শেষের পাতা

দেশে কেউ বেকার থাকুক তা চাই না

সংসদ রিপোর্টার

৩০ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কেউ বেকার থাকুক আমরা তা চাই না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক থেকে যুব সমাজকে মুক্ত করে তাদের সুন্দর জীবন দিতে, বিপথে নয় সঠিক পথে যেন যুব সমাজ চলতে পারে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়- সেজন্য সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারণ যুবসমাজ শক্তি, উদ্যম, উদ্ভাবন আর কর্মপ্রেরণার প্রতীক। এখন যুবকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে নাকি নিজেরা কর্মসংস্থানের 
সৃষ্টি করে অন্যকেও চাকরি দেবে? ইচ্ছে করে কেউ বেকার থাকতে চাইলে সেখানে করার কিছু নেই। তবে আমরা এতো কর্মসূচি নিয়েছি- সেখানে কারও বেকার থাকার সুযোগ নেই। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিপুর সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, যুবক ভাই-বোনদের শুধু অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না, শুধু একটি চাকরির আশায় দ্বারে দ্বারে ধরনা দিলে চলবে না। আমাদের প্রতিটি কর্মপরিকল্পনাতেই যুব সমাজের ব্যাপক কর্মস্থানের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মই পারে একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে। যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তর করা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। আমরা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যুব সমাজকে শিক্ষিত, দক্ষ ও কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তুলছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যুব সমাজ বেকার থাকুক এটা আমর চাই না।

যুব সমাজকে শুধু চাকুরির আশায় ধরনা দিলে চলবে না, তারা কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করছি, সেখানেও বিপুল যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্কুল জীবন থেকে হাতে কলমে যেন ছাত্ররা কোন একটা বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে ইচ্ছে করে কেউ যদি বেকার থাকতে চায়, সেখানে করার কিছু নেই। কিন্তু আমরা যে ব্যবস্থা করে দিয়েছি, ইচ্ছা করলেই বেকার যুব সমাজ কিছু না কিছু নিজেরাই করতে পারবে, নিজেরা কাজ করে অন্যকে চাকরি দিতে পারবে। বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে প্রটোকল নিয়ে চলতে হয় এটা ঠিক, কিন্তু দেশের কোন কিছুর খবর রাখি না এটা ঠিক নয়। দেশের সবদিকেই নজর রেখেই কাজ করছি বলেই দেশের এতো উন্নয়ন হয়েছে। আর বেশি কাজ করলেই আবার সমালোচনা করা হয়, প্রধানমন্ত্রী একাই সব কাজ করবেন কেন?

কিন্তু দেশের জনগণ আমাকে সুযোগ দিয়েছে বলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কাজ করে যাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা যুব সমাজের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়ে বিপথে চালিত করেছিল। জিয়াউর রহমানও মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র-মাদক তুলে দিয়ে বিপথে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা চাই না যুব সমাজ বিপথে যাক। সন্ত্রাস-মাদক-জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত করে তাদের সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি। বিপথে নয়, যুব সমাজকে সঠিক পথে এনে মানুষের মতো মানুষ করতেই আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গার সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (রাঙ্গা) এখনও পেছনে পড়ে আছেন। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা অনেক আগে থেকেই অভিযান শুরু করেছি, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা গর্ব করে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই।

মুক্তিযোদ্ধারা গর্বভরে এখন বলতে পারে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের যে মর্যাদা দিয়েছি, সেখানে আর পদক দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মুজিববর্ষে আমার আহ্বান, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় নতুন প্রজন্ম ও যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান, যাতে তারা দৃঢ়চেতা নিয়ে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।
ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি: জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য মান সম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে গতিশীল ও স্থায়ী করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত, সুশিক্ষিত ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আমাদের সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীদেরকে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহন করেছি। পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা এবং সততার অনুশীলন করানো হচ্ছে। ঢাকাস্থ আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করে দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করানো হচ্ছে মর্মে সংসদ সদদ্যের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গবর্ণিং বডিও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করেনি।

উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি কম শর্ত আরোপের আহ্বান: এদিকে প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একে আরো টেকসই করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এই ব্যাপারে বেশি শর্তারোপ না করার আহবান জানান। তিনি বলেন, আমরা দেশের আরো উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা আশা করি, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও আমাদেরকে খুব বেশি শর্ত না দিয়ে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ)-২০২০’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status