শেষের পাতা

কলকাতার ডায়েরি

আইএএস’র পদে আইপিএস নিয়োগে নয়া বিতর্ক

পরিতোষ পাল

২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

আইএএস এবং  আইপিএসদের পরীক্ষার পাঠ্যক্রম এবং প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ আলাদা। এদের কাজের দায়িত্বও আলাদাভাবে বর্ণনা করা রয়েছে।

 কিন্তু আইএএসদের পদে আইপিএস নিয়োগের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অবশ্য এবারই এই ঘটনা নতুন ঘটেছে তা নয়। এর আগে  জেল সচিবের পদেও পর পর দু’বার দু’জন আইপিএস অফিসারকে নিয়োগ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।  রাজ্যের সাবেক এক  মুখ্য সচিবের মতে, ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের ধাঁচে শিক্ষাগতযোগ্যতা নয়, প্রশিক্ষণ পর্বেই ক্যাডারভিত্তিক কৌশল রপ্ত করানো হয়। ফলে শিক্ষাগতযোগ্যতা যা-ই হোক না  কেন, আইএএসদের সাধারণ প্রশাসন ও আইপিএসদের পুলিশ বাহিনী পরিচালনার কাজেই দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

তাই একজন আইএএস’কে জেলা শাসক করা হয়, আর আইপিএস’কে পুলিশ সুপার। তবে এবার যাকে নিয়ে এই বিতর্ক নতুন ভাবে তৈরি হয়েছে তিনি বিতর্কিত পুলিশ কমিশনার বিবেক কুমার। সম্প্রতি বিতর্কিত এই আইপিএস অফিসারকে তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছে। বিবেককুমারের বিরুদ্ধে বেআইনি অর্থলগ্নী সংস্থার নথি গোপন করার মামলা রয়েছে সিবিআই আদালতে।  স্বাভাবিক কারণেই বিবেক কুমারের নতুন পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক মহল দ্বিধাবিভক্ত। আইপিএস মহলের মতে,  সর্বভারতীয় ক্যাডারের যেকোনো অফিসারের প্রধান সচিব হওয়ার  যোগ্যতা রয়েছে। তবে আমলাদের একাংশের মতে, আইএএস এবং আইপিএসদের প্রশিক্ষণের ধাঁচ সম্পূর্ণ আলাদা। তাই তাদের জন্য নির্দিষ্ট পদও আছে। রাজ্যের এক সাবেক মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিবের পদ আইএএস’দের জন্য নির্দিষ্ট। সেখানে আইপিএস’দের বসাতে হলে কেন্দ্রীয় পার্সোনেল মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হয়। তিন মাসের বেশি অনুমোদন দিতে পারে না মন্ত্রক। প্রয়োজন হলে তা আবার বাড়ানোর আবেদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যদি তা মানা না হয়ে থাকে, তা হলে সেটা  বেনিয়ম হয়েছে। তবে ক্যাডার পোস্টে অন্য অফিসারদের বসানোর রীতি অনেক দিন আগেই বদলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব পদটি আইএএসদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সেখানে এখন আইএএস নেই। এ ছাড়াও তেলেঙ্গানাতেও স্বরাষ্ট্র সচিব পদে আইপিএস অফিসার বসেছেন। হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের প্রধান কর্তাও আইপিএস।

জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রিট লাইব্রেরি
স্ট্রিট লাইব্রেরি বা পথ গ্রন্থাগারের ভাবনা কলকাতা শহরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে চলেছে। পথের ধারে বা পার্কে থাকছে র‌্যাকে সাজানো থরে থরে বই ও পত্রিকা। সময় ও সুযোগ মতো কেউ সেখান থেকে মনের মতো বই বেছে নিয়ে পড়েও ফেলছেন। আবার পড়া হয়ে গেলে তা যথাস্থানে রেখেও দিচ্ছেন। এমনই এক পাঠকের ভাষ্য, তিনি স্ট্রিট লাইব্রেরি থেকে নেয়া একটি গোটা উপন্যাসের বই পড়ে ফেলেছেন কয়েকদিনে। আর এই ধরনের লাইব্রেরির আসল পড়ুয়া অবসরে যাওয়া মানুষই। কলকাতা শহরের চেনা কয়েকটি পার্ক, যেমন দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক, পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্ক, ভবানীপুরের নর্দান পার্কে এই স্ট্রিট লাইব্রেরি চলছে। এই ভাবনাকে ছড়িয়ে দেয়ার আসল উদ্দেশ্যই হলো, নাগরিকদের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং তা পড়ার অভ্যাস ছড়িয়ে দেয়া। অবশ্য কলকাতাতে এই স্ট্রিট লাইব্রেরির সূচনা হয়েছিল এক নিরাপত্তাকর্মীর উদ্যোগে। কয়েক বছর ধরেই উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কে তার প্রচেষ্টায় চলছে এমন একটি স্ট্রিট লাইব্রেরি। স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের বই তুলে দিয়েছেন পার্কের ওই গ্রন্থাগারের জন্য। এবার স্ট্রিট লাইব্রেরি কলকাতার অন্যান্য পার্কেও তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা।

