বাংলারজমিন

অবৈধ বালুরঘাট হুমকির মুখে জাফলং সেতু

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি

১২ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে সরকারি ঘোষিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও লুটপাটের জন্য একটি অবৈধ বালুরঘাট তৈরি করা হয়েছে। জাফলং চা বাগানে পিয়াইন নদীর উপর জাফলং সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে জাফলং চা বাগানের গাছপালা বনভূমি উজাড় করে ঘাট তৈরি করে সেখান দিয়ে পিয়াইন নদী থেকে বালু নিয়ে আসতে একটি অবৈধ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। জাফলং মুমিনপুর গ্রামের জুলহাস,জাফলং চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন গোয়ালা এবং বালু লুটপাটকারী একটি সঙ্গবদ্ধ প্রতারক চক্রের শেল্টারের গড়ে উঠেছে এই অবৈধ বালুরঘাট। ঘাট তৈরি করে প্রতি রাতে এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু লুটপাট করা হয়। নির্বিচারে পেলুডার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর উপর নির্মিত জাফলং সেতুটি এবং জাফলং চা বাগান ধ্বংসের মহড়া শুরু হয়েছে। ইসিএ এলাকা হওয়ায় উক্ত স্থানে বালু,পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও যেন বিষয়টি দেখার কেউ নেই। সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল জাফলং সেতু। প্রায় ৩৫কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬০ মিটার এ সেতুটি ২০১৮ সালের পহেলা বৈশাখ জনসাধারণ এবং যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেতুর গোড়াস্থলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ এমপি। তার বক্তব্যে তখন তিনি উক্ত সেতুর আশপাশে কোন ধরনের বালু,পাথর উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দেন। এই সেতুটি তৈরি হওয়ার ফলে স্থানীয় এবং উপজেলার অপরাপর ইউনিয়নের জনসাধারণের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পথ সুগম হওয়ার পাশাপাশি অত্রাঞ্চলের কৃষি,পর্যটন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু কতিপয় বালু উত্তোলনকারী প্রতারক চক্রের দ্বারা এখানকার পরিবেশকে বিনষ্ট করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে জাফলং সে সেতুটি প্রায় প্রতিটি পিলারের নিচে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলন ঘটনার কারণে যখন তখন সেতুটি ধ্বসে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের একমাত্র সমতল দৃষ্টি নন্দন জাফলং চা বাগানটি ধ্বংসের উপক্রম হয়েছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, বালু উত্তোলনের দেখা যায়,বালু উত্তোলনের জন্য রাতের আধারে বনভূমি এবং গাছপালা কেটে বাগানের তীর ঘেষে একটি অবৈধ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে উচ্চ আদালতের নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব পেলুডার লাগিয়ে বালু মজুদ করা হয়েছে। গত রাতেও সেখানে কয়েক লক্ষ টাকার বালু লুটপাট করা হয়। সরেজমিনে বালু লুটপাটে ব্যবহৃত যন্ত্রদানব পেলুডার দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সরেজমিনে জানা যায়, মুমিনপুর গ্রামের জুলহাস, জাফলং চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন গোয়ালাসহ একটি প্রতারক চক্র উক্ত বালু লুটপাট এবং সেতু ধ্বংসের পরিবেশ সৃষ্টির নায়কের ভূমিকায় রয়েছে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরণে সরকারের কোটি কোটি টাকা টাকায় বাস্তবায়িত জাফলং সেতু,ধ্বংস করার জন্য দায়ী এ চক্রটি বিরুদ্ধে নেই প্রশাসনিক কিংবা আইনী উদ্যোগ। বালু লুটপাট অব্যাহত থাকার কারণে জাফলং সেতুর স্থায়িত্ব বিনষ্টের পাশাপাশি ধ্বসে পড়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হলে, অবৈধ বালুঘাটের মালিক জুলহাস মিয়া কোন মন্তব্য করেননি। জাফলং চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন গোয়ালা বলেন,সব জায়গায় সালামি দিয়ে এই ঘাট তৈরি করেছি। আমাদে র দলনেতা জুলহাস মিয়া ভাই সবার সাথে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জাফলং চা বাগানের ব্যবস্থাপক কবির আহমদ জানান,বিষয়টি অত্যান্ত নোংরা এবং পরিবেশ বিদ্বেষী। আমার বাগানের ক্ষতি সাধন করে এমন কিছু করা হয়ে থাকলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো। গোয়াইনঘাট থানার অফিসার (তদন্ত) হিল্লোল রায় বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই,পুলিশ পাটিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন,ইসিএ এলাকায় কোন ক্রমেই অবৈধভাবে বালু,পাথর উত্তোলন চলবে না। তবে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে (বার্কি নৌকায়) বালু নৌকা চলার শীতিলতা রয়েছে। সেতু ধ্বংস করে যন্ত্রদানব চালিয়ে বালু উত্তোলন বিষয়টির ব্যাপারে একাধিক মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাফলংয়ের পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার্থে সরকার ইতিপূর্বে ইসিএ এলাকা ঘোষণা করে সব ধরনের বালু,পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিলেও কার শেল্টারে জাফলং সেতু ধ্বংসের ব্যবস্থা করে বালু লুটপাটের ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে শংকিত এলাকার সচেতন মহল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status