শেষের পাতা

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

সেই ১১ শিক্ষার্থী মামলার বেড়াজালে

মরিয়ম চম্পা

১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

ফাইল ছবি

প্রায় দেড় বছর। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তেজগাঁওয়ের তেজকুনী পাড়া থেকে গ্রেপ্তার হয় ১১ শিক্ষার্থী। অভিযোগ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা। সেই যে আদালত পাড়ায় যাওয়া শুরু এখনো অব্যাহত আছে তা। গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে এলেও মামলার হাজিরা দিতে হচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে অনেকের মামলা চালাতে গিয়ে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের পরিবারের দিন কাটছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায়। এদের একজন মো. মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল-এর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। মুজাহিদের বাবা মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলার কারণে মুজাহিদকে প্রায় ছয় মাসের মত পড়ালেখায় বিরতি দিতে হয়েছে। জেলখানা থেকে বেড়িয়ে নতুন করে পড়ালেখায় মন দিতে অনেক সময় লেগেছে। এখনো সে সারাক্ষণ এক ধরনের ভীতির মধ্যে থাকে। তার ওপর বাড়তি চিন্তা প্রতি মাসে কোর্টে মামলার হাজিরা দিতে হয়। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় তার নামে ১টি মামলা হয়েছে। যদিও আন্দোলনের সময় সে বাড়িতে ছিল। মহবুবুর রহমান সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, এর আগে কখনো আদালত প্রাঙ্গনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না তাদের।

অপর ছাত্র মেহেদী হাসান রাজিবের বড় ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, মেহেদী ঢাকা পলিটেকনিকে তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারে পড়াকালীন গ্রেপ্তার হয়। মামলার প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস পর জামিন পায়। বাবার ভ্যান চালানো টাকায় পড়ালেখা করে মেহেদী। তার নামে ১টি মামলা হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সে গাজীপুরে বাবা মায়ের সঙ্গে ছিল। তার পরও বিনা দোষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অসুস্থ মায়ের ওষুধের টাকা যোগাবে না কি ভাইয়ের মামলা চালাবে এ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, ভাইকে জেল থেকে বের করলেও বাড়তি মানসিক চাপে থাকতে হয় প্রতিমাসের হাজিরা নিয়ে। যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে মামলার পেছনে অনেক টাকা ব্যায় হচ্ছে। আমি একটি মুদি দোকানো কাজ করি।

শিক্ষার্থী রায়হানুল আবেদিনের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক বছর পর জামিন পেয়েছে রায়হানুল। বর্তমানে খুব অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাদের পরিবার। রায়হানুলের বাবা পেশায় একজন বাস চালক। তিনি বলেন, তেজগাঁও পলিটেকনিক কলেজের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলো সে। ছেলের মামলার খরচ চালাতে গিয়ে নিজের জমা যে টাকা ছিল তা শেষ। এখন মেয়ে জামাই এবং আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় চলে সংসার ও ছেলের মামলার খরচ। তার নামে একটি মামলা ছিল। মামলার কারনে রায়হানুল পড়ালেখায় প্রায় দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এখন তার পাশ করে বেড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল। জানি না শেষ পর্যন্ত তার পড়ালেখা সম্পন্ন করতে পারবে কি না।

জহিরুল ইসলামের বাবা এনামুল হক বলেন, জহিরুল এখন জামিনে থাকলেও নিয়মিত মামলার হাজিরা দিতে হয়। জহিরুল বর্তমানে তিতুমীর কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা-ভারসা এবং স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এই মামলার কারনে সব শেষ হয়ে গেছে। জামিনে বের হওয়ার পর সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। হতাশ হয়ে পড়েছিল। এখন কিছুটা হতাশা কাটিয়ে পড়ালেখায় মন দিয়েছে। জেলে থাকায় সে পড়া লেখায় প্রায় এক বছর পিছিয়ে পড়েছে।

শিক্ষার্থী মায়াজের বোন কামরুন্নাহার বলেন, মায়াজ এখন দশম শ্রেণিতে পড়ছে। মায়াজ প্রায় দুই মাস পর জেল থেকে জামিনে বের হয়। তার মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখন আর হাজিরা দিতে হয় না। সে মানসিক চাপ অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। এখন সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

ইফতেখার আলমের বড় ভাই রাশেদ আলম বলেন, ইফতেখার ঢাকা পলিটেকনিকে কেমিক্যাল বিভাগে ৮ম সেমিস্টারের ছাত্র। তাকে তেজকুনী পাড়ার একটি মেস থেকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। তার নামে দুটি মামলা হয়েছিল। প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস পরে জামিন পায় সে। এখন সে বিএসসিতে পড়ালেখা করছে। একদিকে পড়ালেখার চাপ অন্য দিকে প্রতি মাসে মামলার হাজিরা। এতে পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আইন তো সেটা শুনবে না। যে ক্ষতি হয়েছে তার সেটা তো পূরণ হওয়ার না।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন বলেন, মামলার চার্জশিট এখনো হয় নি। প্রতিমাসে নিয়মিত হাজিরা দিতে আসে তারা। চার্জশিটের পরে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর মামলা নির্দিষ্ট গ্রাউন্ডে অব্যাহতি পেতে পারে। যখন আমরা ট্রায়ালের মুখোমুখি হব তখন সবাই খালাশ পাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশের পরিবার খুবই হতদরিদ্র। মামলার খরচ চালানোর সামর্থ খুব কম সংখ্যকের আছে। শিক্ষার্থী দেখে আমরা খুব একটা মামলার খরচ নেই না। নামে মাত্র একটি খরচ নিয়ে থাকি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status