দেশ বিদেশ

চীনা নাগরিক খুন: সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

চীনা নাগরিক হত্যা মামলায় বনানী থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে  জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোন ক্লু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ৮২ নম্বর বাসার পাশ থেকে গাউজিয়ান হুই নামে ৪৭ বছর বয়সী চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক সুলতান, ভবনের সিকিউরিটি সুপারভাইজার লাভলু আহমেদ, সিকিউরিটি গার্ড আব্দুর রউফ, মো. ইমরান, জয়েনউদ্দিন, ও অফিস স্টাফ রাজিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় বনানী থানা পুলিশ। হত্যা ঘটনায় গতকাল বনানী থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন নিহতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঝাং শু হাং।

গত বছর ৭ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন গাউজিয়ান হুই। ঢাকায় তিনি পাথরের ব্যবসা করতেন। ঘটনার সময় তার পরিবারের সদস্যরা কেউ ঢাকায় ছিলেন না। গাউজিয়ানের মৃত্যুর খরব পেয়ে গতকাল সকালে বাংলাদেশে এসেছে তার পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নিহতের ব্যাবসায়ীক পার্টনার চীনা নাগরিক সিসা বর্তমানে চীনে রয়েছে, আজ তিনি বাংলাদেশে আসলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় পুলিশ। দশ তলা ওই ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন গাউজিয়ান। ষষ্ঠ তলার যে ফ্ল্যাটে গাউজিয়ান থাকতেন, তার সামনের অংশে ছিল তার অফিস। সেখানে একটি স্যান্ডেলে কয়েক ফোটা রক্ত এবং দরজায় ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে। বাসার গৃহকর্মী ফরিদা বেগম জানান, প্রতিদিনের মত বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ৬ তলার ঐ রুমের সামনে আসেন তিনি। কলিংবেল দিলে ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন তিনি।

ফরিদা বলেন, আমি এখানে কাজ শেষ করে বিকালে উত্তরার আর একটি বাসায় কাজ করি। কিন্তু প্রায়ই স্যারের বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয় বলে আমাকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য সে আমাকে একটি চাবি দিয়ে রেখেছিলো। যাতে আমি সময় মত এসে কাজ করে চলে যেতে পারি। সেই চাবি দিয়ে আমি ভিতরে প্রবেশ করি। ঢুকতেই দেখি রুমের মধ্যে অগোছালো অবস্থা, ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে ছোপ  ছোপ ময়লার দাগ লেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছিলো এখানে ধস্তা ধস্তি হয়েছে। স্যান্ডেলের উপর কয়েক ফোটা রক্ত  লেগে আছে। তখনো আমি কিছু বুঝতে পারিনি।
এরপর আমি স্যারের ড্রাইভারকে ফোন করে বলি স্যার তো বাসায় নেই কোথায় গেছে একটু  খোঁজ নিয়ে দেখেন। বাসায় কেউ এসেছিলো কিনা জানতে চাইলে ফরিদা বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে স্যারের অফিসের স্টাফ রাজিব বাসায় এসেছিলো কলিংবেল দিতে আমি দরজা খুলে দিয়েছিলাম। এরপর তাকে আমি বলি আপনি এখন  কেন আসছেন  স্যার তো এখন বাসায় নেই। তখন তিনি (রাজিব) বলেন আমি জানি স্যার বাসায় নেই। এরপর রাজিব আমাকে বলে আপা আমাকে একটা ব্যাগ দিতে পারবেন? আমি বললাম ব্যাগ দিয়ে কি করবেন? তখন সে (রাজিব) বললো এখানে আমার সোফার একটি কুশন আছে এটি নিতে এসেছি। এরপর আমি ব্যাগ দিয়ে কাজে চলে গেছি সে কোথায় গেছে আমি জানিনা। ঢাকার বনানীর যে বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় মাটিতে পোঁতা অবস্থায়  লাশ পাওয়া গেছে, সেই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা বন্ধ ছিল। ভবনের প্রবেশ এন্ট্রি খাতা থেকে দেখা যায় ঘটনার দিন ১০ তারিখ সকাল ৯ টা ১২ মিনিটে লিফটের সিক্স-বি তে প্রবেশ করেন গৃহকর্মী ফরিদা  বেগম, এরপর কাজ শেষে বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিটে তিনি বের হয়ে যান। এর আগে ও পরে ঐ ফ্ল্যাটে কেউ এসেছিলো কিনা তা এন্ট্রি খাতায় উল্লেখ নেই। তবে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটিরা বলেন, যারা নিয়মিত তার বাসায় আসা যাওয়া করতো তারা অনেক সময় খাতায় এন্ট্রি করতো না। এবিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা এখন নিহতের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তেমন কিছু জানা যায়নি। এছাড়া সিসি নামে তার একজন ব্যাবসায়ী পার্টনার রয়েছে। তিনি এখন চীনে রয়েছেন কাল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে তাকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। সন্দেহভাজন সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বলার মত এখনো কোন অগ্রগতি নেই তবে আশা করি দ্রুতই আসামিরা ধরা পরবে। এদিকে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, হুইকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়না তদন্তের প্রাথমিক আলামতে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status