এক্সক্লুসিভ

থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে ‘কর্ডব্লাড ’

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে

৫ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:০৪ পূর্বাহ্ন

বাচ্চাদের থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসায় শিশুর জন্মের পর ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া আম্বিলিক্যাল কর্ড থেকে প্রাপ্ত কর্ডব্লাড স্টেম সেল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। শিশু জন্মের পরে যে আম্বিলিক্যাল কর্ডটি বিচ্ছিন্ন করে ডাস্টবিনে ফেলা দেয়া হতো তা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বেশ কয়েক বছর ধরেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের দিতে পারছে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন স্টেম সেল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ।
এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বাইরে যুক্তরাজ্য, ভারত, থাইল্যান্ড এধরনের চিকিৎসা চলছে। এ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ শিখা রুদ্র। তিনি জানান, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষামুলকভাবে ৫জন থ্যালেসেমিয়া রোগীর চিকিৎসা করে সফলতা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে ডে কেয়ার সেন্টার এ আগত থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সাধারণত একমাস পর পর রক্ত দিতে হয়। কিন্তু উক্ত বিভাগ ও অবস গাইনী ভিভাগের যৌথ উদ্যোগে মায়ের গর্ভফুল থেকে ডেলিভারীর সময় আম্বিলিক্যাল কর্ডের মধ্যে রক্ত থেকে স্টেম সেল গ্রহণ করে সেই সংগ্রহীত ষ্টেম সেল থ্যালাসিেমিয়া রোগীদের দিয়ে ভাল একটা ফল পাওয়া গেছে অর্থাৎ যাদের ১ থেকে ২ মাসে বারবার রক্ত দিতে হতো তারা ৩ থেকে ৪ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিতে আসত। তিনি আরো জানান, আগামীতে আমরা এই আম্বিলিক্যাল কর্ড ব্লাড স্টেম সেল ক্যান্সার আক্রান্তদের দেয়ার কথা চিন্তা করছি। কারণ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপীর পর রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। এতে বাংলাদেশে রক্ত স্বল্পতার ঘাটতি কমবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক পরিসংখ্য্যান দেখা যায়, বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগী ও বাহকের সংখ্যা জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ। অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখের মতো মানুষ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। আর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের মধ্যে বিয়ে হওয়ার কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে।
বাংলাদেশে যেহেতু স্ক্রিনিংয়ের কোনো সুযোগ নেই, তাই এ রোগের আক্রান্ত ও বাহকের সংখ্যা দিনদিনই বেড়ে চলছে। তিনি আরো বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ক্রটি হয়। রক্তে যদি স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন কম থাকে তাহলে থ্যালাসিেমিয়া হয়। থ্যালাসিেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভোগেন। বিশ্বে এরোগের আক্রান্ত ও বাহকের সংখ্যা শতকরা ৭ ভাগ । বিশ্বের মধ্যে লাউস, কম্বোডিয়া, কম্পুচিয়া, ইরানসহ এসব অঞ্চলের দেশগুলোতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ও বাহকের সংখ্যা ছিল বেশি, প্রায় জনসংখ্যার ৪০ ভাগ। সেই দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সেই সংখ্যা কমিয়ে এনেছে।
জীনগত সমস্যার কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন কোনো কোনো চেইন তৈরি হয় না। হিমোগ্লোবিন আলফা বা বিটা চেইন যে কোনোটি তৈরিতে সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে বিটা থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি অর্থাৎ বেশির ভাগ রোগীরই হিমোগ্লোবন বিটা চেইন তৈরিতে সমস্যা হয়।
তবে হিমোগ্লোবিনের কোনো নির্দিস্ট চেইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় দুটি জিনের মধ্যে একটিতে যদি কারও সমস্যা হয়, তাহলে এই রোগের আক্রান্ত হবেন না। কিন্ত তিনি হবেন এই রোগের বাহক। এই রোগের বাহকের সাধারণত তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। তবে একজন বাহক যদি পরবর্তীকালে অন্য একজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে তাদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা প্রবল।
রক্ত শূন্যতা, জন্ডিস বারবার বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ অসুস্থ হয়ে পড়া এবং শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে না হওয়া থ্যালাসেমিয়া লক্ষণ। এসব রোগীর মুখের গড়ণেও কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত যকৃৎ ও প্লীহা বড় হয়ে যায়। রক্ত শূন্যতা খুব বেশি হলে হৃদপিন্ড তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেরতে পারে এবং রোগী শ্বাসকষ্ট সহ অন্যান্য উপসর্গ হতে পারে।
রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারাদেশে ৩২টি সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাঃ কমে বর্তমানে মাত্র ১৫ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছে যা খুবই কম। রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরী জরুরী প্রয়োজন। নইলে ভবিষতে চরম সংকট সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রত্যকটি মেডিকেল কলেজে আম্বিলিক্যাল কর্ডব্লাড-এর সচেতনতা বৃদ্ধিতে এর উপর সেমিনার সিম্পোজিয়াম করা জরুরি বলে মনে করেন ডাঃ শিখা ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status