শেষের পাতা

ডলারের দাম বেড়েই চলেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

দেশের বাজারে ডলারের সংকটে দাম বেড়েই চলছে। এতে টাকার বিপরীতে ডলারের মান শক্তিশালী হচ্ছে। দুর্বল হচ্ছে টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে, যা এক বছর আগের তুলনায় ১ টাকা বেশি। তবে সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের ৮৭ থেকে ৮৮ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ডলার।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য না থাকা, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা কারণে ডলারের বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রপ্তানির বাণিজ্য ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কিছুটা উৎসাহিত হলেও বেড়ে যাচ্ছে পণ্য   আমদানির ব্যয়। কারণ, আমদানির জন্য বেশি মূল্যে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে খাদ্যশস্য, ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামালসহ সব আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গেল মাসের ২৮শে নভেম্বর থেকে আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ডলারের দাম ধরে ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সর্বশেষ ২৮শে নভেম্বর ১০ পয়সা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন থেকে এক ডলারের বিপরীতে আমদানি দায় মেটাতে দেশি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো নিচ্ছে সর্বনিম্ন ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। এর আগে গত ১৮ই নভেম্বর টাকার বিপরীতে ৫ পয়সা বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অন্যদিকে, সবশেষ ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, বিদেশ ব্যাংক আলফালাহ নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সায়। ব্র্যাক ব্যাংক ৮৭ টাকা ২০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করছে। বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৭ টাকায়। এছাড়া ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক।

এদিকে, ডলারের দাম বাড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমদানিকারক ও সাধারণ ভোক্তারা। কারণ পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম আরো বেড়ে যাবে। তবে লাভবান হবেন রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলারের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে। আর পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। স্বল্প আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়েন। তাই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দাম বাড়ানোর লাভ-ক্ষতি কী এটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে জানান প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলেন, সামপ্রতিক সময়ে ক্যাসিনো অভিযানসহ নানা কারণে একটি গোষ্ঠীর ভ্রমণের নামে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এতে করে ডলারের উপর চাপ পড়েছে। তবে এ চাপ ডলারের খোলাবাজারে বেশি পড়েছে। কারণ, ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গেলে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু খোলাবাজার থেকে সহজে টাকা দিয়ে ডলার কেনা যায়। যার কারণে খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি। আর এ প্রভাব ব্যাংকগুলোতেও পড়েছে। কারণ এখন আমদানি চাপ থাকায় হঠাৎ করে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনছে। ফলে দামও বাড়ছে।

এদিকে, রপ্তানি আয়ের নিম্নগতির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতিতে পরেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাস (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রথম ৪ মাস চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status