বাংলারজমিন

স্বাবলম্বী হওয়ার মৌসুম এখন

নাজমুল হক শামীম, ফেনী থেকে

১৭ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

কুয়াশার চাদরে ঢাকা সারা দেশ। তীব্র শীতে অন্য সব পিঠা-পুলির সঙ্গে খেজুরের রস একটি আকর্ষণীয় পানীয়। শহরে খেজুরের রস তেমন একটা চোখে না পড়লেও গ্রামবাংলায় এখনো ঐতিহ্য বহন করে খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস।

গ্রামের মেঠো পথে একসময় সারিসারি খেজুরের গাছ চোখে পড়লেও কালের বিবর্তনে কমছে খেজুর গাছ। সারা বছর অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতের মৌসুমে কদর বাড়ে খেজুর গাছের।

ফেনীর সোনাগাজীর উপকূলীয় চরাঞ্চলের যেসব খেজুর গাছ রয়েছে সেগুলো থেকে রস আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। জেলাজুড়ে খেজুর রসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা এসেছে মৌসুমী গাছিদের। তবে কারণে অকারণে দিন দিন গাছ কেটে ফেলায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাচ্ছেন না গাছিরা।

সরজমিন ঘুরে গাছিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শীত মৌসুমে খেজুরের রসের ব্যাপক চাহিদা থাকে। খেজুরের রস পান করার পাশাপাশি রসকে আগুনে শুকিয়ে গুড়, পাটালি গুড়, রাবসহ বিভিন্নভাবে বাজারজাত করা হয়। প্রতি শীতে খেজুর গাছ থেকে দৈনিক এক থেকে দেড় লিটার রস সংগ্রহ করা যায়।  

সোনাগাজীর দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া গ্রামের মো. রুহুল আমিনের ছেলে গাছি মো. একরামুল হক জানান, শীতের শুরুতে তিনি তার এলাকার ৩৮টি খেজুর গাছে রস সংগ্রহের জন্য তৈরি করেন। রস সংগ্রহের জন্য গাছগুলো তৈরির পর প্রতিটি গাছে একটি করে মাটির কলস ঝুলিয়ে দেন। প্রতিদিন ভোরে তিনি গাছগুলোতে বাঁধা হাঁড়ি থেকে রস সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের বোতলে রস সংগ্রহ করেন। পরে প্রতি লিটার রস ৫০ টাকা দরে বাজারের নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। প্রকার ভেদে প্রতিদিন রস বিক্রি করে তার আয় হয় প্রায় দুই হাজার টাকা।

দক্ষিণ চর চান্দিয়া গ্রামের আবুল বশরের ছেলে কৃষক (মৌসুমী গাছি) মো. রিপন মিয়া জানান, গ্রামে তার আওতায় রয়েছে ৬০টি খেজুর গাছ। দৈনিক এসব গাছ থেকে ৭০-৮০ লিটার রস সংগ্রহ হয়। স্বল্প গাছ ও অধিক ক্রেতা থাকায় তার থেকে রস ক্রয় করতে হলে ক্রেতাকে অন্তত এক সপ্তাহ আগে অর্ডার করতে হয়। তার সংগৃহীত রস সোনাগাজীর চাহিদা মিটিয়ে ফেনী শহরেও বিক্রি হয়। রস বিক্রি করে তিনি দৈনিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করেন। শীত শেষ হয়ে গেলে তিনি কৃষিকর্মে মনোনিবেশ করবেন।

এই দুই রস সংগ্রহকারী গাছিদের মতো সোনগাজী উপজেলায় কয়েক শতাধিক গাছি শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে দিন দিন গাছ কমে যাওয়ায় চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত রস সরবরাহ করতে পারছে না গাছিরা।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচেরও প্রয়োজন না হওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে চরাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খেজরের রসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় শীত মৌসুমে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা দেখা দিয়েছে গাছিদের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status