অনলাইন
মণিরাপুরে আমন ধান সংগ্রহে তুঘলকি কারবার
নূর ইসলাম ও আবু বক্কার সিদ্দীক, মণিরামপুর (যশোর)
১৪ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ১:৪৮ পূর্বাহ্ন
যশোরের মণিরামপুরে সরকারিভাবে আমন ধান ক্রয়ে চলছে তুঘলকি কারবার। ধান ক্রয়ের জন্য এবার লটারির মাধ্যমে বাছাইকৃত কৃষকদের কৃষি কার্ড হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ও ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলার হিড়িক পড়েছে। গত ১০দিনে উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে প্রায় ৪০০ নতুন হিসাব খোলা হয়েছে। প্রায় সমহারে থানায় করা হয়েছে জিডি। এদের প্রায় সবারই কার্ড পথে আসতে গিয়ে হারিয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জমি নেই- এমনকি বর্গা নিয়েও ধান চাষ করেননি এমন অসংখ্য কৃষকের ভূয়া নাম লটারির তালিকায় স্থান পাওয়ায় বঞ্চিত প্রকৃত কৃষকসহ জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ধীরগতির অভিযোগ তো রয়েছেই।
চলতি আমন মৌসুমে যশোরের মণিরামপুরে ৩ মাসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৩৪৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান সংগ্রহ অভিযানের ১ মাস ২২ দিন পার হলেও ধান ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ১৮৫ মেট্রিক টন। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৩.৫৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চলবে আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাকি সময়ে ২৩৪৬ মেট্রিক টন ধান ক্রয় আদৌও সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে চাষীদের। এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন তো রয়েছে।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানা গেছে, গত বছরে ২০শে নভেম্বর থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে আমন ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১২ই ডিসেম্বর ধান ক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এর ১০দিন পর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু করে উপজেলা খাদ্য অফিস। ধান ক্রয়ের ধীরগতির মধ্যে অসাধু পরিকল্পনা রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ কৃষক দোকান থেকে বাকিতে সার-কীটনাশক কিনে ধানের আবাদ করেন। ধান কাটা শুরু হলেই দোকান মালিকদের তাগাদা বাড়তে থাকে। ধুম পড়ে হালখাতার। টাকা পরিশোধে বাধ্য হয়ে সস্তায় কৃষকদের ধান খোলা বাজারে বিক্রি করতে হয়। খোলা বাজারে ধান বিক্রি শেষ হলে কৃষকরা আর সরকারি গুদামে নায্যমূল্যে ধান দিতে না পারলে খাদ্য অফিসের যোগসাজসে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় শুরু হবে। একইসঙ্গে শুরু হবে চাল কেনা। তখন কাগজে-কলমে গুদামে ঢুকানো হবে ধান আর দেখানো হবে উপজেলার বাছাইকৃত মিলারদের কাছে ধান দিয়ে চাল নেয়া হয়েছে। এমন অসাধু কার্যক্রম চালাতেই ধান কেনায় ধীরগতি বলে অনেকে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন এবং আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় কিছুটা দেরিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বিধায় ধান ক্রয়ে ধীরগতি হয়েছে। কিন্তু বাকি সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে লটারির মাধ্যমে বাছাইকৃত কৃষকদের নতুন করে কার্ড করা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদের অনেকেরই আদৌও কৃষি কার্ড ছিলো না। শুধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নেয়ার জন্য এমন কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১লা জানুয়ারি থেকে ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক মণিরামপুর শাখায় ৩৩১ জন এবং কৃষি ব্যাংক মণিরামপুর শাখায় ২৯ জন কৃষক নতুন করে হিসাব খুলেছেন।
মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, শুধু একদিনেই কৃষি কার্ড হারিয়ে গেছে মর্মে ৩৫ জন কৃষক থানায় জিডি করেছেন। ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলাদের মধ্যে উপজেলার জলকর রহিতা গ্রামের মোমিন সিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত ৪-৫ বছর আগে তার কৃষিকার্ড হারিয়ে গেছে বিধায় তিনি নতুন করে কার্ড করতে জিডিসহ ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন।
অপরদিকে ধান সংগ্রহে লটারিতে বাছাইকৃত অসংখ্য ভূয়া নাম স্থান পাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। লটারিতে ধান দিতে পারবেন বলে মর্মে উপজেলার স্মরণপুর গ্রামের শাহাজানের স্ত্রী আছিয়া খাতুন তালিকায় ৬১ নম্বর স্থান পেলেও আদৌও তিনি ধান চাষ করেননি। তার প্রতিবেশি তালিকায় ১৩৮ নম্বরধারি মৃত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী জাহানারা বেগমও খাদ্য গুদামে ১ টন ধান দিতে পারবেন। অথচ ধান চাষ তো দূরের কথা মাঠে তার এক শতক জমিও নেই। একইভাবে দোদাড়িয়া গ্রামের ট্রলি চালক ফিরোজও ধানের আবাদ না করলেও তারও নাম তালিকার ১২৫ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছে। এভাবে অনেকই ধানের আবাদ না করেও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণেই এখন এদের অধিকাংশকে নতুন করে কৃষি কার্ড করে দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে আছেন বলে জানান। ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইল ফোনটির সংযোগ কেটে দেন। তবে কৃষি অফিসের সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ কৃষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্যারের নির্দেশে নতুন প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, মণিরমপুরের একটি রাজনৈতিক দুষ্টুচক্র সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের লক্ষ্যে এসব ভূয়া দরিদ্র দিন মজুরদের নামে কৃষি কার্ড করছে। পরে ওই সব নাম ও কার্ড ব্যবহার করে প্রভাবশালী ওই রাজনৈতিক চক্রটি ধান সরবরাহ করে বাড়তি মুনাফা অর্জন করবে। এর মাধ্যমে সরকারের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাহা চরমভাবে ব্যাহত হবে। প্রকৃত কৃষকরা সরকারি সহায়তা থেকে হবেন বঞ্চিত।
