শেষের পাতা

বিদায় সংবর্ধনায় যাওয়ার আগেই চির বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার

২৮ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

স্কুলের বিদায়ী অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলো আবীর হোসেন (১৬)। সকালে বাবা মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গেই
বাসা থেকে বের হয়েছিলো। কিন্তু স্কুলের বিদায়ী অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগেই পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। ওয়ারী 
এলাকায় ওয়াসার পানিবাহী ট্রাক মুহূর্তেই কেড়ে নিয়েছে আবীরের প্রাণ। গতকাল সকাল ১১টার দিকে ওয়ারী স্ট্রিট রোডে ওয়াসার পাম্পের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী হত্যার বিচার দাবিতে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। দীর্ঘ এক ঘণ্টা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাকসহ চালককে আটক করেছে পুলিশ।

পুত্রের লাশ বাবাকে দেখতে হচ্ছে, তাও লাশকাটা ঘরে। এর চেয়ে কষ্টের কী থাকতে পারে- কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন আবীরের বাবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। মোহাম্মদ হানিফ মানবজমিনকে বলেন, আবীরের মা নেই। বোনদের হাতে বানানো নাস্তা খেয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিলো। জুতায় লেগে থাকা ধুলা নিজেই পরিষ্কার করে, রেডি হয়। দোকানে তাড়া থাকায় আমি ওর সঙ্গে নাস্তা করিনি। রেডি হয়ে আমাকে বলে, আব্বু আমরা এক সঙ্গে যাব। জয়কালী মন্দিরের সামনে পৌঁছানোর পর আবীর বলেছিলো, আব্বু আমি বন্ধুদের সঙ্গে যাব। তুমি দোকানে চলে যাও। এটাই ছিল ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা। তারপর বাবা আমার চিরদিনের মতো চলে গেছে।

তিনি বলেন, ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর কিছুক্ষণ পরেই ফোন এলো ছেলে আমার গাড়ির নিচে পড়েছে। গলি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো সে। সেখানেও শেষ রক্ষা হল না। আবীরের বড় ভাই আট বছর আগে গুলিস্তান পার্কের ভেতরের পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মারা যায়। ১১ মাস আগে তার মা মিনু আক্তার মারা গেছেন। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। তিনি অবিলম্ভে ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।

আগামী সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আবীর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলো। সেই পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এবং বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই আবীর স্কুলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলো। স্কুলের পাশেই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আবীরের সহপাঠীরা জানান, আবীর জয়কালী মন্দিরের পেছনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। ওয়াসার গাড়িটি পাম্প থেকে পানি নিয়ে পেছন দিকে টার্ন করার সময় আবীর চাপা পড়ে। পেছনের চাকায় মাথা পিষ্ট হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
আবিরের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আবীর ছিল খুবই শান্ত প্রকৃতির। পড়ালেখায় ভালো ছিল। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো এই পরিবারের। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। ওর চলে যাওয়া আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। ওয়ারী থানার ডিউটি অফিসার এসআই তামান্না আক্তার জানান, ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবীরকে চাপা দেওয়ার পর গাড়ি নিয়ে চালক পালানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে গুলিস্তান এলাকা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। গাড়িটিও জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফের চার ছেলে মেয়ের মধ্যে আবীর ছিলো তৃতীয়। রাজধানীর কাপ্তান বাজার এলাকায় তাদের বাসা। তার বাবা নবাবপুরে মেশিনারি পার্টসের ব্যবসা করেন। পড়ালেখা শেষে বাবার ব্যবসার হাল ধরবেন এমনটিই স্বপ্ন দেখতেন আবীর। আবিরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বড়ুরা উপজেলার সোনাইমুরি গ্রামে। ওয়ারীর ৫৩/৪ জয়কালী মন্দির এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো আবীর। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status