দেশ বিদেশ

যুবককে পেটানোর অভিযোগ এমপি রিমনের বিরুদ্ধে

বরগুনা প্রতিনিধি

১৪ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

বরগুনা-২ (বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী) আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের হাতে এক যুবক মারধরের শিকার হয়েছেন। এ সময় একজন নারী আইনজীবীও লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরে পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আইনজীবী প্রিয়াংকা মিত্র গতকাল সকাল ১১টায় বরগুনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। একইসঙ্গে তিনি এর যথার্থ বিচার দাবি করেন। প্রিয়াংকা মিত্র নামের ওই নারী আইনজীবীর অভিযোগ, তাদের জমিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট নির্মাণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমন এসব ঘটনার অবতারণা করেছেন। তিনি বলেন, তাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সিকো’ সমপ্রতি ওই জমিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। বিরোধের নিষ্পত্তি নিয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয় এবং বিরোধ নিষ্পত্তির পরই কাজ করার কথা হয়। গত শনিবার সকালেও পাউবো’র সাথে এ নিয়ে ওই এলাকায় বৈঠক হয় এবং জমি পরিমাপের কাজ শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই সেখানে সাংসদ রিমনের লোকজন এসে তাকে পাথরঘাটা এলাকায় ডেকে পাঠান। একপর্যায়ে সাংসদের নির্দেশে ওই লোকজন তাদের জোর করে পাথরঘাটা নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে থানায় আশ্রয় নেন প্রিয়াংকা ও তার নিয়োজিত প্রতিনিধি তাইমুর ইসলাম। এসময় সাংসদ রিমন থানায় প্রবেশ করে তাদের অকথ্য গালাগাল করে তাইমুরকে পাথরঘাটা ছেড়ে যায়ার নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পর বাড়িতে চলে আসেন প্রিয়াংকা। রাতে সাংসদের লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। রোববার থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ নেয়নি। এই নারী আইনজীবী আরও জানান, পরবর্তীতে রোববারও পাউবো কর্তৃপক্ষ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ভূমি অফিসের লোকজন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বসলে সেখানে এমপির লোকজন এসে তাকে ও তাইমুরকে গালাগালি করতে থাকে। এ সময় তারা জানায়, এমপি ডেকেছে, যেতে হবে। নয়তো টেনে নিয়ে যেতে বলেছে। এক পর্যায়ে সাংসদ রিমন সেখানে লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয়ে আমাকে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। এর প্রতিবাদ করলে আমার নিয়োজিত প্রতিনিধি তাইমুর ইসলামকে চুল ধরে টেনে চর থাপ্পড় ও লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন এমপি রিপন। এসময় তার সাথে থাকা লোকজন তাইমুরকে মারধর করে। পরে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন তাইমুরকে উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলযোগে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে সাংসদের নির্দেশে তার লোকজন আমার বাসা বাড়িতে হামলা চালিয়ে মন্দিরে ভাঙচুর করে মূর্তি খালে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, একজন সাংসদের এমন আচরণে আমি বিস্মিত ও হতবাক।
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাংসদ রিমন নিজেই তাইমুরকে মারধর করে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছেন। আমি ওই ছেলেটিকে সেভ করে সেখান থেকে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে মন্দির লেখা একটি ঘর দেখেছি, সেটিতেও তার ছেলেরা ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ব্যাপারে সাংসদ শওকত হাচানুর রহামান রিমন বলেন, প্রিয়াংকাদের ওখানে কোনো জমি নেই, জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা বারবারই এ নিয়ে অযথা ঝামেলা সৃষ্টি করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে আসছে। আমি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বললেও তারা কারো কোনো কথাই না শুনে এক তরফা ঝামেলা বাঁধিয়ে আসছে। সেখানে কোনো মন্দির ছিল কিনা বা ভাঙ্গচুরের মত ঘটনা ঘটেছে আপনারা খোঁজ নেন। অন্যদিকে, তাইমুর ইসলামকে মারধরের বিষয়টি এড়িয়ে তিনি বলেন, এই ছেলে কে? এর ওই জমিতে কাজে বাধা দেয়ার কোনো রাইটস আছে কিনা আপনারা সেটাও খোঁজ নেন। ওই ছেলে যেহেতু এই এলাকার না তাই তাকে পাথরঘাটা ছেড়ে চলে যেতে বলেছি। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, আমার বিষয়টি জেনেছি। আসলে কি ঘটেছে সেখানে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনা জেনে আমরা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। এর আগে সালিশ বৈঠকে এক নারীর মাথায় বিষ্ঠা ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রিমন ব্যাপক সমালোচিত হন। এরপর তিনি তাঁতী লীগের সভাপতি ইদ্রিসুর রহমান ও হাসাপাতালের এক কর্মচারীকেও মারধর করে আলোচনায় ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status