বাংলারজমিন

সুন্দরবনে শুঁটকি আহরণে সুখবর নেই

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

২৩ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলা জেলে পল্লীসহ আশপাশের শুঁটকি পল্লীর চরে শুঁটকি মাছ আহরণ মৌসুমে জেলেদের মধ্যে নেই খুশির আমেজ। সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে বৃষ্টি যার কারণে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। ফলে এবার কাঙ্ক্ষিত শুঁটকি আহরণ না হওয়ায় জেলে, বহরদর ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মাঝে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। আর এতে করে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছে বন বিভাগ। তবে আগামী দুই মাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছে জেলেরা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকূল দুবলার চরে অক্টোবর থেকে মার্চ এই ৫ মাসব্যাপী চলে শুঁটকি আহরণ মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাস-পারমিট নিতে ডিপো মালিক, বহরদারসহ কয়েক হাজার জেলে শুঁটকির জন্য সাগরে মাছ আহরণ করেন। এ বছর সুন্দরবনের ৫টি চরে ৫৩টি ডিপো মালিক ১০৪০টি জেলে ঘরে প্রায় ২০ হাজার জেলে শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ করছে। কিন্তু এবার গত বছরের ১০ই অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শুঁটকি নষ্ট হওয়া এবং ডিসেম্বরের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘার মতো ঘটনা ঘটেছে শুঁটকি পল্লীতে। এ অবস্থায় জেলেদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

জেলেরা বলছেন, প্রতি বছরের মতো এবারো সমুদ্র থেকে লইট্যা, ছুড়ি, চ্যালা, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, রূপচাঁদা, কঙ্কন, মেদসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ সমুদ্র থেকে আহরণ করে মাচায় শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন। তবে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে জেলেরা যেমন লোকসানে পড়ছেন, অন্যদিকে সরকারও হারাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব। দুবলার চরের বহরদর ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে আছে বৃষ্টি। যার কারণে উৎপাদন এত কম যে আমাদের পুঁজিই টিকবে না। আর সম্প্রতি কুয়াশার কারণে আরেক সমস্যায় পড়েছে মাছ আহরণ করা জেলেরা। দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিষ কুমার রায় বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এ বছর জেলেরা একটু সমস্যায় রয়েছে। তবে তাদের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের জেলে এবাদুল হক বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। যে মাছ পাচ্ছি তার আকার-আকৃতিও ছোট। তাই জেলেদের মনে কোনো আনন্দ নেই। কারণ আপনজন ছেড়ে প্রায় ৬ মাসের জন্য সাগরে আসতে হয়। ৬ মাস কাজ করে যদি শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এর থেকে কষ্টের কিছু নেই।
দুবলার ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি বছর শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে। এ বছর জেলেদের লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই পূরণ হবে না। তবে মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায় তাহলে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বুলবুল ও শীতের কারণে জেলেরা গেল বছর থেকে মাছ কম পাচ্ছে। গেল বছর ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে রাজস্বের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪১ লাখ সেখানে এ বছর একই সময়ে সে রাজস্ব মাত্র ১ কোটি ৩ লাখ। গেল বছর পুরো মৌসুমে আমাদের রাজস্ব আদায় ছিল ২ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৯ টাকা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসে জেলেরা কিছু ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status