এক্সক্লুসিভ

প্রস্তুত হচ্ছে ওষুধ শিল্প পার্ক সিইটিপি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে ফির

৬ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে প্রস্তুত মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ওষুধ শিল্প পার্ক। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় এজন্য উৎপাদনের আগেই পার্কে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপির) নিমার্ণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বাপি) সভাপতি নাজমুল হাসান এমপি। ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপনের উদ্বোধন করা হয়। ওষুধ শিল্প পার্কে আগামী তিন বছরের মধ্যে কারখানা স্থাপন করে উৎপাদনে যাওয়ার আশা করছেন উদ্যোক্তারা। এতে দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পথে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট বা এপিআই শিল্প পার্কে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য ২০০৮ সালে উদ্যোগ নেয় সরকার। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় এ পার্কে ২০১৭ সালে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এই শিল্পনগরীতে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করা হবে। যা দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হবে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার লক্ষ্যেই স্থাপিত এই এপিআই শিল্প পার্ক। পরিবেশ রক্ষায় এসব শিল্পের বর্জ্য শোধনাগারের জন্য, আগে থেকেই বিশ্বমানের এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। বর্জ্য শোধনাগারের কাজ করবে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রামকি গ্রুপ।
এপিআই শিল্প পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে বাউশিয়া এলাকার ২০০ একর জমিতে ৪১টি প্লটের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। শিল্প পার্কের প্রবেশ পথের বাঁ দিকে রয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্প পার্ক ভবন। এর উল্টো দিকে এপিআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সার্ভিসেস লিমিটেডের আরেকটি ভবন রয়েছে। আর প্রকল্প এলাকার মাঝখানে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ভবন। বিপরীতে রয়েছে পানি সরবরাহ পাম্প স্টেশন। প্রকল্পের শেষ প্রান্তে চালু হচ্ছে সিইটিপি।
পার্কের ভেতরে দেখা গেছে, সিইটিপি প্রকল্পের পাশেই দি একমি ল্যাবরেটরিজের কারখানা নির্মাণ হচ্ছে। ওই কারখানা থেকে ঘুরে সামনে আসতেই একটি প্লটে টিনের ঘর। ওই প্লটে শিগগিরই কারখানা নির্মাণকাজ শুরু হবে। আশপাশে আরো অনেক প্লটে কারখানা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। আগামী বছরের জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে সব কাজ শেষ করে হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিসিকের।
সিইটিপির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করে ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, শিল্প পার্কটি চালু হলে দেশের ওষুধ রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। ওষুধের ৯৫ ভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এই চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যেই আমাদের এই এপিআই শিল্প পার্ক তৈরি করা। এখান থেকে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করা হবে। যা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করছি। আগামী জুন মাসের মধ্যে ইপিআই শিল্প পার্কের কাজ সমাপ্ত হবে। তিনি জানান, ২০২২ সালের মধ্যে শিল্পনগরীতে শিল্প কারখানার সব রকমের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং ২০২৩ সালেই ওষুধ শিল্প পার্কে উৎপাদন শুরু হবে। তা ছাড়া সিইটিপির নির্মাণকাজ শেষ হবে ২১ মাসের মধ্যে। তিনি বলেন, কারখানা নির্মাণের জন্য খুব বেশি সময় হাতে নেই। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে।
সিইটিপির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান, ভারতের রামকি গ্রুপের চেয়ারম্যান আলা অযোধ্যা রামি রেটি, বাপি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মুক্তাদির, বাপি’র মহাসচিব এস এম শাফিউজ্জামানসহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান জানান, আগামী জুনের মধ্যে শিল্প পার্কের সরকারি অংশের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ হবে। ২০০৪ সালে ওষুধ শিল্প পার্ক প্রকল্পের অনুমোদন হয়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২০০ একর জমির ওপর দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ওষুধ শিল্প পার্কে থাকছে ৪২টি প্লট। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ কোটি টাকা দেবেন ওষুধ শিল্প মালিকরা। বাকি টাকা আসছে সরকারি তহবিল থেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপিআই শিল্প পার্কে সিইটিপি স্থাপনের জন্য গত ২৩শে জুলাই বাপি’র সহযোগী কোম্পানি এপিআই সার্ভিস লিমিটেড এবং ভারতের রামকি এনভাইরো সার্ভিস লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওষুধ শিল্পের বর্জ্য শোধনাগারের জন্য এটি হবে দেশের বৃহত্তম আধুনিক সিইটিপি যা পরিবেশ সম্মতভাবে বর্জ্য শোধন করবে।
বাপি’র সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, এপিআই শিল্প পার্কে সিইটিপি পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করবে। ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং ট্রিপস এর সুবিধা গুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করাই আমাদের লক্ষ্য। বর্তমানে এপিআই এর চাহিদার ৫ শতাংশ পূরণ করছে এ শিল্প। আমরা আশা করি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি ২৫ শতাংশে উন্নিত হবে। তিনি বলেন, একটি এপিআই ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য আমরা অনেকদিন ধরে বলে আসছি। আমরা ৯৮ ভাগ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করি। এটা আমাদের একটা বড় শক্তি। নাজমুল হাসান বলেন, বিশ্বে চায়না সবচেয়ে বড় এপিআই ম্যানুফেকচারার। তবে কিছুদিন আগে পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে আড়াই হাজারের মত এপিআই বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। যেটা দাম ছিল ১২০/১২৫ ডলার সেটা ৩০০ ডলার হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এপিআই যত দ্রুত উৎপাদনে যাবে তত আমাদের জন্য ভাল। সভাপতি বলেন, ২০৩২ সাল পর্যন্ত আমাদের পেটেন্ট মুক্ত থাকার কথা। কিন্তু, তিন বছরের এক্সটেনশনসহ ২০২৭ সাল পর্যন্ত আমরা পেটেন্টমুক্ত থাকতে পারব। তবে, এক্সটেনশন নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালেই আমাদের পেটেন্টেড ওষুধ বানাতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের উৎপাদনে যেতে হবে। ২৭টি কোম্পানি এখানে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করবে।
আবদুল মুক্তাদির বলেন, সিইটিপি থেকে দৈনিক ২০ লাখ লিটার বর্জ্য শোধন করা যাবে। পরিশোধন করা ২৫ ভাগ পানি আবার শিল্পের বয়লারে ব্যবহার করা হবে। বাকি ৭৫ ভাগ পানি দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status