বাংলারজমিন

ঘাটাইলে কৃষকের ও পাহাড়ি টিলার মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

এবিএম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে

২৭ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

 ঘাটাইলে শুরু হয়েছে ফসলি জমি ও পাহাড়ের টিলা কাটার হিড়িক। রাত-দিন সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে মাটি কাটা। ফসলি জমির টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগ ও পাহাড়ি টিলার মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটা, ডোবা, নালা ভরাট সহ ইট তৈরির কাজের জন্য। দরিদ্র কৃষকের অভাবের সুযোগে এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরির কাজে, ডোবা-নালা ভরাট করার কাজে লাগাচ্ছেন ভাটার মালিক ও বাসাবাড়ির মালিকরা। মূলত নগদ টাকার আশায় জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হচ্ছে কৃষিজমি। এতে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা। আইনের প্রয়োগ না থাকায় মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণির দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে জমির টপ সয়েল নির্বিঘ্নে কেটে নিচ্ছেন। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬৭টি। ভাটা মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫টি ইটভাটার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নবায়ন নেই। ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন না মেনে বনের ভেতর, আবাসিক এলাকা, তিন ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় এসব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে আবাদি জমির পরিমাণ ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে পাঁচ থেকে সাত একর জমির প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ৬৭টির মতো ইটভাটা স্থাপনেই চলে গেছে কমপক্ষে ৪৫০ একর আবাদি জমি। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রতিবছর শতাধিক একর ফসলি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
গারোবাজার এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, মনে ভীষণ কষ্ট লাগে যখন দেখি ফসলি জমিতে ভেকু বসিয়ে মাঠের পর মাঠ, গ্রামের পর গ্রামের মাটিগুলো হাই ট্রলিভরে দিন-রাত বিরামহীন ভাবে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কিছু বলার নেই, দেখার নেই। আগে মানুষ আমাদের পাহাড়ি লোক বলে তিরস্কার করতো, অবহেলা করতো। এখন বড় বড় পাহাড়ের টিলা কেটে পাহাড়খেঁকো ভূমি দস্যুরা নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে ২/৪টা করে হাইট্রলি কিনে, ভেকু কিনে সরকারি খাস জমি, রেকর্ডের জমি, দরিদ্র কৃষকের জমির মাটি কেটে ভাটা সহ বিভিন্ন ডোবা-নালা ও জলাশয় ভরাট করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পাহাড় সহ আবাদি জমি বিনিষ্ট করে স্বার্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। প্রভাবশালী মহল ও সরকারের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর ধরে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে তারা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. উম্মে হাবিবা মানবজমিন প্রতিনিধি এবিএম আতিকুর রহমানকে জানান, জমির টপ সয়েল বিক্রি করলে জমির উৎপাদনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। জমির টপ সয়েল বিক্রি না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর পাহাড়ের টিলা কাটার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট দেখাশুনা করে থাকে। এদিকে গত ২০শে জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সরকারি ভূমি ও খাস জমি না কাটার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status