অনলাইন

মেঘনা নদীতে অবাধে চলছে মৎস্য শিকার

মতলব উত্তর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি

৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ২:৪৫ পূর্বাহ্ন

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত একশ’ কিলোমিটার মার্চ-এপ্রিল দু’মাস মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম। এরমধ্যে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের মেঘনা নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরার ব্যাপারে সরকার দু’মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেঘনার অভয়াশ্রমে মৎস্য শিকারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি মেঘনা সীমানায় বসানো হয়েছে কোস্টগার্ডের ক্যাম্প।
এতদসত্বেও মতলবের মেঘনায় অবাধে চলছে মৎস্য শিকার এবং উপজেলার মৎস্য আড়ৎগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে বেচা-কেনা চলছে রমরমা। সকল প্রকার মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে এখানকার আড়তগুলো থেকে পিকআপ গাড়িতে করে মাছ যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। ট্রলারে করে পাইকাররা মাছ নিয়ে যাচ্ছে মুন্সিগঞ্চের বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ অন্যান্য স্থানে।
মেঘনার পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চল থাকছে জেলেদের দখলে। ওখানে মেঘনায় মৎস্য শিকারের ক্ষেত্রে দিন আর রাত উভয় একই, নদী থাকছে সর্বদাই জেলেদের দখলে। ওখানকার অস্থায়ী ৩টি আড়ৎ-এ বেচা-কিনি হচ্ছে নিয়মিতভাবে। দায়সারা কোন অভিযান ওখানে গেলেও মৎস্য বানিজ্য নিয়ন্ত্রনে থাকা স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী তা জেনেযাচ্ছে আগেবাগেই।
এরমধ্যে ৩১মার্চ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার ষাটনল মালোপাড়া সংলগ্ন বাজারে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি করছে, নদীতে শতাধিক জেলে নৌকায় জেলেরা ভিজাজাল পরিস্কার করছে আপন খেয়ালে, ব্যস্ত কেউ কেউ এখনো নদীতে মাছ ধরায় ব্যস্ত রয়েছে। মাছের আড়তে চলছে পাইকারী বেচাকিনির মহাউৎসব। নদীতে কিছু ট্রলারে পাইকাররা মাছ নিয়ে উঠছে নিজ নিজ বাজারে এগুলো বিক্রির জন্য। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জের চরাঞ্চলের আকবর আলী ও কালাই মিয়ার ট্রলার ছিল পাইকারে ভরপুর।
মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কয়েশ' গজ উত্তরে ফতুয়াকান্দি নামকস্থানে ৩০এর অধিক জেলে নৌকা নদীর পাড়ে ভিরানো, যার প্রতিটিতে ভিজাজাল আছে, কেউ কেউ আবার রাতে মাছধরার পর জালের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে ব্যস্ত আছে।
এ খলাছপুর লঞ্চঘাট থেকো ৩শ গজ দক্ষিতে জাটকা মাছের পাইকারী হাট লক্ষ্য করাগেছে। পাইকারী ও খুচরা ক্রেতাদের ভির, অটোগাড়িতে ঝুড়িঝুড়ি জাটকা মাছ। অস্থায়ী এই হাট নিয়ন্ত্রনে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী উপস্থিতিও লক্ষ্য করাগেছে।
সরেজমিনে উপজেলার সর্ববৃহৎ মাছের আড়ৎ ষাটনলের বাবুবাজার মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আড়তে অসংখ্য পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহল। মাছ বেচা-কেনার দাম-দরের কাজে ব্যস্ত সবাই। খানিকটা দূূরে অপেক্ষমাণ কয়েকটি পিকআপ ভ্যান এবং নদীরপাড়ে ট্রলার। মাছ নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাবার অপেক্ষায়। একটি ঘরে বরফের স্তুপ। মাছগুলো বরফজাত করার জন্য যা প্রতিদিন সকালে মওজুদ করা হয়।
সরকার মতলব উত্তর উপজেলার জেলেদেরকে মার্চ-এপ্রিল দু’মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষেধ ও নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি এবং মে-জুন পর্যন্ত নদীতে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ পোনা জাটকা ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যে কারণে সরকার এ উপজেলার ৮ হাজার ৮৮৪ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে চাল দিচ্ছেন। তবে ডিমওয়ালা ইলিশ মৌসুম, জাটকা ইলিশ মৌসুম ও অভয়াশ্রম মৌসুম সবমিলিয়ে আট মাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সরকার কেবলমাত্র মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসের জন্য জনপ্রতি ৪০কেজি হারে জেলে পরিবারকে চাল দিয়ে থাকেন। আর মৎস্য শিকার থেকে বিরত রাখতে ৮ হাজার ৮৮৪ জেলের মধ্যে কিছু জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ হিসাবে সেলাই মেশিন, ছাগল, সুতার জাল দেবার কথা রয়েছে।
মেঘনাপাড়ের কয়েকজন জেলের সাথে কথাহলে তারা ভীতুভীতুস্বরে জানায়, আমরা নিজেরা চান্দা উডাইয়া স্যারেগো দেই, তয় স্যারেরা দিনে গাঙ্গো (নদীতে) মাছ ধরতে না করছে। উপজেলার ষাটনল এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা ভুদাই মাজির সাথে কথা হলে তিনি জানান, জাটকা অঞ্চলের জেলেদের পর্যাপ্ত সুবিধা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ সময় মতো জেলেদেরকে দিতে পারলে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহজতর হতো।
রাতে মেঘনা নদী জেলেদের দখলে আপনারা কি রাতে নদীতে অভিযান করেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ হোসেন সরকার জানান, আমার ফোর্স কম তাই রাতে অভিযানে যাইনা।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মালিক তানভীর হোসেন বলেন, আমাদের অভিযান চলছে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল হায়াত বলেন, প্রশাসনের পক্ষথেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে তবে মৎস্য বিভাগকে আরো আন্তরিক হতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status