জমি নেই- এমনকি বর্গা নিয়েও ধান চাষ করেননি এমন অসংখ্য কৃষকের ভূয়া নাম লটারির তালিকায় স্থান পাওয়ায় বঞ্চিত প্রকৃত কৃষকসহ জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ধীরগতির অভিযোগ তো রয়েছেই।
চলতি আমন মৌসুমে যশোরের মণিরামপুরে ৩ মাসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৩৪৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান সংগ্রহ অভিযানের ১ মাস ২২ দিন পার হলেও ধান ক্রয় করা হয়েছে মাত্র ১৮৫ মেট্রিক টন। এ হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৩.৫৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চলবে আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাকি সময়ে ২৩৪৬ মেট্রিক টন ধান ক্রয় আদৌও সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে চাষীদের। এর মধ্যে শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন তো রয়েছে।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানা গেছে, গত বছরে ২০শে নভেম্বর থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে আমন ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১২ই ডিসেম্বর ধান ক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এর ১০দিন পর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু করে উপজেলা খাদ্য অফিস। ধান ক্রয়ের ধীরগতির মধ্যে অসাধু পরিকল্পনা রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ কৃষক দোকান থেকে বাকিতে সার-কীটনাশক কিনে ধানের আবাদ করেন। ধান কাটা শুরু হলেই দোকান মালিকদের তাগাদা বাড়তে থাকে। ধুম পড়ে হালখাতার। টাকা পরিশোধে বাধ্য হয়ে সস্তায় কৃষকদের ধান খোলা বাজারে বিক্রি করতে হয়। খোলা বাজারে ধান বিক্রি শেষ হলে কৃষকরা আর সরকারি গুদামে নায্যমূল্যে ধান দিতে না পারলে খাদ্য অফিসের যোগসাজসে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় শুরু হবে। একইসঙ্গে শুরু হবে চাল কেনা। তখন কাগজে-কলমে গুদামে ঢুকানো হবে ধান আর দেখানো হবে উপজেলার বাছাইকৃত মিলারদের কাছে ধান দিয়ে চাল নেয়া হয়েছে। এমন অসাধু কার্যক্রম চালাতেই ধান কেনায় ধীরগতি বলে অনেকে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন এবং আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় কিছুটা দেরিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বিধায় ধান ক্রয়ে ধীরগতি হয়েছে। কিন্তু বাকি সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে লটারির মাধ্যমে বাছাইকৃত কৃষকদের নতুন করে কার্ড করা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদের অনেকেরই আদৌও কৃষি কার্ড ছিলো না। শুধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নেয়ার জন্য এমন কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১লা জানুয়ারি থেকে ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক মণিরামপুর শাখায় ৩৩১ জন এবং কৃষি ব্যাংক মণিরামপুর শাখায় ২৯ জন কৃষক নতুন করে হিসাব খুলেছেন।
মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, শুধু একদিনেই কৃষি কার্ড হারিয়ে গেছে মর্মে ৩৫ জন কৃষক থানায় জিডি করেছেন। ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলাদের মধ্যে উপজেলার জলকর রহিতা গ্রামের মোমিন সিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত ৪-৫ বছর আগে তার কৃষিকার্ড হারিয়ে গেছে বিধায় তিনি নতুন করে কার্ড করতে জিডিসহ ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন।
অপরদিকে ধান সংগ্রহে লটারিতে বাছাইকৃত অসংখ্য ভূয়া নাম স্থান পাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। লটারিতে ধান দিতে পারবেন বলে মর্মে উপজেলার স্মরণপুর গ্রামের শাহাজানের স্ত্রী আছিয়া খাতুন তালিকায় ৬১ নম্বর স্থান পেলেও আদৌও তিনি ধান চাষ করেননি। তার প্রতিবেশি তালিকায় ১৩৮ নম্বরধারি মৃত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী জাহানারা বেগমও খাদ্য গুদামে ১ টন ধান দিতে পারবেন। অথচ ধান চাষ তো দূরের কথা মাঠে তার এক শতক জমিও নেই। একইভাবে দোদাড়িয়া গ্রামের ট্রলি চালক ফিরোজও ধানের আবাদ না করলেও তারও নাম তালিকার ১২৫ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছে। এভাবে অনেকই ধানের আবাদ না করেও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণেই এখন এদের অধিকাংশকে নতুন করে কৃষি কার্ড করে দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় প্রশিক্ষণে আছেন বলে জানান। ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইল ফোনটির সংযোগ কেটে দেন। তবে কৃষি অফিসের সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ কৃষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্যারের নির্দেশে নতুন প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, মণিরমপুরের একটি রাজনৈতিক দুষ্টুচক্র সরকারি গুদামে ধান সরবরাহের লক্ষ্যে এসব ভূয়া দরিদ্র দিন মজুরদের নামে কৃষি কার্ড করছে। পরে ওই সব নাম ও কার্ড ব্যবহার করে প্রভাবশালী ওই রাজনৈতিক চক্রটি ধান সরবরাহ করে বাড়তি মুনাফা অর্জন করবে। এর মাধ্যমে সরকারের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাহা চরমভাবে ব্যাহত হবে। প্রকৃত কৃষকরা সরকারি সহায়তা থেকে হবেন বঞ্চিত।