বছরখানেক আগেই অবশ্য কলকাতা পুরসভার অনুমোদন নিয়ে কাজ শুরু করে একটি বেসরকারি সংস্থা কয়েকটি এমন স্ট্রিট লাইব্রেরি চালু করেছে। এই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বইগুলো এমন ভাবে রাখা হয়েছে, যাতে বৃষ্টির ছাঁট বা রোদ সেসবের ক্ষতি করতে না পারে। এমনকি সেগুলো ধুলো থেকে বাঁচাতে পর্দা  দেয়া হয়েছে। খোলা জায়গায় বই রাখলে চুরির আশঙ্কা প্রসঙ্গে সংস্থার গ্রন্থাগারিক মনোজ সাঁই বলেছেন, সচরাচর বই চুরি হয় না। কেউ নিলে বুঝতে হবে সংস্থার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তার দাবি, এমন কিছু ঘটলে সংস্থা ওই লাইব্রেরিতে ফের বই দেবে। এদিকে কলকাতা পুরসভার  মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্কে এই ধরনের স্ট্রিট লাইব্রেরি বা পথ-গ্রন্থাগার করা হয়েছে। নর্দার্ন পার্কে রাস্তার উপরেই রয়েছে এমন ব্যবস্থা। পথচলতি মানুষ হাতে বই নিয়ে পড়েনও। তাদের উৎসাহ দেখে আরো অনেক পার্কে পুরসভা  বেসরকারি সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কথা ভাবছে।

কলকাতায় হৃদয়ে সিলেট
আমাদের আসল পরিচয় ‘আমরা সিলেটি’। সকল সিলেটির হৃদয়ে সিলেট। এটাই আমাদের একতা। আর তাই এই প্রতীকী বোঝাতে কৃত্রিম পৃথিবী ঘুরিয়ে শুক্রবার বিকালে কলকাতায় উদ্বোধন হয়েছে তিন দিনব্যাপী তৃতীয় বিশ্ব সিলেট উৎসবের। ছত্তিশগড় রাজ্যের সাবেক রাজ্যপাল শেখর দত্ত এই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন।  দক্ষিণ কলকাতা সিলেট এসোসিয়েশনের ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয়েছে এই উৎসব। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা সিলেটিরা যোগ দিয়েছেন। কয়েক হাজার সিলেটির পদচারণায় গোটা প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে মিনি সিলেট হিসেবে। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের যোগ দেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততার কারণে তারা কেউই আসতে পারেননি। তবে এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক, বাংলাদেশের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

তিনদিনের এই উৎসবে এদিন পণ্য প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করা হয়েছে। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে সিলেটি রান্নার নানা পদ। উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিনই সিলেটি রান্নার স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।  এ ছাড়াও উৎসবের বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে মণিপুরী তাঁতসহ নানা বস্ত্রসম্ভার। এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়েছে সিলেটি গানের সঙ্গে নৃত্যানুষ্ঠান। এ ছাড়াও প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হচ্ছে কৌতুক, গান ও নাটক। তিনদিনের এই উৎসবে রবীন্দ্রনাথের সিলেট ভ্রমণ ও তার প্রভাব নিয়ে শনিবার আলোচনা করেন ড. ভীষ্ম দেব, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক জাফির সেতু, অমলেন্দু চক্রবর্তী, অধ্যাপক সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। এ ছাড়াও সিলেটের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

পাতকুয়ো মিস্ত্রির কেরামতি
হাতের কাছে রয়েছে দমকলের প্রশিক্ষিত বাহিনী। আধুনিক যন্ত্রপাতিও। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দক্ষ কর্মীরাও। কিন্তু কিছুতেই ২০ ঘণ্টার চেষ্টাতে একটি কুয়ো থেকে তুলতে পারেন নি এই দুই বিভাগের দক্ষ কর্মীরা। এমনকি ডুবুরিরাও ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ডাকা হয়েছিল এক পাতকুয়ো মিস্ত্রিকে। তিনিই পাতকুয়ো থেকে তুলে আনেন এক যুবকের দেহ। তবে তখন সেটি নিথর হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে এই কলকাতাতেই। শুক্রবার দুপুরে বাঁশদ্রোণীর সোনালি পার্ক এলাকার বাসিন্দা সম্রাট সরকার ওরফে বাপী (২৯) বাড়ির সামনের একটি কুয়োতে স্নান করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন পাতকুয়োতে। বাপীকে উদ্ধার করতে ডাকা হয় দমকল বাহিনীকে। ছুটে আসে বিপর্যয়  মোকাবিলা বাহিনী। নামানো হয় ডুবুরি। পাতকুয়ো থেকে জল বার করে বাপিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়।

রাতভর চেষ্টা চালিয়ে, চারবার ডুবুরি নামিয়েও উদ্ধার করা যায়নি ওই যুবককে। ততক্ষণে ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। শেষপর্যন্ত ডাকা হয়েছিল পাতকুয়োর মিস্ত্রি মেঘনাদ সর্দারকে। তিনিই তার কেরামতি দেখিয়ে গভীর কুয়ো থেকে শনিবার সকালে তুলে এনেছেন বাপীর দেহ। পরিবারের বক্তব্য, আগেই পাতকুয়োর মিস্ত্রিকে ডেকে আনলে হয়তো তাদের ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হতো। তবে  ডুবুরি নামানোর পরেও যুবককে কেন তোলা যায়নি তা নিয়েও  ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মানুষ। পুলিশ জানিয়েছে, যুবকটি মৃগী রোগী ছিল। স্নান করার সময় সম্ভবত অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, পাতকুয়ো মিস্ত্রিকে সিভিল ভলান্টিয়ারের কাজ দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status