প্রথম পাতা

প্রস্তুতির তথ্য জানালো মন্ত্রণালয়

স্টাফ রিপোর্র্টার

২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

করোনা ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে এ নিয়ে সরকারের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন। বলেছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টির মতো দেশে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও বাংলাদেশে একটি মানুষও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। সীমান্ত এলাকার সবগুলি ইউনিটেই আমরা স্ক্যান মেশিন বসিয়েছি। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের জন্য আলাদা একটি আইসোলেটেড কেবিন খোলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী ও কীটস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে খোঁজ খবর রাখছেন। গতকাল  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘করোনা ভাইরাস, সচেতনতা ও করণীয়’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। এর আগে বেলা সাড়ে ১২ টায় করোনা ভাইরাস নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা আলাদা হটলাইন চালু করেছি এবং বিমান বন্দরে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের হাতে করোনা ভাইরাসের সতর্কতা, করণীয় ও যোগাযোগ নম্বর সংবলিত কার্ড দেয়া হচ্ছে। সুতরাং করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্যখাতসহ সকল ইউনিট একযোগে কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা সবাই একে মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছি। করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশবাসীকে আতংকিত না হতে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো জানান, আলোচিত করোনা ভাইরাস সার্স ভাইরাসের মতো ভয়াবহ নয়। এই ভাইরাস শীতকালে দেখা দিলেও গরমের সময় এটি টিকতে পারবে না। কাজেই এই ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতংকিত হওয়া যাবে না। চীনের উহান প্রদেশে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, উহানে ৩১৭ জনের মত শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগ নিলেও চীন সরকার ১৪ দিনের মধ্যে সেখান থেকে বের হবার নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আপাতত আনা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। ১৪ দিনের রেস্ট্রিকশন পিরিয়ড শেষ হলেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সকল ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুবিধ সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর অন্যকোন দেশই চীনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বন্ধ করেনি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এব্যাপারে আমাদেরকে কিছু বলেনি। কাজেই চীনের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ রাখার কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের আপাতত নেই।

বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনে বাংলাদেশ থেকে আপাতত কোনো বিশেষজ্ঞ দলকে চীনে পাঠানো হচ্ছে না। এসময় একজন সাংবাদিক বলেন, যখন কোনো সমস্যা হয় তখন বিশেষজ্ঞ দল সে দেশে পাঠানো হয়। করোনা ভাইরাস নতুন, চীন তাদের মত চিকিৎসা দিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কোনো টিমকে চীনে পাঠিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? এই প্রশ্ন শুনে হেসে ওঠেনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত বেশিরভাগ গণমাধ্যমকর্মী এবং সভার অংশ নেয়া অন্যরা। হাসি আর ফিসফাস থামলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই, প্রয়োজনীয়তা ফিলও করিনি। এই মুহূর্তে কোনো বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর প্ল্যান আমাদের নেই। প্রয়োজন হলে আমরা ভবিষ্যতে চিন্তা করব।

বৈঠকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের  সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন এর সভাপতি অধ্যাপক আহমেদুল কবীর, কিটস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রোবেন, বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি শিউ ওয়াং, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, শিল্প, বিমান ও পর্যটন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট শাখার ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা, কিটস বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন।  

করোনা ভাইরাস নিয়ে বিএসএমএমইউতে জরুরি বৈজ্ঞানিক সেমিনার: গতকাল শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ইমার্জেন্সি অব এ নিউ করোনা ভাইরাস’ শীর্ষক জরুরি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএসএমএমইউ’র বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকরা ভাইরাসটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তারা  বলেন, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে।  বলা হচ্ছে, সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চীনের মানুষের খাদ্যাভাস। এ খাদ্যাভাসের দিকে লক্ষ্য রেখে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতিরা যেহেতু সাপ খায়, তাই তাদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে বলেছেন। সেমিনারে বিএসএমএমইউয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন। ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের উহান শহরের সি-ফুড (সামুদ্রিক খাবার) মার্কেটে পশু-পাখি থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ যারা এ রোগে প্রথম দিকে আক্রান্ত হন তারা সবাই চাইনিজ নিউইয়ারের প্রস্তুতির জন্য কেনাকাটা করতে সি-ফুড মার্কেটে গিয়েছিলেন। এ ভাইরাসে নিহত প্রথম ব্যক্তি সেই সি-ফুড মার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি বলেন, কোবরা সাপ নাকি বাদুরের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে-এ নিয়ে এখনও দুই রকম মত রয়েছে। তবে পশু-পাখি বা স্তন্যপায়ী জন্তু থেকে ছড়িয়েছে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা ভাইরাসের লক্ষণ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউয়ের এই চিকিৎসক বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, শরীরে দুর্বলতা, ডায়ারিয়া। এ ভাইরাসে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়। পরে কিডনি লিভার অকেজো হয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন ডা. শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, আক্রান্তদের অবশ্যই আইসোলেটেড (আবদ্ধ ঘরে, আলাদা) থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সমপ্রতি চীন থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের কারও যদি এমন লক্ষণ থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। এ ভাইরাস প্রতিরোধে তিনি সবসময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা ও নাকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেন। সেমিনারে একজন প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতিরা সাপ খায়। তাদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। উত্তরে ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চীনের গবেষকরা বলছেন, একটি সাপের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। আবার অনেকে বলেন, যে সাপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেই সাপটি ভাইরাসে আক্রায় একটি বাদুর খেয়েছিল। যা-ই হোক, আমাদে দেশে এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেন বিএসএমএমইউয়ের  ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমরা যেগুলো শুনলাম সেগুলো মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর।

ঢাকা বিমানবন্দরে ৩,০১৪ জনের স্ক্রিনিং: চীন থেকে আসা ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং (রোগ শনাক্ত পরীক্ষা) অব্যাহত রয়েছে। গত আট দিনে ৩ হাজার ১৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এতে কেউ শনাক্ত হননি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত ফ্লাইটের যাত্রীদের তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের  মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।  এদিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি অভিজাত হাসপাতালে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া বিদেশী নাগরিক হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় যেতে চাচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। গত সোমবার ওই বিদেশি নাগরিক হাসপাতালটিতে ভর্তি হন বলে জানা যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status