এ অঞ্চলের মানুষ। আর যখন ব্যবসা বানিজ্য, লঞ্চ, বাস অটোসহ পরিবহন বন্ধ করে দেয় তখনই আসে ভিন্ন ধরেনের বিপদ। একদিকে করোনায় ভযাবহতার আতঙ্ক, অপর দিকে বেকার হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের খাবারের জন্য হাহাকার। তবে সে হাহাকার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই যার যা আছে তা নিয়ে এসব মাসুষের পাশে দাড়িয়ে যায়।  বরিশাল সিটি কর্পোরেশন পিছিয়ে থাকলেও এখন তারা প্রতিদিনই বস্তি এলাকায় খাদ্য সামগ্রি পৌছে দিচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন প্রথম থেকেই মাঠে নামে। সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার তাদের চেষ্টা, মানুষিকতা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। প্রথমে ভয়াবহ এ ভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা, মাস্ক, হ্যান্ডরাইজার বিতরণ, আর এখন দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে র‌্যাব, পুলিশ বাহিনীও। বেশ কয়েকজন ওসি, এসআই নিজেদের বেতনের টাকা দিয়ে খাবার কিনে দরিদ্রকে দেয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এগুলো অসাধারণ মহত কাজের উদাহরণ।   এদিক দিয়ে ডাঃ মনিষা চক্রবর্তীর হাত ধরে বাসদ যা সামর্থ তা নিয়ে প্রতিদিনই ছুটছে দরিদ্র অসহায় মানুষের দোরগোড়ায়। তাদের কাজ এরই মধ্যে সাধারনের মাঝে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ত্রানকাজে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা বসে নেই। প্রতিদিনই অগনিত গ্রুপ ছুটছে বস্তি এলাকায়। হেমায়েত মল্লিক অটো রিকশা চালক। আজ ১০দিনের মত ঘরে বসে আসেন। তবে তার ঘরের খাবারের সংকট নেই বলে জানান। বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত যা পেয়েছেন তাতে তার মাস চলে যাবে। একই অবস্থা প্রায় সব বস্তি এলাকায়। জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান দিনভর ছুটছেন এলাকা থেকে এলাকায়। তেমনি পুলিশ কমিশনার নিজে তদারকি করছেন ত্রাণ বিতরনের। শুধু ত্রান নয়, ভাইরাস বিস্তার রোধে সড়কে সড়কে গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানো, মাইকিং করে মানুষকে ঘরে থাকার আহবান জানানোসহ দিনভর পরিশ্রম করে যাচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী। বিসিসি মাঠে নামার পরপরই সক্রিয় হয়ে উঠেছের কাউন্সিমলররাও। মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহর দিক নির্দেশনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা প্রতিদিন দিন যা পারছেন তা নিয়ে গরিবের হাতে কিছু তুলে দিচ্ছেন।  ৭নং, ১৮নং ২১ নং ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত ত্রান কাজ চলছে বেশি। বসে নেই মিডিয়া সংগঠনও। বরিশাল প্রেসক্লাব প্রতিরাতে ২০০ জনকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে সপ্তাহ ধরে। উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত সবাই এগিয়ে এসেছেন সাহায্য নিয়ে। এমইপি, জে আহমেদ এন্ড কোং, বেলভিউ, রাহাত আনোয়ার হাসপাতালসহ অগনিত সংগঠন এখন মাঠে। এ সবই মানবতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
শুধু বরিশাল শহর নয়, গৌরনদীতে ইউএন ও নিজে চাল নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে বাড়িতে। বানারীপাড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান কাধে বস্তা নিয়ে ছুটতে দেখা গেছে। একইভাবে প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়নে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। যেভাবে প্রশাসন এগিয়ে এসেছে, তাদের সাথে কাধে কাধ মিলেয়ে নেমেছে বেসরকারী সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status