বাংলারজমিন

অসহায় জনগণের পাশে নেই বরিশালের জনপ্রতিনিধিরা

জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে

২৯ মার্চ ২০২০, রবিবার, ৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

জনগণের সেবা করার শপথ নিয়ে যে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতায় আছেন, এই মহাদুর্যোগে তাদের টিকিটিও দেখা পাচ্ছে না জনগণ। কাজ নেই, ঘরে বন্দি, খাবার নেই, ঔষধ নেই, চিকিৎসা সরাঞ্জম নেই, হাসপাতালে ডাক্তার নেই। এতসব নেই এর সুরাহা চাইতে জনপ্রতিনিধিদের দরজায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে বড়সড় তালা। চরম বিপাকে পড়া মানুষগুলো এখন জনপ্রতিনিধিদের দেখা না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ছে। এভাবে জনগনকে বিপদে রেখে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই। স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইনে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াবার জন্য আকুতি জানালেও তাতে সাড়া দেননি কেউ।
সরকার করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হবার পরপরই অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধ করে দেয়া হয় দরিদ্র মানুষের একমাত্র জীবিকা আহরণের পথটুকুও। তবে জনগনের স্বাস্থ্য বিবেচনায় এ দুর্ভোগ সবাই মেনে নিয়েছে। আর সরকারও দরিদ্র মানুশের পাশে দাড়াবার অঙ্গিকার করেছে। কিন্তু এই ছিন্নমুল মানুষের পাশে সরকারের পক্ষ হয়ে যাদের দাড়াবার কথা সেই জনপ্রতিনিধরাই উধাও হয়ে গেছে। তাদের পক্ষে প্রথম ২/১দিন কিছু নেতাকর্মী সচেতনতার নাম দিয়ে লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করলেও এখন তারাও ঘরে উঠে গেছেন।
প্রায় দু সপ্তাহ হতে চলল, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কোন দেখা নেই। নগরপিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনেও নেই কোন ভিড়। গেট বন্ধ। জানা গেছে, তিনি এখন এই বাসায় থাকছেন না। তিনি যে কোথায় আছেন তা কেউ বলতে পারছেন না। তার দিক নির্দেশনা না পেয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩ ও ৭নং, ১৮, ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নামমাত্র মাস্ক আর সাবান বিলিয়েছেন। বাকি ২৭টি ওয়ার্ডের কোন সংবাদ নেই। এরা চেয়ে আছেন রেশন বা খাদ্য সামগ্রির দিকে। মেয়রের এই অর্ন্তধান নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। স্থানীয় পত্রিকা , অনলাইনেও মেয়রকে জনগনের পাশে দাড়াবার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও সাড়া মিলছে না। শুধু মেয়র নয়, বরিশালের ৬টি সংসদীয় আসনে নির্বাচিত এমপিদেরও একই অবস্থা। যদিও এর মাঝে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কয়েকবার এসে জনগনের মাঝে কিছু মাস্ক ও হ্যান্ডরাইজার বিলি করেছেন। মেহেন্দিগঞ্জের এমপি (বরিশাল-০৪) পঙ্কজ নাথ ১০/১২দিন আগে একবার এলাকায় এসেছিলেন। তারপর থেকে তিনি এলাকায় নেই। বরিশাল-৩ আসনের এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু এখন পর্যন্ত এলাকায়ই আসেননি। একই অবস্থা বরিশাল ১. ২.৬ আসনের এমপিদের। তারা কোথায় আছেন সাধারণ মানুষ তা জানে না।
শুধু বরিশাল নয়, পটুয়াখালীর সব কটি আসনের এমপি এখন এলাকায় নেই বললেই চলে। করোনা আতঙ্ক শুরু হবার পর গলাচিপা আসনের এমপি এস এম শাহজাদার চেহারা কেউ দেখেননি। শুধু শাহজাদা কেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে এলাকায় কেউ খুজে পাচ্ছেন না সদর এলাকার এমপি এ্যাড.শাহজাহান মিয়াকে। কলাপাড়ার এমপি মহিবুল আলমের চেহারা দেখা যায়নি তিন সপ্তাহের উপরে। এরা সবাই ঢাকায় তাদের সুরক্ষিত বাড়িতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভোলার ক্ষমতাধর এমপিরাও এলাকায় নেই। নুরন্নবী চৌধুরী শাওন, আলী আজম মুকুল এমনকি দানবীর খ্যাত আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবও এখন এলাকায় নেই। সাধারণ মানুষের পাশে যাদের দাড়াবার কথা তারা সবাই অঘোষিত কোয়ারেন্টিনে আছেন। তবে কে কোথায় আছেন সেটাই রহস্যজনক।
বরিশালে এই মুহুর্তে বিপদকে অগ্রাহ্য করে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন বাসদ নেত্রী ডা: মনিষা চক্রবর্তী। তিনি গরীদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন সামান্য যা পাচ্ছেন তা নিয়ে। তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে মানব জমিনকে জানান, বরিশালে এই মুহুর্তে সাধারণ মানুষের পাশে যাদের দাড়ানোর কথা সেই জনপ্রতিনিধরাই এখন অন্তরালে । বরিশাল বিভাগে করোনা পরীক্ষাগার নেই, নেই কোন কিট, সে ব্যাপারে একজন এমপিও কথা বলছেন না দাবি করে তিনি ক্ষ্ভো প্রকাশ করেন। কয়েকদিন জেলা বিএনপির নেতাদের দেখা গেছে মাস্ক বিলি করতে। তবে বিএনপির দখিনের ক্ষমতাধর নেতা মজিবর রহমার সরোয়ারও দু সপ্তাহর বেশি ঢাকায় অবস্থান করছেন। এলাকায় আসেননি। জেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কর্মীও স্ব উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ করেছেন। কিন্তু ত্রান, ঔষধ নিয়ে মানুষের পাশে যাদের দাড়াবার কথা তারই লাপাত্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status