প্রথম পাতা

সমশের মুবিন সফিউল্লাহ’র দিকে বেল্ট ছুড়ে দিয়ে বললেন...

স্টাফ রিপোর্টার

২০২০-০২-০৮

ঘটনার সূত্রপাত একটি বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে মেজর ডালিমের খালাতো বোন তহমিনার সঙ্গে কর্নেল রেজার বিয়ের অনুষ্ঠানে ডালিমের শ্যালক বাপ্পির সঙ্গে আমন্ত্রিত কয়েকজন কিশোরের বচসা হয়। এরা ছিলেন বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির (বর্তমান নাম রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে। এক পর্যায়ে ডালিম তাদের অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেন। ডালিমের ভাষ্য অনুযায়ী, কিছুক্ষণ পর একটি গাড়িতে করে গাজী নিজেই উপস্থিত হন। দুটো মাইক্রোবাসে ১০-১২ জন অসামরিক সশস্ত্র লোক তার সঙ্গে এসেছিল। তারা ডালিম, তার স্ত্রী নিম্মি, তার শাশুড়ি এবং আলম ও চুল্লু নামের দুজন অতিথিকে গাড়িতে তুলে রওনা হয়।

লেখক, গবেষক, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত ‘বেলা-অবেলা: বাংলাদেশ ১৯৭২-১৯৭৫’ বইয়ে এই বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর। এতে লেখা হয়েছে, এরপর মাহবুব ও লিটু দ্রুত ৩২ নম্বর রোডে পৌঁছান। সব শুনে বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ হন এবং গাজীকে মাফ চাইতে বলেন। ডালিমরা এতে শান্ত হলেন না। এই ঘটনা জানতে পেরে ডালিমের সেনা বন্ধুরা আরেকটি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন। তারা দুই ট্রাক সেনাসহ গাজীর বাড়িতে হামলা করে ওই বাড়ির সবাইকে ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর্মি কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু সেনা প্রধান মে. জে. সফিউল্লাহকে ডেকে পাঠান এবং তাকে বলেন, ‘সৈন্যরা যেন গাজীর পরিবারের লোকদের ছেড়ে দেয়।  শফিউল্লাহ কন্ট্রোল রুমের মেজর মোমেনকে বলেন, সবাই বত্রিশ নম্বরে আছেন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তুমি গাজীর পরিবারকে ছেড়ে দাও।’ মেজর মোমেন এতেও শান্ত হলেন না। ডালিমের অনুরোধে তিনি ক্যাপ্টেন ফিরোজকে ৩২ নম্বরে পাঠালেন। ডালিম তাকে বললেন, প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। গাজীর পরিবারকে ছেড়ে দাও।
পরদিন সেনাসদরে এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন চলে। ডালিম এবং তার বন্ধুদের এক কথা-তাদের সম্মানে আঘাত করা হয়েছে। এর একটা বিহিত করতে হবে। মেজর নূর চৌধুরী সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর কাছে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন বলে বইতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, মেজর নূর চৌধুরী বলেন, ‘দাবীগুলো আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। যদি না পারেন, তাহলে আপনার এই চেয়ারে ফিরে আসার দরকার নেই। আপনি সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন না।’

সফিউল্লাহ অসহায়ের মতো বসে থাকলেন। তিনি কিছু বলতে চাইলে তার আগেই লে. সমশের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রম কোমর থেকে বেল্ট খুলে সেনাপ্রধানের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, ‘আমরা সম্মান আর মর্যাদার জন্য সেনাবাহিনীতে কাজ করি। ওটাই যদি না থাকে, তাহলে এই সেনাবাহিনীতে আর থাকতে চাই না।’
 এ সময় উপ সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এসে উপস্থিত। তিনি বললেন, চুপ করো এবং শোনো। সমস্যাটি আমি বুঝেছি এবং তোমাদের দাবী ন্যায্য। সফিউল্লাহ, তুমি নিশ্চয়ই দাবিগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে এবং তাকে সমস্যার গুরুত্বটি বোঝাবে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সফিইল্লাহ গণভবনের উদ্দেশে রওনা হলেন।
ওই সময়ে সেনাসদরে অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল ছিলেন কর্নেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (পরে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি)। পিএসওদের এক সভায় জেনারেল সফিউল্লাহ এ ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘স্যার আমার মনে হয় এই দাবিগুলো ন্যায্য। আপনার উচিত হবে প্রধানমন্ত্রীকে এটা বুঝিয়ে বলা এবং দাবি মেনে নিয়ে ওদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দেয়া।’ এরশাদের এই মন্তব্যে ডালিমরা অবাক হয়েছিলেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status