শেষের পাতা

শাহজালালে টার্মিনাল-৩ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

‘ভিআইপিরা নিয়ম না মানলে বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে’

স্টাফ রিপোর্টার

২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভিআইপি এবং ভিভিআইপিসহ সকল বিমানযাত্রীকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ এক্ষেত্রে বাধা দেন তাহলে ভবিষ্যতে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। নিরাপত্তার যে নিয়মাবলী রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, আমাদের সকল যাত্রীকে  সেটা মেনে নিতে হবে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে এর তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন এবং মালপত্র আনা নেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩য় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। তিনি একই সঙ্গে বিমানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ এবং ‘অচিন পাখি’র উদ্বোধন করেন এবং বিশ্বের সকল স্থান থেকে বিমানের টিকেট ক্রয়ের সুবিধা সংবলিত একটি মোবাইল অ্যাপসও অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন তিনি। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মানে ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সরকারের কোষাগার থেকে ব্যয় হবে। বাকি টাকা দেবে জাইকা।

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে আমি স্পষ্ট বলতে চাই, এখানে আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বাহিনী প্রধানগণ বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন-‘আপনারা যখন বিদেশে যান তখন যেভাবে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেইভাবে আমাদের বিমানবন্দরে করতে হবে এবং সেটা সবাইকে  মেনে নিতে হবে। সেখানে কেউ কোন বাধা দিতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই বিমানের আধুনিকায়ন এবং সমপ্রসারণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন,অনেকগুলো বেসরকারী সংস্থা এখন বিমান চালাচ্ছে, হেলিকপ্টারকেও বেসরকারী খাতে আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা চাই বিমানেরও নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হলে একদম বেসরকারী খাতে  ছেড়ে দেয়া উচিত নয়, তাহলে সকালে এক রকম বিকালে অন্য রকম তারা করতে পারে।’

আরো ৩টি বিমান আমাদের দেশের অভ্যন্তরীন রুটের জন্য আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘কানাডা থেকে নিয়ে আসা ঐ তিনটি বিমানের সঙ্গে আরো কিছু বিমান যুক্ত করা হবে যাতে  দেশের সকল বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। কক্সবাজার বিমানবন্দরকেও আর্ন্তজাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাতে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে এবং পাশ্চাত্য থেকে  প্রাচ্যে  যত বিমান যাতায়াত করে তাদের একটা ‘হাব’ হতে পারে কক্মবাজার। সেখানে রিফ্যুয়েলিংসহ কয়েকদিন যাতে কেউ  প্রয়োজনে বিশ্রাম নিতে পারে। পর্যটন ছাড়াও আরো অনেকভাবে এই কক্সবাজারকে যেন ব্যবহার করতে পারি। তিনি বলেন,‘এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ড্রিম লাইনার দুটি নিজস্ব অর্থে এবং রিজার্ভের টাকাতেই ক্রয় করা হয়েছে উল্লেখ করে  বলেন, ‘অর্থাৎ এগুলো ক্রয় করার মত সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’ তিনি বলেন, বিমানে অনেক সমস্যা ছিল।

এগুলো ধীরে ধীরে খুঁজে বের করতে হয়েছে এবং সমাধান করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব কোন কার্গো বিমান না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজেই কার্গো বিমান আমাদের প্রয়োজন। ঐ ৩য় টার্মিনালের সঙ্গে অত্যাধুনিক কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। যাতে আমাদের মালামাল প্রেরণ বা আমদানী-রপ্তানী ব্যবসার সুবিধা হয় এবং এগুলো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হবে। ভবিষ্যতে কার্গো ভিলেজের সাথে আমরা দুটি কার্গো বিমানও ক্রয় করবো। কারণ কার্গো বিমান ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না।’ এ সময় তিনি বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্বারোপ করে বিমানবন্দরে বিদেশিসহ  প্রবাস  ফেরত বাংলাদেশীদের আগমনের সময়কার নানা হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী বিমান নিয়ে অতীতের নানা সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন,‘সিট খালি অথচ টিকেট নাই বা এ রকম বহু কিছু হতো।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিমানের যাত্রীসেবা আরো অন্যান্য দেশে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা সেক্ষেত্রে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোর্ট শেয়ারিংয়ের মধ্যমে অনেকগুলো গন্ত্যবে আমাদের যাত্রী পাঠাতে পারি। সেটাও আমরা ভবিষ্যতে করবো। শুধু বিমান ক্রয় নয়, এটা যেন যথাযথভাবে চলে এবং বিমানের যাত্রীসেবা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ও তিনি যত্নবান হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন,‘যাত্রীদেরকেও মনে রাখতে হবে যেই বিমানটা আমাদের নিজেদের, নিজস্ব অর্থে কেনা কাজেই তারই রক্ষণাবেক্ষণে সকলকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ হলে দেশের বিমানের যাত্রী পরিবহন পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে একে আমাদের ‘অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের একটি সূচক’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। তিনি এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের শতবর্ষ  মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকলপনা ২১০০’র কথা উল্লেখ করে বলেন,  প্রজন্মের পর  প্রজন্ম্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, তাঁরা একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে সেজন্য আমরা ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০  বাস্তবায়নের উদ্যোগ  গ্রহণ করেছি। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন  প্রতিমন্ত্রী  এডভোকেট মাহবুব আলী সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো ও জাইকা’র বাংলাদেশ অফিসের চিফ  রিপ্রেজেন্টিভ হিতোসি হিরোকা বক্তৃতা করেন। সিভিল এভিয়েশনের  চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান স্বাগত ভাষণ দেন এবং বিমানের সিইও মুকাব্বির হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status