শেষের পাতা

ঢাকা-সিলেট চার লেন ২০২৩ সালের মধ্যে, এলাকা নয় জনস্বার্থই মুখ্য: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার

৩০ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়কের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার টার্গেট নির্ধারিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মহাসড়কটি দু’চার বছর নয়, আগামী ৫০ বছরের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের পরিকল্পনায় বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট এবং এর সুবিধাভোগী এলাকাগুলোর জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছাড়াও সড়ক ও জনপথ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-সিলেট যোগাযোগে দুরত্ব করবে এবং সময়ও বাঁচবে।

তাদের ধারণা বিদ্যমান পরিকল্পনায় ৩ ঘন্টায় সিলেটে পৌছাবেন ঢাকা থেকে যাওয়া যাত্রীরা। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকার সংসদ সদস্য মাহবুব আলী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী সিলেট-৬ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক চিফ হুইপ মৌলভীবাজার-৪ আসনের এমপি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সিলেট-২ আসনের এমপি মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কয়েস, বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথের এমপি মোকাব্বির খান, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মো. মনসুর আহমদ, মৌলভীবাজার-৩ আসনের এমপি নেছার আহমদ, হবিগঞ্জ সদর-লাখাই আসনের এমপি এডভোকেট আবু জাহির, নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি দেওয়ান মিলাদ গাজী ও সুনামগঞ্জের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। উন্মুক্ত আলোচনায় জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ এলাকাকে কিভাবে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করে এর সুফল পেতে পারেন তা নিয়ে কথা বলেন। ওই মহাসড়ক যে এলাকা দিয়ে যাবে তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয় এমন এলাকার সংসদ সদস্যরা কিভাবে মহাসড়কটির সুবিধা পাওয়া যাবে তা নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। 


মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর আসনের এমপি নেছার আহমদ বলেন, মহাসড়কটি হবিগঞ্জ হয়ে সিলেটে যাবে।  এখানে মৌলভীবাজারবাসী সরাসরি এর সুবিধা পাবে না। জেলাবাসীর জন্য পরোক্ষ সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই মিরপুর টু মৌলভীবাজার এবং শেরপুর টু মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়কটি (যেটি ঢাকা সিলেট বাইপাস সড়ক প্রতিষ্ঠার আগে মূলক সড়ক ছিলো) প্রশস্তকরণ এবং এটিও যাতে চারলেনে উন্নীত করার পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয় তার অনুরোধ জানান। মতবিনিময় অনুষ্ঠানের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আয়োজক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সবাই সবার এলাকার সুবিধা দেখবেন এটাই স্বাভাবিক।

তবে কেউই বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়ে ভিন্নমত করেননি। এখানে যে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কম সময়ে নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছানো। সেই চিন্তা থেকেই মহাসড়ক নির্মাণ হয়। এখানেও তা-ই হবে। মান বজায় রেখে যতটা সম্ভব সমন্বয় করা যায় তাই করবে সরকার। ঢাকা সিলেট মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প ১৯৯২ সালেই হতো এমনটি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সমালোচনা করে বলেন, সেই সময়ে ফাণ্ডও পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু তিনি সক্রিয় না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।

আট লেনের সুবিধা রেখে মোট ৬ লেন হবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানান, চার লেন নয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার সঙ্গে রাজধানীর স্থল যোগাযোগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কটিতে ৮ লেনের সুবিধা থাকছে। শুরুতে ৪টি মেইন লেন এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ মোট ৬ লেন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত চাওয়া দেশের সব মহাসড়ককে ৮ লেনে উন্নীত বিষয়টিও সিলেট মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকছে। মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে এ কাজের টেন্ডার আহবান করা হবে। সড়কটি এখন কোন অবস্থায় আছে এবং নতুন নকশায় কোথায় কী পরিবর্তন আসছে তা সরজমিনে দেখতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এডিবির একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার সড়কটি পরিদর্শন করবে। সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হলে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা পুরো কাজে লাগবে, শিল্পায়নে ইতিবাচক প্রভাব তথা জাতীয় অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে আশা করে মন্ত্রী বলেন, সার্বিক বিবেচনায় চার লেনের বিদ্যমান নকশায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জানান, মহাসড়কের রূপসী, বড়পা, পাঁচদোনা, মাধবধিবাজার, ইটাখোলা, মাখন চত্বর, শায়েস্তাগঞ্জসহ ১০টি স্থানে নকশায় পরিবর্তন আসছে। আঁকাবাঁকা পথ এড়িয়ে সোজা পথে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে ঢাকা-সিলেট ২২৬ কিলোমিটারের দূরত্ব কমে ২১০ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। বিদ্যমান নকশায় সড়কে ৫টি ওভারপাস ও ৪টি রেল ওভারপাস ছিল। সংশোধনের জন্য প্রস্তাবিত নকশায় ১৫টি ওভারপাস ও ফ্লাইওভার এবং ৪টি রেল ওভারপাস থাকছে। আঁকাবাঁকা পথ এড়ানোর কারণে যানবাহনের গতি বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুন হবে (বর্তমানে ৪০-৬০ কিলোমিটার গতিতে যান চলে, এটি বেড়ে ৮০-১২০ কিলোমিটার হবে)। ফলে যাতায়াতে সময় প্রায় অর্ধেক বাঁচবে। অনুষ্ঠানে সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, মার্চের মধ্যে নকশা সংশোধন শেষে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি হবে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে টেন্ডার আহবান এবং ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্পটি শেষ করতে চান তারা। বৈঠকে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা দূরত্ব কমানোর দিকে গুরুত্ব দেন, যাতে যাতায়াতে সময় কম লাগে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সাংসদ বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম মহাসড়কটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল দিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন। এতে আরো ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে বলে জানান তিনি। তার এ প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলীরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার অভিজ্ঞতায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে নিরাপদ করতে যাত্রী ওঠা-নামায় বাস বেসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সড়কের পাশে লোকালয়, জেলা ও উপজেলা সদর থাকায় সার্ভিস লেন যুক্ত করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status