প্রথম পাতা

বাসটি চলে যায় রানুর ওপর দিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের স্ট্রেচারে একটি নিথর দেহ। এ লাশকে ঘিরে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারীর আহাজারি। আমার মা‘কে কাটতে (পোস্টমর্টেম) দিব না। তাকে ছেড়ে দেন। আমি তারে নিয়ে বাসায় চলে যাব। আমার মা ত কাউকে কষ্ট  দেয়নি। সে কেন এভাবে চলে গেল। আহাজারি করা ওই নারীর নাম ফিরোজা বেগম। তার মেয়ে কানিজ ফাতেমা রুমা (৩৫) রাজধানীতে বাস চাপায় মারা যান। গতকাল শান্তিনগর মোড়ে বেপরোয়া আল মক্কা বাসের চাপায় রুমার মৃত্যু হয়েছে। তিনি শান্তিনগরের কোয়ন্টাম ফাউন্ডেশনে ট্রেইনি প্রো অর্গানি হিসাবে চাকরি করতেন। কর্মস্থলের পাশেই তিনি এই দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে রুমা মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা আল মক্কা কোম্পানির একটি বাসে উঠেছিলেন। বাসটি শান্তিনগর মোড়ে আসার পর তিনি বাস থেকে নামতে চান। এসময় ওই বাসটি আচমকা টান দেয়। এতে ছিটকে সড়কে পড়ে যান রুমা। সঙ্গে সঙ্গে ওই বাসের পেছনের চাকা রুমার শরীরের ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে তার পায়ের অংশ মারাত্বকভাবে ভেঙ্গে যায়। তখন একজন পথচারি তাকে বাসের নিচ থেকে টেনে বের করেন। এসময় তিনি ওই পথচারিকে তার কর্মস্থল কোয়ান্টাম অফিসের ঠিকানা দেন। পরে একজন রিকশা চালক ও ওই পথচারি মিলে তাকে নিয়ে যান তার অফিসে। সহকর্মীরা তাকে নিয়ে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসা নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেকের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রুমাকে বাঁচানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। অবস্থা গুরুতর হওয়াতে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়া হয়।   
প্রায় আট বছর ধরে কোয়ান্টাম মেথডে চাকরি করেন রুমা। লেখাপড়া করেছেন মিরপুরে। মিরপুর ৭ নম্বর এলাকার আবুল ইসলাম ও ফিরোজা বেগমের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ইমামতি করেন। তিনি ছাড়াও তার আরও চার বোন ও তিন ভাই আছেন। তিন বছর আগে শফিকুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। তবে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশি ভাল ছিল না। তাদের কোনো সন্তানও  নেই। রুমা স্বামীর শনির আখড়ার বাসায় থাকতেন না। মিরপুরে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। মিরপুর থেকেই প্রতিদিন শান্তিনগর আসতেন। রুমার মা ফিরোজা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। স্বামীর সঙ্গে মনমালিন্য হওয়াতে সে আমাদের সঙ্গেই মিরপুরে তাকে। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে রুমা অফিসের উদ্দেশে বের হয়। গতকালও একই সময়ে বের হয়েছে। অন্যান্য দিন আমার সঙ্গে দেখা হলেও কাল দেখা হয়নি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে খবর পেয়েছি সে এক্সিডেন্ট করেছে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ভলান্টারি ব্লাড ডোনেশন প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর শেখ মো. ফয়সাল বলেন, রুমা অনেক শান্ত, হাসি খুশি একটা মেয়ে ছিল। সহকর্মীরা সবাই তাকে খুব পছন্দ করত। মানুষের জন্য কাজ করতে ভালবাসত। তার এমন মৃত্যুতে কোয়ন্টাম ফাউন্ডেশনের সকল কর্মীরা মর্মাহত। সকালে আমাদের একজন রক্তদাতা ও রিকশা চালক তাকে উদ্ধার করে আমাদের অফিসে নিয়ে যান। পরে আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। রুমাকে উদ্ধার করা পথচারি ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল বলেন, আমার অফিসও শান্তিনগরে। তাই আমি আল মক্কা বাসে চলাচল করি। সেই সুবাদেই ওই নারীকে আমি কয়েকবার দেখেছি। গতকাল আমরা একই বাসে শান্তিনগর মোড়ে আসি। আমাদের বহনকারী বাসটি শান্তিনগর ফ্লাইওভার দিয়ে নামছিলো। তখন ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। ধীর গতিতে বাসটি ফ্লাইওভার থেকে নেমে সিগন্যাল অতিক্রম করার চেষ্টা করছিলো। তখন আমরা অনেক যাত্রী বাসের চালককে বলি সাইট করে আমাদেরকে নামিয়ে দেয়ার জন্য। চালক একটু স্লো করায় আমরা কয়েকজন নেমে যাই। কিন্তু বাসটি পুরোপুরি থামায়নি। আমি নেমে রাস্তা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একনারীর চিৎকার শুনতে পাই। দৌঁড়ে গিয়ে দেখি ওই নারী যাকে আমি চিনি। প্রথমে মনে করেছিলাম তিনি শুধু পড়ে গেছেন। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি বাসের একটি চাকা তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে চলে গেছে। পায়ের মাংস রাস্তায় পড়ে আছে। পরে আমি ও আরও দুজন মিলে তাকে উদ্ধার করে কোয়ান্টামের অফিসে নিয়ে যাই। এদিকে ঘটনার পর পল্টন থানা পুলিশ বাসটি আটক করে। এর আগে গত ২৭শে আগস্ট রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় ট্রাস্ট পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় পা হারান কৃষ্ণা রায় (৫২) নামে এক নারী। তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিইটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status