দেশ বিদেশ
মোবাইল টাওয়ারে ক্ষতিকর কিছু নেই: বিটিআরসি
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন
মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একইসঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে,সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের মাত্রা নিয়ে জরিপ করেও জানা গেছে,এতে মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি। টাওয়ারের রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও বিটিআরসির বেঁধে দেয়া মানদণ্ডের অনেক নিচে আছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। বিটিআরসি’র উদ্যোগে ও এমটবের (মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ) আয়োজনে এ আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শহিদুল আলম, বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের (বাংলাদেশ) মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক এস এম নাজমুল হাসান। এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদের সঞ্চালনায় এ আলোচনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মোবাইল শিল্প খাতের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিটিআরসির কমিশনার মো. আমিনুল হাসান বলেন,আমরা দেশের অনেক স্থানে মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন জরিপ করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফল অত্যন্ত সন্তোষজনক পাওয়া গেছে,যা আমরা নিয়মিতভাবে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। তিনি বলেন,টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে,এটা ভিত্তিহীন। আমরা সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা ভবন মালিকদের কাছে নিশ্চিত করছি যে আপনারা ভয় পাবেন না। বিটিআরসি কমিশনার বলেন,দেশের উচ্চ আদালত আমাদের কাছে এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলেছেন। আমরা শিগগিরই আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করবো। আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা বলেন,রেডিয়েশন দুই ধরনের আয়োনাইজিং এবং নন-আয়োনাইজিং। এর মধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যেমন পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এসব শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। অপরদিকে মোবাইল রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং। এর শক্তি খুব কম, ফলে এর কোনও স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। মোবাইল টাওয়ারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির এমএফ রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদন্ড আছে এবং আমরা জরিপে পেয়েছি যে দেশের মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে আছে। তিনি জানান,ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সুন্দরবন, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, জামালপুর ইত্যাদি অনেক এলাকায় জরিপ চালানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোথাও নির্ধারিত সীমার বেশি রেডিয়েশন পাওয়া যায়নি। ড. শামসুজ্জোহা আরও বলেন,সুপরিকল্পিত যথেষ্টসংখ্যক টাওয়ার থাকলে তা কম ক্ষমতার রেডিয়েশন ছড়াবে এবং তা তত বেশি নিরাপদ। আমরা আশা করি, এই টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে। জরিপ করতে গিয়ে কয়েকটি টাওয়ারে পাখির বাসা দেখেছি। অনেক ভবনের ছাদে বাগান করা হয়েছে এবং তাতে খুব ভালো সবজি ফলন হচ্ছে। অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন,টাওয়ার নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে, তা দূর হওয়া দরকার। কারণ, আমাদের প্রযুক্তি নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তিনি জরিপ অব্যাহত রাখাসহ জনমনের বিভ্রান্তি দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, সামনে যখন ফাইভ-জি আসবে তখন আমাদের অনেক বেশি সাইটের প্রয়োজন হবে। তাই শুধু শুধু আতঙ্কিত হয়ে প্রযুক্তিকে রুদ্ধ করার কোনও যুক্তি নেই। তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মার্কেটিং ডিরেক্টর নাজমুল হাসান বলেন,আমরা আমাদের যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করি। এছাড়াও বিশ্বের সেরা মান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পরিপূর্ণ যাচাই করে থাকি। সারাবিশ্বে আমরা যে কোন অপারটেরকে একই মানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করি। আর স্থানীয় নিয়মনীতি পালন করে অপারেটররা পরিকল্পনা করে এবং মাঠপর্যায়ে বিস্তৃত করে দেয়।