বই থেকে নেয়া

অপাংক্তেয়জনের গল্পঃ ‘আমাদের গ্রামে রাজকন্যা আসার কথা ছিল’

হোসাইন মোহাম্মদ জাকি

২০ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

প্রতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ঘিরে অগুণিত বই প্রকাশিত হয়। সেই ভীড়ে পছন্দের বইটি খুঁজে পেতে পাঠকের হিমশিম খাওয়ার যোগাড়। একদিকে যেমন ধৈর্যের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়, অন্যদিকে অর্থনাশের ঝুঁকি! অথচ সংশ্লিষ্ট বইটির পাঠ প্রতিক্রিয়া জানা থাকলে চটজলদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঝুঁকি তৈরী হয় না। অনুভূতির যথার্থতা যাচাইয়ের প্রাথমিক সুযোগ মেলে। সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ‘আমাদের গ্রামে রাজকন্যা আসার কথা ছিল’ বইটি পড়ার অনুভূতি পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মানসে এই লেখার প্রয়াস। এটি তানজিনা হোসেনের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ। লেখিকা পেশায় চিকিৎসক। ইতোমধ্যে তাঁর চারটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় এক যুগ পর ২০১৯ সালে প্রকাশিত হল দ্বিতীয় এই গল্পগ্রন্থ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মাসুক হেলাল। বইটি প্রকাশ করেছে ‘শ্রাবণ’ প্রকাশনী। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। বইটিতে সর্বমোট এগারটি গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্পই ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার।

গল্পের প্রতি ছত্রে ছত্রে সমাজের পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত ও অপাংক্তেয়জনের দেখা মেলে। গভীর হতে গভীরতম সেই সব চরিত্র। তাদের সোনালী অতীত ও দুঃখের কথা গল্পের বাতাবরণে সহজ-সরল, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন লেখক। পাশাপাশি সমকালীন সমাজের নানা অসঙ্গতি গল্পগুলোর প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠেছে। মানসিক ব্যাধির মতো কাটখোট্টা বিষয়কেও পাঠকের উপযোগী করে গল্পে স্থান দিয়েছেন তিনি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেই গল্পগুলো মনের গভীরে রেখাপাত করে। চিন্তার খোরাক যোগায়। সময় সময় তীক্ষ্ম উপহাসের আভা গল্পগুলোকে আরও প্রাণচঞ্চল করেছে। গল্পগুলো পড়তে পড়তে ভূপেন হাজারিকাকে মনে পড়ে বারং বারঃ ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়।......’  

‘কৃষ্ণপক্ষী’ জুড়ে বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনে কর্মরত গৃহকর্মী সোনালী হাজংয়ের গল্প। সেই হাজং যারা বিসর্জন দিয়েছেন নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি। পরম্পরায় পাওয়া সামান্য ভূমিটুকুও দখলে রাখতে পারেন নি। গল্পের শেষ দৃশ্যে হাউজ মেইড সোনালী হাজংয়ের হালকা, শীর্ণ ও কালো শরীরটার গতি হয় বৃষ্টির পানির ফোঁটার সাথে মিশে গিয়ে, পিচঢালা রাজপথে। গল্পটি পড়ে লেখককে বলতে ইচ্ছে করেঃ “লাশের আবার ইজ্জত কী গো লেখক! আর বেঁচে থাকতেই তাদের যেন কতো ইজ্জত দেয় লোকে! ওদের লাশ পিচঢালা রাজপথে থাকাই ভালো। ভূমিতেই যাদের কোনো অধিকার নেই, তারা কার ভূমিতে, কবর খুঁড়বে বলুন!”

‘ঈশ্বরের সন্তান’ নামক গল্পে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র আবিদ নামের তরুণটি খুঁজে ফিরেন তাঁর জন্ম রহস্য। হীরা নামক তৃতীয় লিঙ্গের এক নারীকে মা হিসেবে জানলেও;  না মাতৃত্ব না পিতৃত্ব, ‘ন মানুষ’ হীরা তাঁর মা হয় কি করে? এই প্রশ্ন বুকে নিয়ে তরুণের নিরন্তর পথ চলা। গল্পের শুরুতে শকুনদের হাসি-তামাসাতেই রয়েছে সেই উত্তরঃ

‘ইয়ে তো বিলকুল আলাগ চিজ হ্যায়।
টেস্ট ভি আলাগ হো না পারে গা।
হা হা হা।
তু আওরাত ভি নেহি, মরদ ভি নেহি। তু কেয়া হ্যায়?
খুনসা!  ম্যায় খুনসা কাভি নেহি দেখা। আচ্ছা চিজ হ্যায়।
বল্ না রে, তু কেয়া চিজ হ্যায়?’

‘আমাদের গ্রামে রাজকন্যা আসার কথা ছিল’ গল্পগ্রন্থটির প্রথম দুটি গল্প নিয়ে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়ার প্রয়াস পেলাম। বাকি রহস্য না হয় পাঠক নিজেই উন্মোচন করে নিবেন। আশাবাদী যে, পাঠ সমাপান্তে মনে হবে শান্ত-সৌম্য-স্নিগ্ধ এক সুগভীর দীঘির জলে স্নান সেরে উঠেছেন!
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status