শেষের পাতা

ভারত পুশ করছে না ফড়িয়াদের মাধ্যমে লোক আসছে (অডিও)

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভারত জোর করে (পুশ) কাউকে পাঠাচ্ছে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ায়, এখানে আসলে না খেয়ে থাকতে হবে না- এমন ধারণায় ফড়িয়া বা দালালদের মাধ্যমে কিছু লোক আসছে। ভারতে চাকরি-বাকরির অভাব দেখা দেয়া এবং বাংলাদেশে সহজে কাজকর্ম পাওয়ায় হয়তো অনেকে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই, আমাদের বর্ডারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। বাংলাদেশি নয় এমন কেউ এলে আমরা অবশ্যই তাদের ফেরত পাঠাবো। রোববার নিজ দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়া অন্য কেউ যদি  বৈধ প্রক্রিয়া না মেনে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে অবশ্যই তাকে আটকানো হবে। অপর এক প্রশ্নে জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত কোনো বাংলাদেশি থাকলে তাদের তালিকা দেয়ার জন্য দিল্লিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা তালিকা দিলে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে অবৈধদের ফেরানো হবে। ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভারত এটিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে এবং কোনোভাবেই এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছে।

দিল্লির আশ্বাসে আমাদের ভরসা রাখতে হবে। ব্যক্তিবিশেষের কথা ধর্তব্য নয়। নয়াদিল্লি সফরে না যাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোমেন বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবসের আগে ‘ব্যস্ত কর্মসূচি’ থাকায় শেষ মূহুর্তে সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় থেকে অলিখিত নিয়ম আছে মন্ত্রী-সচিব একই সময়ে বিদেশে যাওয়া যায় না। আমার ভারত সফরে যাওয়ার সময় প্রতিমন্ত্রী -সচিব বিদেশে অবস্থান করছেন। সে কারণেও সফর বাতিল করেছি। কিন্তু এসব কর্মসূচী তো আগেই নির্ধারিত হয়েছে। সব জেনেই তো মন্ত্রী দিল্লি সফরের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নও আসে। ড. মোমেন এটি এড়িয়ে যান। তবে মন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেন- ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক। সফর বাতিলে বাংলাদেশ-ভারত মধুর সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মন্ত্রীর সফর বাতিলের সঙ্গে এনআরসিকে যুক্ত করে ‘ঢাকা একটি বার্তা দিতে চেয়েছে’ মর্মে যে খবর বেরিয়েছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বেসরকারী টেলিভিশনের এক সাংবাদিক। জবাবে মন্ত্রী বলেন, না এটা ঠিক নয়।

আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এটি কোনো কথা নয়। উল্লেখ্য, ড. মোমেনের শেষ মুহূর্তে দিল্লি সফর বাতিলের বিষয়ে সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে দিল্লির সাউথ ব্লক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ‘অত্যন্ত দৃঢ়’ বলে অভিহিত করেছে। দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাভিশ কুমারের মতে সফর বাতিলের সঙ্গে এনআরসিকে যুক্ত করা অনাকাঙ্খিত। ভারতের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে দেশটিতে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে নতুন করে দিল্লির নেতৃত্বের সঙ্গে ঢাকার কোন আলোচনা হয়েছে কি-না? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, না দিল্লির নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী সেদিন এসেছিলেন তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আজও আনানুষ্ঠনিকভাবে ভারতীয় দূতের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হবে, এমন কোনো কিছু ভারত করবে না। এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যে বাংলাদেশীদের ভ্রমণে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। একদিন আগে ওই পোর্ট দিয়ে লোকজনের যাতায়াত কিছু সময় বন্ধ ছিল, এখন স্বাভাবিক। ভারতীয় পার্লামেন্টে দেয়া দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে কোন সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি বরং অন্য সরকারের আমলে হয়েছে বলে যে কথা বলা হয়েছে তা সঠিক দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ওই সরকারগুলোর আমলে আমরা যারা আওয়ামীলীগ করি তারাও নির্যাতনের শিকার হয়েছি।

মিয়ানমারের সুর নরম হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী: এদিকে মিয়ানমারের সুর নরম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। রোববার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে শুনানির পর মিয়ানমারের সুর খানিকটা নরম হয়েছে। তারা তাকে (মন্ত্রীকে) মিয়ানমার সফরের জন্য নতুন করে (মৌখিক) আমন্ত্রণ করেছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমি আগেই বলেছি, আপনারা বাংলাদেশে আসুন। এখানে এসে  আপনাদের লোকদের (রোহিঙ্গা) সঙ্গে কথা বলুন।  তাদের দাবি দাওয়া শুনুন। যাছাই-বাছাই করুন। আমি আবারও বলেছি আপনাদের দেশে যাবো, যখন সব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে পৌঁছে যাবে। আইসিজেতে বিচার চলাকালে সেনা প্রধানের সফর কতটা যুক্তিসংঘত হয়েছে? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা প্রি-শিডিউল ভিজিট ছিল। মামলার দিন তারিখ দেখে এটা ঠিক করা হয়নি। তাছাড়া সেনাপ্রধান মিয়ানমার যাওয়ায় আলোচনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইসিজের শুনানিতে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট। সুচি সেখানে বিষয়টি অস্বীকার করেনি। তিনি বলেননি ওখানে হত্যাযজ্ঞ হয়নি। তিনি শুধু দোষটা অন্যজনকে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু হত্যা যে হয়েছে তা তিনি অস্বীকার করেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status