শেষের পাতা

নবীগঞ্জের দুই চৌধুরীর বাজিমাত

এমএ বাছিত, নবীগঞ্জ থেকে

২৮ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

নবীগঞ্জে বাজিমাত করেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা ডা. মুশফিক ও আলমগীর চৌধুরী। প্রথম পর্যায়ে বাজিমাত করেন নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। জল্পনা-কল্পনা ও সব হিসাব পাল্টে দিয়ে ১১ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন তিনি। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর্যবেক্ষণে পারিচালিত কাউন্সিলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মজিদ খাঁন এমপি’র বিপরীতে তাকে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচিত ওই কাউন্সিলে সভাপতি পদে বহাল থাকেন সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহির। আলোচনায় থাকা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক বলয়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হন। এই হতাশা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পুরো সিলেট বিভাগকে হতবাক করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মনোনীত হন ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চমক দেখান নবীগঞ্জের দুই কৃতী সন্তান। তাদের নিয়ে উল্লসিত তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায় ২০১৬ সালের ২৮শে ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার ৭৭টি ইউনিয়ন, ৮টি উপজেলা ও ৬টি পৌরসভা নিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন ডাক্তার মুশফিক হোসেন চৌধুরী। তিনি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তার রাজনৈতিক দর্শন। তার নেতৃত্বেই ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান চিকিৎসক হিসেবে তার সু-খ্যাতি রয়েছে। ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৪ সালে প্রয়াত সমাজ কল্যাণমন্ত্রী এনামূল হক মোস্তফা শহীদকে কাউন্সিলে পরাজিত করে জেলা সভাপতি পদে বিজয়ী হন। ১৯৫৬ সালে নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউপির বদরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক মানকজমিনকে বলেন, বিশ্বাসঘাতকতা আর সুবিধাবাদী চক্রান্তে ২০১০ সালের ২৭শে জানুয়ারির হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের উপ-নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হতে পারিনি। দলীয় তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। মাত্র ১২শ’ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। তবে প্রভাব বিস্তার করে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করিনি। দলের হাইকমান্ড আমাকে প্রেরণা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবদানের স্বীকৃতি। আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী: করগাঁও ইউনিয়নের করগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলমগীর চৌধুরী। দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি হিসেবে মাঠে সরব ছিলেন। রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। রাজনীতি ছাড়াও হবিগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হিসেবেও অনবদ্য ভূমিকা রাখেন।

তার নিরলস প্রচেষ্টায় নবীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেকে মডেল হাই স্কুল সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার সু-খ্যাতি রয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করলেও দলের বিশ্বাসঘাতক চক্রের ষড়যন্ত্রে তিনি পরাজিত হন। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব ছিলেন। এরই পুরস্কার হিসেবে দলের হাইকমান্ড তাকে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করে। দৈনিক মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি নিরলস দায়িত্বপালনে নেতাকর্মী এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সরকারের ডিজিটাল পরিকল্পনায় উন্নয়নের বিকল্প নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি সমপ্রসারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতির প্রসার, প্রাশসন ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সমন্বয় এবং হবিগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিতকরণে চেষ্টা চালাব। সর্ব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৃণমূলের রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা আর দলীয় আনুগত্যের বিকল্প নেই। মানুষ শান্তি চায়, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। এসব বিষয়ে প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগাতে হয়। আমার কোনো চাহিদা নেই। জেলার উন্নয়নে অবদান রাখাই আমার অঙ্গীকার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status