ষোলো আনা

বাবার জন্য মেয়ের জীবনবাজি

জয়নাল আবেদিন

৮ মার্চ ২০২০, রবিবার, ৮:২৫ পূর্বাহ্ন

ঊর্মি আচার্য্য। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বাবাকে বাঁচাতে তিনি লিভারের ৬৭ শতাংশ দান করেন। ২৭শে ফেব্রুয়ারি সুষ্ঠুভাবে লিভার সিরোসিস অপারেশন করে বাবাকে নিয়ে দেশে ফেরেন ঊর্মি। একদিকে পরিবারের উপার্জনকারী ছিলেন অন্যদিকে বাবার চিকিৎসার জন্য ২৫ লাখ টাকার পাহাড়সম বোঝা নিয়ে সংগ্রাম করেন।

ঊর্মি বলেন, বাবাকে সুস্থ করাটা আমার কর্তব্য ছিল। আমি বাবাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছিলাম। সবাই যেভাবে সহযোগিতা করেছে, সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরতে পেরে আমার অঙ্গীকার ও সবার প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন হয়েছে। বাবাকে সুস্থ করার একমাত্র পথ ছিল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। এক্ষেত্রে একজন ডোনারের দরকার হয়। ডোনার হওয়ার জন্য কী কী করতে হয় তা প্রথমে নিজেই গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করি এবং বিভিন্ন টেস্ট করি।

তারপর বাবাকে জানাই পুরো প্রসেসিং এবং রাজি করাই। ঊর্মি আচার্য আরো বলেন, দিল্লিতে চিকিৎসা আরো কিছুদিন চালিয়ে যেতে বলেছিল ডাক্তাররা। কিন্তু টাকা শেষ হওয়ায় আমাদের দেশে চলে আসতে হয়েছে। ডা. সুভাষ গুপ্তাকে ব্যাপারটা বলাতে আমাদেরকে বাংলাদেশে আসতে দিয়েছেন। তবে দেশে প্রতি এক সপ্তাহ পর পর টেস্ট করিয়ে ই-মেইলে পাঠানোর জন্য বলেন। টেস্টগুলো অনেক ব্যয়বহুল ও মেডিসিনের দামও অনেক। আমি সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলাম। তবে এখন বাবাকে লিভার দেয়ার কারণে আমিও কোনো উপার্জন করতে পারবো না।

ঊর্মি বলেন, আমি সমাবর্তনে অংশ নিতে পারিনি। আমার সহপাঠীরা যখন সমাবর্তনের গাউন ট্রায়াল দিচ্ছিল, ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিল তখন বাবা-মেয়ে দু’জনই নিজেদের জীবন নিয়ে যুদ্ধ করছিলাম। বাবার শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে আমার কষ্ট সুখে পরিণত হয়েছে এবং এই উন্নতিই সমাবর্তনের সম্মাননা আমার পাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী, বড় ও ছোট ভাইবোন সহ সকলেই এগিয়ে এসেছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে ঊর্মি বলেন, প্রতিবন্ধকতা বলতে প্রথমদিকে ভলান্টিয়ার ছিল না। তাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য জায়গা থেকে কোনো ফান্ডিং করা সম্ভব হয়নি। তাই নিজেই ভার্সিটির বড় ও ছোট ভাইদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছি। আবার অনেকেই আমাদেরকে প্রতারক ভেবেছিল, এক শ্রেণির লোক আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা হ্যাক করার চেষ্টাও করেছে বহুবার। বাবার চিকিৎসার জন্য আরো চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দরকার।

প্রতিমাসে টেস্ট ও মেডিসিনের জন্য ২০-২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। এক সপ্তাহ পর পর টেস্টগুলো করে দিল্লিতে ডাক্তারের কাছে মেইল করতে হয়। যেহেতু আমার ব্লাড গ্রুপ এবং বাবার ব্লাড গ্রুপ একই, তাই নিজেই ডিসিশন নিয়ে টেস্ট করিয়েছি, আমি ফিট কিনা। যখন, আমি জানতে পারলাম আমি ফিট তখন নিজেই নিজের কাছে সংকল্প করেছি, আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত লড়াই করবো বাবাকে বাঁচাতে। ঊর্মি আচার্য বলেন, উদ্দেশ্য সৎ ও চেষ্টা থাকলে সবই সম্ভব। আর ভালো কাজে বাধা বেশি থাকে, কিন্তু ধৈর্যসহ সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রেখে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status