শেষের পাতা

সিলেটে দল গোছানো

আওয়ামী লীগে শেষ বিএনপি’র হলো শুরু

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

বছরের শেষ দিকে এসে সিলেটে ঘর গোছানো শুরু করেছিলো প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে, আওয়ামী লীগের আগে বিএনপি’র ভেতরে ঘর গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। কেন্দ্রের নির্দেশে দুই মাস আগে আচমকা ঘর গোছানো শুরু করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সফল হয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে সিলেটে তাদের ঘর গোছানোর প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছে। এখন সাংগঠনিক গতি আনতে দলের নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি। এখনো সিলেট বিএনপি দল গোছানোর মূল প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। ঘোষনা করতে পারেনি সিলেট জেলা অধিভুক্ত ১৭ ইউনিটের আহবায়ক কমিটিও। ফলে সিলেট বিএনপির নেতারাও এ নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। যে দলের সরকার থাকে সেই দলের নেতারাই সিলেটে দাপট দেখান। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী বাহিনীও প্রায় সমান। শক্তির জোরে কারো চেয়ে কেউ পিছিয়ে নেই। এরপরও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সিলেট নিয়ে মিশন থাকে। কারন- আউলিয়ার শহর সিলেট থেকেই সবার ভালো কাজের শুভ সূচনা করেন। জাতীয় নির্বাচন এলেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সিলেটের গুরুত্ব অনেকখানি বেড়ে যায়। এবারের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে সিলেট থেকে দল গোছানোর পর্ব শুরু করে বিএনপি।

বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সিলেট বিএনপি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সেই হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশে সিলেট জেলা বিএনপি ভেঙে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে গত ১লা অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ না হলেও সিলেট জেলা বিএনপির পুরাতন কমিটি ভেঙে  দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদারকে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ইতিমধ্যে সিলেট জেলা বিএনপির অধিভুক্ত ১৭ ইউনিটের নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করলেও এখনো কেন্দ্রের নির্দেশ না পাওয়ায় ঘোষণা করা যায়নি। তবে- বসে নেই সিলেট বিএনপির নেতারা। গতকাল শনিবার থেকে তারা সিলেট জেলার ১৭ ইউনিটের সাংগঠনিক সভা শুরু করেছেন।

বিকেলে সিলেটের দক্ষিন সুরমা উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভা হয়। আর রাতে হয়েছে সদরের বর্ধিত সভা। সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কেন্দ্রের নির্দেশ না পেলে তারা আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করতে পারবেন না। আরো এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। তবে- যাই করছেন কেন্দ্রকে অবহিত করেই করছেন। এর কারন- দল গোছানোতে বিতর্ক থাকলে সাংগঠনিক ভাবে দল দূর্বল হয়ে পড়বে। ফলে সবকিছু বুঝে-শুনে করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে- জেলা বিএনপির কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন এক কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি জানান- জেলার মতো মহানগর বিএনপিও পুনর্গঠন করা হবে। কারন- মহানগর বিএনপি এখন একাই টানছেন দলের সিনিয়র নেতা নাসিম হোসাইন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। ফলে মহানগর বিএনপি পুণর্গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে- সিলেটে ঘোষিত যুবদলের কমিটি নিয়ে প্রথমে কিছুটা ক্ষোভ ছিলো। তবে- পর্যায়ক্রমে যুবদলের সেই ক্ষোভ কমে এসেছে। যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও সিলেটে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের কমিটি পুনর্গঠনের হাওয়া তিন মাস আগেও মিলেনি। হঠাৎ করে দলের সভানেত্রীর নির্দেশে অক্টোবরের শেষ দিকে সিলেটে বর্ধিত সভা করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এরপর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের নির্দেশে বাকী থাকা সিলেট জেলা ও মহানগরের ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ করা হয়। নভেম্বর জুড়ে আওয়ামী লীগ সিলেটে সরব ছিলো। এরপর ডিসেম্বরের ৫ তারিখ তারা সিলেটে জেলা ও মহানগরের সম্মেলন করে। এই সম্মেলনে বদলে যায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। নেতৃত্ব বদল দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয় সিলেটে। সিলেট জেলার সভাপতি হন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক হন নাসির উদ্দিন খান। মহানগরের সভাপতি হন মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক হন অধ্যাপক জাকির হোসেন।

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের আগে জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলর হয়। দীর্ঘ দিন পর সিলেটে গঠন করা হয় যুবলীগের কমিটি। এদিকে- সিলেটের পর্ব শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় ভাবেও তাদের সম্মেলন ও কাউন্সিল সমাপ্ত করে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকেও কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটিতে সিলেট থেকে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এডভোকেট আবু নসর ও ইনাম আহমদ চৌধুরী। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে বহাল থাকেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক হন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সদস্য হিসেবে বহাল থাকেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এখন নেতৃত্বে পরিপূর্ণ সিলেট আওয়ামী লীগ। সিলেটে নেতৃত্ব গোছানোর পাশাপাশি কেন্দ্রের ঠাঁই করে নিয়েছেন সিলেটের নেতারা। ফলে সাংগঠনিক ভাবে অনেক এগিয়ে গেছে সিলেট আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে সিলেটে আওয়ামী লীগে অতীতেও শক্তিশালী ছিলো, বর্তমানে আছে। আগামীতেও অবস্থান ধরে রাখবে। প্রবীনের সঙ্গে নতুনের মিশিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগ নতুন গতি পেয়েছে। এই গতি সিলেটে আওয়ামী লীগকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status