বাংলারজমিন

খুলনায় আবারো বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

খুলনা মহানগরীতে ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ নিয়ে সংঘর্ষ, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ ও প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা-খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। বিভিন্ন এলাকায় গ্রুপ করে বখাটে কিশোররা এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কিশোর অপরাধীদের হাতে পরপর তিনটি হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশি অভিযানে কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তবে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের অপতৎপরতা।
এই গ্যাংগুলো নগরীর বয়রা, পালপাড়া, খুলনা পাবলিক কলেজ, মডেল স্কুল, শ্মশানঘাট, পিএমজি স্কুল, টুটপাড়া, শেখপাড়া, জিলা স্কুল সংলগ্ন এলাকা, খুলনা প্রেস ক্লাব এলাকা, রয়্যাল মোড়, সাত রাস্তার মোড়, চাঁনমারী বাজারসহ আশপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। প্রতিটি গ্যাংয়ের সদস্য ১৫-২০ জন করে। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। তারা সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তবে স্থানীয় কিছু বখাটে কিশোর যারা ছাত্র নয়, তারাও এসব গ্যাংয়ে রয়েছে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার জন্য কিছু বড় ভাইও আছে।
জানা যায়, সর্বশেষ গত সোমবার মহানগরীর চাঁনমারী বাজার এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় মো. আল ফায়েদ (১৭) নামের ৯ম শ্রেণির স্কুলছাত্র নিহত হলে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে। একই সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয় শুভ (১৮) নামের আরেক স্কুলছাত্র। এলাকায় সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে বিবাদে দফায় দফায় সংঘর্ষে হত্যার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, রোববার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্র মো. আল ফায়েদ চাঁনমারী বাজার এলাকায় সেলুনে চুল কাটাতে গেলে প্রতিপক্ষরা তার ওপর হামলা করে। এ সময় লাঠির আঘাতে আল-ফায়েদ মাথায় গুরুতর জখম ও তার সঙ্গে থাকা শুভ (১৮)’র দু’পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সকালে ঢাকায় নেয়ার পথে আল ফায়েদের মৃত্যু হয়। এদিকে এই হামলার প্রতিশোধ নিতে সকাল ১১টার দিকে শিপইয়ার্ড এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আল ফায়েদ চাঁনমারী এলাকার শওকত আলমের ছেলে। কিছুদিন পূর্বে শিপইয়ার্ড স্কুলের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় আগে থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে তুচ্ছ ঘটনায় ১৫-১৬ বছরের কিশোররা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ২০১৯ সালের ১লা অক্টোবর নগরীর সোনাডাঙ্গায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শহিদুল ইসলাম রাসেল (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়। এর আগে ২৬শে সেপ্টেম্বর রূপসা বাগমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে গুপ্তির আঘাতে (দুই দিকে ধারালো ছুরি) সারজিল ইসলাম সংগ্রাম (২৬) নিহত ও ২৩শে সেপ্টেম্বর নগরীর সোনাডাঙ্গা মজিদ সরণি এলাকায় সুজুকি মোটরসাইকেল শোরুমের সামনে মহিদুল ইসলাম নামে আরেক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে কিশোর অপরাধীরা।
জানা যায়, গত কয়েক মাসে ধর্ষণ, খুন, ব্ল্যাকমেইলিং ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের কয়েকটি ঘটনায় কিশোর অপরাধীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে। সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, কিশোররা এখন ছোট অপরাধ থেকে বড় ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের প্রতি অভিভাবকরা নজর রাখতে পারছেন না। এটি কিশোর অপরাধের একটি বড় কারণ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status