বিশ্বজমিন

অবশেষে হেরে গেলেন ধর্ষিতা!

মানবজমিন ডেস্ক

৭ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১২:২১ অপরাহ্ন

পারলেন না ভারতের উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ের ২৩ বছর বয়সী ধর্ষিতা। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে তিনি হেরে গেলেন। তাকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার পর শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এক বছর আগে তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। এ নিয়ে মামলার আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার ভোরে পিতামাতার সঙ্গে তিনি আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অংশ নিতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কাছেই রেল স্টেশনে যাওয়ার পথে হামলা চালিয়ে মা-বাবার কাছ থেকে ধর্ষকদের একটি গ্রুপ তাকে কেড়ে নেয়। পাশের একটি জমিতে নিয়ে তার দেহে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের শতকরা ৯০ ভাগের বেশি অংশ পুড়ে যায়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরিবর্তন করা হয় হাসপাতাল। উন্নাও থেকে আকাশ পথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নয়া দিল্লিতে। কিন্তু চিৎিসকরা তাকে বাঁচাতে পারলেন না। শুক্রবার রাতে সফদারগঞ্জ হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ। তিনি বলেছেন, এই মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার আদালতে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।

সম্প্রতি ভারতে ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী নৃশংসতা মাত্রা ছাড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে ২৭ বছর বয়সী এক পশুচিকিৎসক যুবতীকে ধর্ষণ, হত্যা ও পুড়িয়ে শেষ করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত চার নরপিশাচকে শুক্রবার ভোরে এনকাউন্টারে হত্যা করা হয়েছে। ফলে ভারতের বেশির ভাগ মানুষ পুলিশের এই এনকাউন্টারকে সেলিব্রেট করছেন। তারা পুলিশকে বাহবা দিচ্ছেন। হায়দরাবাদের ওই ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের পর বিষয়টি পার্লামেন্ট পর্যন্ত ওঠে। সেখানে ধর্ষকদের গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার আহ্বান জানান অভিনেত্রী ও সমাজবাদী পার্টির এমপি জয়া বচ্চন। তাকে সমর্থন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ ও অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী সহ অনেক রাজনীতিক ও সামাজিক সংগঠনের মানুষ।

এনডিটিভি লিখেছে, উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে ধর্ষকদের অগ্নিসংযোগ করা ২৩ বছর বয়সী সেই যুবতী শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানী নয়া দিল্লির এক হাসপাতালে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আকাশপথে উত্তর প্রদেশ থেকে সফদারগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেখানে তিনি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেছেন। সফদারগঞ্জ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক বিভাগের প্রধান ডা. শালাভ কুমার বলেছেন, রাত ১১টা ১০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক করেন ওই যুবতী। তাকে ফেরানের জন্য আমরা খুব চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি বাঁচতে পারলেন না। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি মারা গেছেন। তার মৃতদেহ হাসপাতালের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে রাখা হয়েছে। সেখানে লাশের ময়না তদন্ত হওয়ার কথা। এরপর তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ময়না তদন্ত রিপোর্ট তুলে দেয়া হবে পুলিশের হাতে।

মারা যাওয়ার আগে ওই যুবতী পুলিশকে বলেছেন, তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। উন্নাওয়ে তার গ্রামের কাছে এ সময় ৫ জন তার ওপর হামলা চালায়। তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এর মধ্যে দু’জন হলো তার ধর্ষক এবং তাদের পিতা। তার গায়ে আগুন দেয়ার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নেয়া হয় হাসপাতালে। তবে হাসপাতালে নেয়া পর্যন্ত পুরো পথে তার চেতনা ছিল। এ সময় তিনি হামলাকারী ৫ জনকে সনাক্ত করতে পেরেছেন বলে জানিয়ে গেছেন পুলিশকে।

উন্নাওয়ের হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি পুলিশকে বিবৃতি দিয়েছেন। তার ভাষায়, রায় বেরেলিতে (এক বছর আগে ধর্ষণ ) মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। তাই আমি ভোর ৪টার সময় ওই আদালতে যোগ দিতে স্থানীয় রেল স্টেশনের দিকে যাত্রা করি ট্রেন ধরতে। কিন্তু পথে পাঁচজন ব্যক্তি (যাদের নাম পুলিশের কাছে জানিয়েছেন তিনি) অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। এক পর্যায়ে তারা আমাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে একটি লাঠি দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে তারা। একটি ছুরি দিয়ে আমার কাঁধে কোপ দেয়। তারপর আমার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি চিৎকার শুরু করি। সঙ্গে সঙ্গে অনেক লোকজন এসে জমায়েত হন। তারা পুলিশে খবর জানান।

তবে তার কাঁধে ছুরিকাঘাতের বিষয়ে এখন পর্যন্ত মেডিকেল রিপোর্টে নিশ্চিত হতে পারে নি পুলিশ। ওই যুবতীর ধর্ষক শিবম ত্রিবেদী ছিল হামলাকারীদের মধ্যে। আগের বছর ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যায় সে। ঘটনার মাত্র ৫ দিন আগে সে জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে আসে। তার সহযোগী শুভম ত্রিবেদী এই হামলায় অংশ নেয়। অভিযুক্ত পাঁচ নরপিশাচকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এনডিটিভি আরো লিখেছে, কি কারণে, কোন ঘটনার প্রেক্ষাপটে ওই ধর্ষকদের জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্চে ওই যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের করা এফআইআরের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ধর্ষণের চার মাস পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status