বিশ্বজমিন

রক্তাক্ত দিল্লির মুসলিম শহরতলীতে এক হিন্দুকন্যার বিয়ে

মানবজমিন ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

একদিকে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছিল দাঙ্গা। হিন্দু ও মুসলিম দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে কেঁপে উঠেছিল দিল্লির আকাশ-বাতাস। এর মধ্যে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এক শহরতলীতে কনে সেজে বসেছিল এক হিন্দু নারী। মঙ্গলবার তার বিয়ে ছিল। বিয়ের সাজে সেজে, হাতে মেহেদি রাঙিয়ে, শরীরে হলুদ মেখে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল ২৩ বছর বয়সী সাবিত্রি প্রসাদ। কিন্তু আচমকাই একদল দাঙ্গাকারী দরজা ভেঙে তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তার বিয়ে ভেঙে যায়। সাবিত্রি জানান, তিনি একাধারে কেঁদে চলেছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

বিয়ে ভেঙে গেলেও ভেঙে পড়েনি সাবিত্রির পরিবার। সেদিনই ফের বিয়ের আয়োজন করলেন তারা। তার বাবা জানান, আমার মুসলিম প্রতিবেশীরা তার পরিবারের মতো। তাদের উপস্থিতিতে তিনি স্বস্তি পেয়েছিলেন। বিয়ের দিন তাদের বাড়িতে গিয়েছিল রয়টার্সের একটি টিম। সাবিত্রি তাদের সেদিন বলেন, আমার মুসলিম ভাইরা আমায় রক্ষা করছে।

পুরো অনুষ্ঠান হয় সাবিত্রির বাড়িতেই। চান্দবাগ জেলায় ইটের তৈরি ছোটাখাটো এক বাড়ি। এর থেকে কয়েক কদম দূরে অবস্থিত মূল সড়ক যেন যুদ্ধের ময়দান। সেখানে পড়ে ছিল পোড়া গাড়ি, পাশেই ভাঙা দোকান, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল নিকটস্থ এক মসজিদ। পুরো এলাকাজুড়ে সংঘর্ষের চিহ্নস্বরুপ পড়ে ছিল অসংখ্য পাথর। সেদিন চান্দবাগ ও দিল্লির অন্যান্য এলাকাগুলোয় সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ৩২ জন। পরবর্তীতে সে সংখ্যা বেড়ে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হন কয়েকশ’ হিন্দু-মুসলিম।

হামলাকারীরা আমাদের এলাকার নয়
সোম ও মঙ্গলবারের দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে সাবিত্রির বাবা ভোদয় প্রসাদ বলেন, আমরা ছাদে গিয়ে চারপাশে কেবল ধোঁয়া আর ধোঁয়া দেখতে পাই। এটা লোমহর্ষক। আমরা কেবল শান্তি চাই। তিনি জানান, বহুবছর ধরে মুসলিমদের সঙ্গে ওই এলাকায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাস করছেন তারা। হামলাকারীরা তার এলাকার ছিলেন না। বলেন, যারা এই সহিংসতায় যুক্ত ছিল তাদের আমরা চিনি না। তারা আমাদের প্রতিবেশী না। এখানে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কোন শত্রুতা নেই।

সোমবার সহিংসতা ভয়াল আকার ধারণের আগেই হাতে মেহেদি লাগিয়েছিলেন সাবিত্রি। তারা আশা করেছিলেন মঙ্গলবারের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে ওঠবে। কিন্তু তা হয়নি, বিয়ে ভেঙে যায়। সহিংসতা বুধবার কিছুটা কমলেও দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেশিরভাগ মানুষই নিজঘর থেকে বের হয়নি। এর মাঝেই বিয়ের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন ভোদয়। সাবিত্রিকে সাজতে সাহায্য করেছিল তার চাচাতো বোন পুজা। তিনি বলেন, হিন্দু বা মুসলিম, আমরা সবাই মানুষ। সবাই সহিংসতা ভয় পাই। এই লড়াই ধর্মের নয়। এটাকে এমন দেখানো হচ্ছে।

বিয়েতে সাবিত্রিকে আশির্বাদ জানাতে হাজির হন তাদের মুসলিম প্রতিবেশীরা। এমন একজন হচ্ছেন আমির মালিক। তিনি বিয়ের দিন আরো বেশ কয়েকজনকে নিয়ে সাবিত্রিদের বাড়ির সুরক্ষার দায়িত্ব নেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের হিন্দু ভাইদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করি। তাদের জন্য আমরাই সব। আগ থেকেই এমনটা চলে আসছে। আমরা তাদের পাশে আছি।
বিয়েতে সাবিত্রির দূরের কোনো আত্মীয় যোগ দিতে পারেনি। সে প্রসঙ্গে ভোদয় বলেন, আজ আমার মেয়ের বিয়েতে আমাদের কোন আত্মীয় যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু আমাদের মুসলিম প্রতিবেশীরা আমাদের সাথে আছে। তারা আমাদের পরিবার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status