প্রথম পাতা

১৯০৪ বেড তারপরও সিট ক্রাইসিস

মরিয়ম চম্পা

২২ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

১৯০৪ সিটের হাসপাতাল। রয়েছে ৫৬টি বিভাগ। তারপরও হাসপাতালটি ভুগছে চরম সিট ক্রাইসিসে। এ মুহূর্তে সিট পেতে ১২০০ আবেদন জমা আছে হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরে। কিন্তু সিটের বাইরে রোগী ভর্তি করা হয় না বলে অপেক্ষায় হাজারো রোগী। তারপরও এখানে উল্টোপথে রোগী ভর্তি হচ্ছে। রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। যারা টাকার বিনিময়ে রোগী ভর্তি করছে হরদম। এ চিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির। হাসপাতালের পরিচালক ব্রি.জে. এ কে মাহবুবুল হকও বলেছেন, হাসপাতালের একটি ঘাটতি, তা হলো সিট ক্রাইসিস। চাহিদার তুলনায় সিট কম। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সিটের বাইরে আমরা একজন রোগীও ভর্তি করিনা। অথচ দেশের আধুনিক চিকিৎসার এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয়। এরকমই একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত কিরনের মা। রক্তে ইনফেকশন থেকে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। একাধিক প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু কোন উন্নতি নেই। পরে  চিকিৎসকরা তাকে যত দ্রুত সম্ভব বিএসএমএমইউ’তে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে ভর্তির জন্য শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। ওয়ার্ডের একটি বেড পেতে সিনিয়র সচিব থেকে শুরু করে উর্ধতন অনেককে দিয়ে ফোন করানো হয়। অবশেষে কোনো বিকল্প পথ না দেখে হাসপাতালের রোগী ভর্তির কাউন্টারের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমানে টাকার চুক্তিতে এক সপ্তাহ পর সিটের ব্যবস্থা হয়।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চুক্তিভিক্তিক কাজ করেন তিনি। চাকরির বয়স পাঁচ বছরের বেশি। সবার সঙ্গেই মোটামুটি পরিচয় আছে। এক বছর আগে তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেন। হাসপাতালে নিয়ে আসলে বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা জানান তাকে ভর্তি করতে হবে। এসময় বাবাকে ভর্তি করতে এই রুম থেকে ওই রুম। এই ডাক্তার থেকে সেই ডাক্তার। কিন্তু কোনো ভাবেই ভর্তি করাতে পারছিলেননা। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি সিটের ব্যবস্থা করেন। এই কর্মচারী বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক কর্মচারী আছেন যারা টাকার বিনিময়ে যে কোনো উপায়ে সিটের ব্যবস্থা করেন। তাদের কাছে জিম্মি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় রোগীরা।

ভুক্তভোগী আরেক রোগীর আত্মীয় এবং হাসপাতালের এক স্টাফ বলেন, আমার এক আত্মীয়কে নাক-কান ও গলার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে দেড় মাস ধরে ঘুরছি। অথচ হাসপাতালের ভর্তি সিন্ডিকেটের জন্য এটা সম্ভব হচ্ছে না। একজন ব্যক্তি তিন মাস ঘুরে যেখানে সিট পাচ্ছে না সেখানে অনেকেই আছে যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুই দিনের মধ্যেই সিট পেয়ে যাচ্ছে। এই সিণ্ডিকেটে কাজ করে কিছু পিয়ন ও ওয়ার্ড মাস্টার। যাদের দুর্নীতির বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক প্রশাসন বা চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছায় না। কতিপয় ওয়ার্ড মাস্টার বসে বসে এই টাকার অংশ পাচ্ছে। আর ভোগান্তি পোহাচ্ছে নিরুপায় রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন আউটডোরে ১০ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এই হাসপাতালে। হাসপাতালে ৫৬টি বিভাগ রয়েছে। সিটের সংখ্যা ১ হাজার ৯শ ৪টি। এর মধ্যে, অর্টিজম, ডে কেয়ার, ব্লাড ডোনারসহ ইত্যাদিতে নির্দিষ্ট পরিমানের কিছু সিট বাদ দিয়ে প্রায় ১৬ থেকে সাড়ে ১৬শ রোগী ভর্তি করার ক্যাপাসিটি আছে। এছাড়া হাসপাতালে কেবিনের সংখ্যা ১২০টি। আইসিইউ বেড রয়েছে ২০টি। সাধারণ মানুষের চাহিদার তুলনায় হাসপাতালের সিটের সংখ্যা খুবই কম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে প্রথম টার্গেট হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে আসে। এছাড়া এখানে অধিকাংশ রোগী আসে খুব বড় অসুখ নিয়ে। যাদের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ থাকে। যাদের অনেকেই ৮ থেকে ৯ মাস ধরে চিকিৎসা নেয়। এই ধরনের রোগীদের জন্য বেড রিপিড করাটা কঠিন হয়ে পরে। সিট থেকে রোগী না নামা পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তি করার কোনো উপায় নেই এখানে।

হাসপাতালটির রোগী ভর্তি কাউন্টার ও রেন্ট কালেক্টর বিভাগ সূত্র জানায়, সত্যি বলতে ইতোমধ্যে আমরা সিট বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থাও নিয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালের আউটডোরে কিছু এমএলএসএস আছে যারা সিটি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান প্রশাসন এই সিট বাণিজ্য বন্ধে খুব শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আগের তুলনায় এখন কিছুটা কমেছে। একেবারে যে হয় না, এমনটি নয়। কম বেশি হয়।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. এ কে মাহবুবুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমাদের চিকিৎসার সরঞ্জামাদি আন্তর্জাতিক মানের। মানুষের চাহিদার তুলনায় সিট কম। আমরা নির্দিষ্ট সিটের বাইরে একটি রোগীও ভর্তি করি না। এতে রোগীদের সিট পেতে ডিলে  হয়। সিট পায় না। এটা প্রকৃত সত্য । আমাদের বিকল্প কোনো পথ নেই। একজন প্রফেসরের অধিনে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী থাকে। সে অনুযায়ী ওয়ার্ডে বেড বরাদ্দ থাকে। এখন পর্যন্ত আমার কাছে সিট পেতে আবেদন আছে প্রায় ১২শ’র  বেশি। এদের মধ্যে কে বেঁচে আছেন আর কে মরে গেছেন সেটাও আমরা জানি না। সিট বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিট পেতে এখানে কোনো টাকা পয়সার লেনদেন করতে হয় না। এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমি এখনও পাইনি। তবে সিট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত কাউকে ধরিয়ে দিলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status