প্রথম পাতা

স্মার্টফোনের যুগে

ভোট কেবল মিডিয়াতে!

সাজেদুল হক

১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম-৮ আসনে ভোট হয়ে গেল। ইভিএমের খাতা বলছে, ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মনে রাখা ভালো, এটা অফিসিয়াল হিসাব! গত কয়েক বছরের প্রবণতা দেখলে ভোটের এ হারে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। এবং এতে আশ্চর্য হবেন না যে, এদেশে বহু আকবরি গবেষক আছেন তারা লম্বা যুক্তি তুলে দেখিয়ে দেবেন যে, এটাই ঠিক আছে। তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে আপনি যেকোনো উপাধি পেয়ে যেতে পারেন। সে যাকগে, গণতন্ত্র কি মারা যাচ্ছে- এ প্রশ্ন পশ্চিমেও উচ্চারিত হচ্ছে। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ছবিতে আমরা পেশিবহুল, বলশালী কৃষক দেখতে পাই। এসএম সুলতানের স্বপ্ন সফল হয়নি। এদেশের কৃষকদের সেদিন আর আসেনি। কিন্তু পশ্চিমের বিভিন্ন দেশেও বলশালী শাসকদের আবির্ভাব ঘটেছে। দেশে দেশে পপুলিজম শক্তিশালী হচ্ছে। কোনো কোনো পশ্চিমা পণ্ডিত বলছেন, গণতন্ত্র মারা যাচ্ছে না। তবে গণতন্ত্র মধ্যবয়সের সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন। একটা সময় ছিল এদেশের মানুষ দলবেঁধে ভোট দিতে যেতো। ভোট ছিল রীতিমতো উৎসব। সে উৎসবের ছবি ছাপা হতো পত্রিকায়। অন্যরকম কিছু যে হতো না, তা নয়। কিন্তু ভোটের প্রতি এত অনীহা বোধকরি আর কখনো ছিল না।

ভোট মানেই গণতন্ত্র নয়- এ নিয়ে এদেশে একসময় খুব কথা চালাচালি হতো। তর্ক-বাহাস। একদিনের গণতন্ত্র চাই না। সারা বছর গণতন্ত্র দরকার। পাঁচ বছরই গণতন্ত্র প্রয়োজন। সে কত কথা। ইদানীং অবশ্য সেসব আলোচনা আর শোনা যায় না। কী  জানি কেনো? ভোটাররা তো এখন আর একদিনের বাদশাহও নন। হয়তো এ কারণেই তারা এখন আর এসব নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। এ মাসেই ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। বাঘা বাঘা সব প্রার্থী মাঠে।

সরকারি দল, বিরোধী দল সবাই অংশ নিচ্ছে নির্বাচনে। দিনভর প্রচারণা। অনবরত বলে যাচ্ছেন সরকারি ও বিরোধী দলের নেতারা। আশ্বস্ত করছেন সরকারি দলের নেতারা। কাকে আশ্বস্ত করছেন বুঝা মুশকিল। বিএনপি নেতাদের মুখে পুরনো বুলি। নতুন কোনো কথা নেই। তারাও যেন জনগণের সঙ্গে মশকরা করছেন। ইতিহাসের পাতা খুলে দেখায় বড়ই অনীহা। শেরেবাংলা নগরের স্যারেরাও কম যাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত খবর তৈরি করছেন তারা। মিডিয়ার অবস্থা বড়ই নাজুক। কেউ কেউ বলে থাকেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এখন আইসিইউতে রয়েছে। অর্থনৈতিক এবং সংবাদ গুরুত্ব দুই বিবেচনাতেই। ভোটের খবর দিতে অবশ্য সে মিডিয়া পিছিয়ে নেই। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া দখল করে রেখেছে ভোটের নানা খবর। কিন্তু যে জনগণের জন্য এই ভোট সেই জনগণ এ নিয়ে কতটা আগ্রহী। কিছু নাটক দেখে তারা অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঠাট্টা মশকরা করেন। কিন্তু বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে- আদৌ তারা কি ভোট দিতে যাবেন, অথবা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। নাকি চট্টগ্রাম-৮ আসনের মতোই ভোট পড়বে ঢাকাতেও।

আলামত কিন্তু সুবিধার মনে হচ্ছে না। এই লেখক গতকাল দিনের প্রথমাংশে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন। এরমধ্যে আড়াই ঘণ্টা ছিলেন পাবলিক বাসে। এই সময়ে ভোট নিয়ে কাউকে একটি কথাও বলতে দেখা যায়নি। তিনজন তরুণ-তরুণীকে দেখা গেল পড়ালেখা শেষে তাদের কর্মসংস্থান কেমন হবে, কীভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে। এটাই মূলত প্রধান ইস্যু। প্রতি বছর শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। অর্থনীতির বড় বড় সংখ্যা তাদের জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। বেশির ভাগ মানুষ ব্যস্ত স্মার্টফোন নিয়ে। ধারণা করা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নজর তাদের। এদেশের পাবলিক বাসগুলোতে অতীতে রাজনীতি নিয়ে নানা আলোচনা হতো। তর্ক-বিতর্কও কম হতো না।  ইদানীং তা কমে গেছে।

তাই বলে এতটা! আর প্রচার-প্রচারণাই বা কেমন চলছে। হাঁটা বা মিছিলের প্রচারণায় হয়তো খুব বেশি পার্থক্য খেয়াল করা যাচ্ছে না। কিন্তু সাদা-কালো পোস্টারের দিকে তাকালেই বোধহয় পরিস্থিতি আঁচ করা যায়। ৯৯ ভাগ পোস্টারই সম্ভবত এক দলের প্রার্থীদের। মিরপুর-১০ থেকে শুরু করে কাওরান বাজারে এলেই কেবল তাবিথ আউয়ালের বেশ কিছু পোস্টার চোখে পড়ে। ওদিকে, বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শাহজাহানপুর প্রায় সব পোস্টারই এক দলের প্রার্থীদের। অন্যদলের প্রার্থীদের দুই/একটি পোস্টার দেখতে হলে ভালো করে চশমা পরতে হয়।
এদেশে শেয়ারবাজারের মতো ভোটের বাজারেও পতন হয়েছে। ভোট উৎসব সেটা আর কোনোদিন ফিরবে কি-না, কে জানে?
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status