বাংলারজমিন

বিপাকে ইজারাদার

মহালের জমি নিয়ে প্রশাসন-বনবিভাগের রশি টানাটানি

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

 কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত হাড়ারগজ সংরক্ষিত বনের জমির বাঁশমহাল থেকে বাঁশ কাটা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া রেঞ্জের গাজীপুর বিটে পশ্চিম গোগালী বাঁশমহালটি বন বিভাগ ইজারা দিলে বাঁশ কাটা শুরু করেন ইজারাদার। কিন্তু লক্ষাধিক বাঁশ কাটার পর স্থানীয় প্রশাসন আপত্তি জানালে বাঁশ কাটা বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাঁশ মহালের কিছু অংশ তাদের জমি। আর বন বিভাগ বলছে, মহালটি তাদের জমিতে পড়ছে। বিধি ভেঙে এ জমি জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। এনিয়ে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলাও করা হয়েছে।
বনবিভাগ জানায়, কুলাউড়া রেঞ্জের গাজীপুর বিটে পশ্চিম গোগালী বাঁশমহাল পড়েছে। প্রাকৃতিক এই বাঁশমহালের আয়তন ৫৯৩ দশমিক ৫৫ একর। সেখানে মাকাল, মুলি টেংরা ও খাং প্রজাতির মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার ১৭৭টি বাঁশ রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক বছরের জন্য প্রায় ৬৭ লাখ টাকার মহালটি কুলাউড়ার ব্যবসায়ী আব্দুল কাদিরকে ইজারা দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পেয়ে ব্যবসায়ী বাঁশ কাটানো শুরু করেন। গত ২রা ফেব্রুয়ারি জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বনিক সরেজমিন যান। পরে তিনি বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বলেন, মহালের কিছু জমি তাদের আওতাধীন জমিতে  পড়েছে। এ অবস্থায় ওই স্থান থেকে বাঁশ কাটতে নিষেধ করেন তিনি। এরপর মহালের নিয়োজিত শ্রমিকরা বাঁশ কাটা বন্ধ করে দেন।
জানা যায়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান হাড়ারগজ বন পরিদর্শন করে ২০১৪ সালের ১৩ই জুলাই সিলেটের আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান। এতে বলা হয়, যে জমি ডিসির নামে রেকর্ড হয়েছে তা বনের মধ্যাংশ। সেখানে প্রাকৃতিক বন, বাঁশমহাল ও বিভিন্ন জাতের বন্য প্রাণীর আভাষ রয়েছে। জমিটি বন্দোবস্ত দিলে বনের পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। বন ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিষয়টি চূড়ান্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জমিটি কোন ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত না দিতে সংশ্লিষ্ট  জেলা প্রশাককে অনুরোধ করা হয় প্রতিবেদনে। পরে বন বিভাগ জমি ফিরে পেতে মৌলভীবাজার ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলা করে, যা এখনও চলমান। এদিকে বন বিভাগ ও জরিপ অধিদপ্তর জানায়, দীর্ঘদিন জরিপের বাইরে থাকা হাড়ারগজ সংরক্ষিত বনে ২০১০ সালে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ কাজ শুরু করে। জরিপ শেষে ২০১৩ সালের ৪ঠা আগস্ট হাড়ারগজ সংরক্ষিত বন মৌজার জেলা প্রশাসকের নামে ২ হাজার ১৭৪ দশমিক ৩৫ একর জমি রেকর্ড করা হয়। আর বন বিভাগের নামে রেকর্ড হয় ১১ হাজার ৬৮ দশমিক ৮৯ একর ভূমি।
বাঁশ মহাল ইজারাদারের অংশীদার কুলাউড়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শাহজাহান বলেন, বাঁশমহাল ইজারার কমিটিতে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। প্রশাসন আগেই বাধা দিতে পারত। এ পর্যন্ত পুরো মহালে ২ লাখ বাঁশ কাটা হয়েছে। তিনি আরো জানান, রিজার্ভ ফরেস্ট বন বিভাগ রক্ষণা-বেক্ষণের কারণে প্রতি বছর গাছ বাঁশ বিক্রি করে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করছে। তিনি জানান, ডিসি খতিয়ানের ভূমি সম্পূর্ণ বেদখলে রয়েছে। বড় কালাই গিরি, ছোট কালাই গিরি, নুনছড়া মৌজা ও বাঁশমহাল এবং নুনছড়া মৌজার বেগুনছড়া বাঁশ মহাল মিলে কমবেশি ৩৫০০ একর ভূমি একোয়ার্ড ফরেস্ট। এসব ভূমি পুরোপুরি বন বিভাগের না থাকায় খাসিয়ারা দখল করছে। জেলা প্রশাসক এসব ভূমি উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই ভূমি বন বিভাগের থাকলে বেদখল হতো না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বড় রিজার্ভ ফরেস্ট হাড়ারগজ কিভাবে জেলা প্রশাসনের নামে হবে? এই ফরেস্ট নষ্ট হলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে। জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। তাছাড়া বৃষ্টির সাথে বালু-মাটি নিচে নেমে একদিকে নদী ভরাট হচ্ছে। অন্যদিকে খালবিল হাওরের তলদেশ ভরে গিয়ে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার অসীম চন্দ্র বণিক জানান, তাদের জমি থেকে অবৈধভাবে বাঁশ কাটায় আপত্তি দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বনের জমি বিধি ভেঙে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়েছিল। এ ব্যাপারে মামলা চলছে। পশ্চিম গোগালী বাঁশমহাল বন বিভাগের আওতাধীন। তিন বছর পর পর প্রাকৃতিক বাঁশ মহাল ইজারা দিয়ে বাঁশ কাটা হয়। বহু আগে থেকেই মহাল ইজারা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁশ কর্তনে কেন বাধা দেওয়া হলো, সেটা বোধগম্য নয়।  মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশীদ বলেন, প্রশাসন আর বন বিভাগ দুটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান। ইউএনও’র প্রতিবেদনের আলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status