ভারত
দিল্লির তাবলিগ জামায়েত থেকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে ভারতে তোলপাড়
কলকাতা প্রতিনিধি
২০২০-০৪-০১
করোনা সংক্রমণের প্রশ্নে দিল্লির নিজামউদ্দিন এলাকার ‘তাবলিগ জামাত’ ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই এই জামাতে অংশ নেওয়া ৩০৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের হদিস মিলেছে। আর জামায়েত থেকে বিভিন্ন রাজ্যে ফিরে যাওয়া ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা সংক্রমণের কারণে। গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হওয়ার আশঙ্কায় ভারতজুড়ে এই তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের খুঁজে বের করে আইসোলেশনে পাঠাতে রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়েছে। বিদেশ থেকে আসা ইসলামি ধর্মপ্রচারকদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, এই ঘটনায় করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই অনেক কঠিন হয়ে গেল। দেশজুড়ে করোনা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই গত ৮-১০ মার্চ দিল্লি নিজামুদ্দিনে আলামি মার্কেজ বাঙ্গালেওয়ালি মসজিদে ধর্মীয় জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিগি জামাত। তাতে যোগ দিতে এসেছিলেন দেশ-বিদেশের হাজার দুয়েকের বেশি মানুষ। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের আবহেই মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কিরঘিজস্তান থেকে বিদেশিরা এসেছিলেন। বাংলাদেশ থেকেও বেশ কয়েকজন যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মূল জমায়েত শেষ হওয়ার পরেও নিজামউদ্দিন এলাকাতেই থেকে গিয়েছিলেন কয়েক হাজার । ২১ মার্চ ওই মসজিদে ছিলেন ১৭৪৬ জন। যাঁদের মধ্যে ২১৬ জন বিদেশি। আর গোটা দেশে সেই সময়ে বিদেশ থেকে আসা মুসলিম ধর্মপ্রচারক ছিলেন ৮২৪ জন। তবে দিল্লি পুলিশ নিজামুদ্দিন এলাকার মসজিদ থেকে গত দুই দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ২১৬জন বিদেশি সহ ১৭৪৬ জনকে। এর মধ্যে.১২০৩ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩০৩ জন করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গেছে। সকলকেই উদ্ধার করে কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাবলিগ জামায়েতের আয়োজকদের বিরুদ্ধে দায়িত¦জ্ঞানহীনতার অভিযোগ এনেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বলা হয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে যখন দেশ লড়ছে, তখন বিদেশিদের নিয়ে ধর্মীয় সম্মেলনের আয়োজন করে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে তবলিঘি জামাত। দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা মঙ্গলবার তাবলিগ জামায়েতের আয়োজক মৌলানা সাদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। নির্দেশ অমান্য করে আলামি মার্কেজ বাঙ্গালেওয়ালি মসজিদে জামায়েত করার জন্য ভারতীয় ফৌজদারি বিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি তাবলিগে যোগ দেওয়া বিদেশ থেকে আসাদেরভিসা বাতিল করা হয়েছে। পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে এসে ধর্মপ্রচারের কাজ জালিয়ে যাওয়ায় ৮০০ জনকে কালোতালিকা ভুক্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়ার পরই প্রবল সোরগোল তৈরি হয়েছে। দিল্লিকে করোনা সংক্রমণের হটস্পট বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। জামাতিদের ব্যাপারে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে প্রথম সতর্ক করেছিল ২১ মার্চ। তার পর ২৮ মার্চ সব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে তারা জামাতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে। ওই ব্যক্তিরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। ২৯ মার্চ রাজ্যগুলিকে চিঠি দেন ইন্টেলিজেন্স বুরোর প্রধান। কিন্তু একাধিক রাজ্যের দায়সারা মনোভাবে হতাশ হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এখন নিজামউদ্দিন এলাকায় সংক্রামিতের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তেলেঙ্গানাসহ তিনটি রাজ্যে মৃত্যুর খবর জানার পরই সকলে নড়েচড়ে বসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাবলিগ জামায়েতে অংশ নেওয়াদের মধ্যে তামিলনাডুতে ৫০ জনের, দিল্লিতে ২৪ জনের, তেলেঙ্গানার ২১ জনের, আন্দামাওেনর ১০ জনের এবং আসাম ও জম্মু-কাশ্মীরের ১জনের শরীওে করোনা সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইট বার্তায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁরা দিল্লির তাবলিগ জামায়েতে গিয়েছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। অতি দ্রুত তাঁদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো হবে এবং ১৪ দিনের জন্য তাঁদের আবশ্যিক কোয়রান্টিনে পাঠানো হবে। তবে মঙ্গলবারর রাতে নবান্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দিল্লি থেকে রাজ্যে ফেরা সকলকেই চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাঁদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা হচ্ছে, তাঁরা ইতিমধ্যে কত জনের সংস্পর্শে এসেছেন। সেই তথ্য পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বিদেশিদের মধ্যে রাজাবাজারের একটি মসজিদে তাইল্যান্ডের ১৩ জন তাবলিগ জামাতি এবং ৬ জন স্থানীয় ধর্মপ্রচারক গত ৮-১০ দিন ধরে রয়েছেন। মেটিয়াবুরুজের মসজিদে মালয়েশিয়ার ৯ জন এবং ইন্দোনেশিয়ার ৪ জন জামাতি আটকে রয়েছেন। কলুটোলার এক মসজিদে মায়ানমারের ১৪ জন জামাতিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।