শেষের পাতা

সুজনের সংবাদ সম্মেলনে তথ্য

সিটি নির্বাচনে ব্যবসায়ী বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যবসায়ী ও স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী হলফনামা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রার্থীদের পর্যালোচনা তুলে ধরে সুজন।

এতে বলা হয়, মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৪১ জন বা ৭২ দশমিক ৮১ শতাংশের পেশা ব্যবসা। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন ৬৭ দশমিক ২০ শতাংশ। ঢাকা দক্ষিণে ৪০৯ জন প্রার্থী পেশার উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ৩০১ জনের (৭৩.৫৯%) পেশা ব্যবসা। ২০১৫ সালে এখানে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন ৭১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরের ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন (৮৩.৩৩%) উচ্চশিক্ষিত। তাদের দুজনের (৩৩.৩৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও তিনজনের (৫০%) স্নাতক। তবে একজন (১৬.৬৭%) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

ঢাকা উত্তরের মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২০৩ জন বা ৬১.৩২%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর (১৫৬ জন বা ৬২.৯০%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। শুধু এসএসসির নিচেই রয়েছেন ১২৩ জন (৪৯.৫০%)। আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী ২২ জন। সুজনের দাবি, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতের হার বেশি হলেও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিতের হার বেশি। ২০১৫ সালের তুলনায় এবার ঢাকা উত্তরে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে। ২০১৫ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, এবার ৬১ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। ২০১৫ সালে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, এবার উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। ঢাকা দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২৬৬ জন বা ৬৫.০৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন ৭৯ জন বা ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ৭ জন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেননি। ২০১৫ সালের নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনায় এবার দক্ষিণে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার সমান রয়েছে।

তবে উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার কিছুটা কমেছে।
সুজন জানায়, ঢাকা উত্তরে ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৯১%) বিরুদ্ধে মামলা আছে। এর মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা (৩০২ ধারা)। ২০১৫ সালের তুলনায় মামলায় আসামি এমন প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৫ সালে মামলা নিয়ে লড়ছিলেন এমন প্রার্থী ছিলেন ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর ঢাকা উত্তরে ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জন বা ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। এর মধ্যে ৩০২ ধারায় মামলা আছে ১৭ জনের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রার্থীর নামে মামলা ছিল। ঢাকা উত্তরের ৩৩১ প্রার্থীর মধ্যে ১৮৬ জনের (৫৬.১৯%) বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকা বা তার কম। আয় উল্লেখ না করা ৩৪ জনকে হিসাবে ধরলে ৫ লাখের কম বা স্বল্প আয়ের প্রার্থী ৬৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত নির্বাচনে স্বল্প আয়ের প্রার্থী ছিলেন ৭০ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে, গত নির্বাচনে কোটি টাকার বেশি আয় ছিল ৩ জন বা শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ প্রার্থীর। এবার কোটিপতি প্রার্থী ৭ জন বা ২ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যদিকে, দক্ষিণে ৬৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রার্থীর আয় ৫ লাখ বা তার নিচে। গত নির্বাচনে এ রকম স্বল্প আয়ের প্রার্থী ছিলেন ৭৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। দক্ষিণে এবার কোটিপতি প্রার্থী আছেন তিনজন (০.৭৩%)। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এমন প্রার্থী ছিলেন ৭ জন (১.৪৪%)।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বহু লড়াই সংগ্রামের পর নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তথ্য পাওয়ার অধিকার এখন আইনের বিধি বিধানে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী ম্যানুয়ালে প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদান করা তথ্যগুলো প্রকাশের কথা সুপষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তা সত্ত্বেও এবার নির্বাচন কমিশন তথ্য নিয়ে একটা তুঘলকি কাণ্ড করেছে। অতীতে আমরা সবসময় এই তথ্যগুলি পেয়েছি। কিন্তু এবার আমরা তথ্য পাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত আমরা কমিশনকে উকিল নোটিশও দিয়েছি। নোটিশের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও কোনো জবাব আমরা এখনো পাইনি। মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে তথ্য পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রার্থীদের সমপর্কে যথাযথ তথ্য নাগরিকদের ক্ষমতায়িত করে ফলে ভোটাররা জেনে শুনে বুঝে ভোট দিতে পারে। তথ্য পাওয়া জনগণের নাগরিক অধিকার। কিন্তু আমাদের নির্বাচন কমিশন তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করছে না।

আমরা এর নিন্দা জানাই। একইসাথে আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি এই তথ্যগুলোর যাচাইবাচাই করা দরকার কারণ ভুল তথ্য নাগরিকদের বিভ্রান্ত করতে পারে তাদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, আজকে উপস্থাপিত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বেশি, তাঁর মানে আমাদের রাজনীতি ব্যবসায়ীদের করায়ত্ব হয়ে যাচ্ছে। আরেকটি জিনিস হল প্রার্থীদের মানের অবনতি ঘটছে, কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে স্বল্প আয়ের প্রার্থীর সংখ্যা কমছে; একইসাথে শিক্ষাগত যোগ্যতা কম এমন প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। আরেকটা বিষয় হল দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হলে প্রার্থীর সংখ্যাও কমে যায়। প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া নাগরিকদের জন্য ইতিবাচক নয় কারণ বেশি প্রার্থী থাকলে যোগ্য প্রার্থী বেশি থাকার সম্ভাবনা থাকে। যদিও এই নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে কিনা আমরা নিশ্চিত নই, কারণ মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে হওয়ার কথা থাকলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় ভিত্তিতে হওয়ার কথা নয়; কিন্তু দলীয় সমর্থন দেয়া হয়েছে আইন কানুন বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে। সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দীন খান বলেন, হলফনামার তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা না হলে এসব তথ্য নেয়ার কোনো অর্থ নেই। তিনি হলফনামার তথ্য যাচাই করার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status