শেষের পাতা

দ্য বিগ ফোন হ্যাক

বিশ্বজুড়ে ইসরাইলি ম্যালওয়ারের আড়িপাতা

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

গত ২৮শে অক্টোবর দিল্লির ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রাজিব শর্মার ফোনে একটি কল এলো। ফোনটি করেছেন কানাডাভিত্তিক ইন্টারনেট গবেষণা সংস্থা সিটিজেন ল্যাবের এক গবেষক জন হিলটন। তিনি রাজিবকে জানালেন যে, তার ফোন গত মে মাসে দুই সপ্তাহ ধরে নজরদারির মধ্যে ছিল। তবে এর শিকার শুধু তিনি একাই নন, ভারতের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, আইনজীবী ও অধিকারকর্মীর মোবাইলই হ্যাক করা হয়েছিল। আর এটি করা হয়েছিল ইসরাইলে ডেভেলপ হওয়া একটি ম্যালওয়ারের মাধ্যমে।

ইতিমধ্যে যেই ইসরাইলি কোমপানি ওই ম্যালওয়ারটি ডেভেলপ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই হ্যাকিং টুল দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪০০ মোবাইলে আড়ি পাতা হয়েছে। যদিও ভারত নির্দিষ্ট করে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি তারপরেও দেশটির বেশকিছু অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, গত মে মাসে তাদের কাছে এমন সতর্কবার্তা আসে যে তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
হোয়াটস অ্যাপ প্রথম এই অসঙ্গতি ধরতে পারে মে মাসে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি তার দেড় বিলিয়ন ব্যবহারকারীকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের অ্যাপলিকেশনটি আপডেট দেয়ার অনুরোধ জানায়। এই হ্যাকিং টুলটি নিজে থেকেই হোয়াটস অ্যাপ ভিডিও কল ফাংশনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইনস্টল হতে পারতো। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয় ভারতের কমিপউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা সিইআরটিকে। সংস্থাটি দেশটির কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। সতর্ক বার্তা পেয়ে তারা তাদের ওয়েবসাইটে হোয়াটস অ্যাপ হ্যাকিংয়ের বিষয়টি নিয়ে একটি বার্তা প্রকাশ করে। তবে সমপ্রতি সেটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায় এটি হচ্ছে ১৯৭২ সালের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির আধুনিক সংস্করণ। হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে বিশ্বব্যাপী অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নজরদারি করার উদ্দেশ্যেই এটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি প্রথমে খুঁজে পায় কানাডার ওই গবেষণা সংস্থাটি। এটি বিশ্বব্যাপী এ ধরনের ম্যালওয়ার শনাক্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সতর্ক করতে কাজ করছে।

ভারত সরকার জানিয়েছে যে, এ ধরনের নজরদারির সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে প্রস্তুতকারী কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা এই ম্যালওয়ার শুধুমাত্র সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর কাছেই বিক্রি করে। হোয়াটস অ্যাপের সব থেকে বড় বাজার হচ্ছে ভারত। দেশটিতে অ্যাপটির ৪০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে যা এর মোট ব্যবহারকারীর এক-তৃতীয়াংশ। এ নিয়ে সাংবাদিক রাজিব শর্মা বলেন, এটা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। যাদের টার্গেট করা হয়েছে তাতে বোঝা যায়, এটি সরকার পরিচালিত নজরদারি কার্যক্রম। যাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে তারা সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, রাজনৈতিক বিরোধীদল বা বিদেশি রাষ্ট্রের কর্মকর্তা। এটি ভারতের পাশাপাশি বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মেক্সিকোতেও হয়েছে।

তবে ভারত সরকার বলছে তারা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে দেশটির তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শংকর টুইট করে জানিয়েছেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত। এ নিয়ে হোয়াটস অ্যাপের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে প্রশ্ন উঠেছে এই ম্যালওয়ারের দাম নিয়ে। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একটি ম্যালওয়ারের দাম ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এত দাম দিয়ে এটি কেনার ক্ষমতা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবে ক্রেতাদের নাম উল্লেখ না করেও ম্যালওয়ারটির ইসরাইলি কোমপানি এনএসও দাবি করেছে, এটি শুধুমাত্র সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়। এর উদ্দেশ্য সন্ত্রাসবাদ ও বড় ধরনের অপরাধ দমনে সাহায্য। কিন্তু একে কোনোভাবে সাংবাদিক বা অধিকারকর্মীদের নজরদারিতে রাখতে তৈরি করা হয়নি।

এই ম্যালওয়ারের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন অধিকারকর্মীকে নজরদারি করার সময়। পরে জানা যায়, এটি শুধু মোবাইলের কার্যক্রম নয় বরং একটি শব্দ পরিবহন মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। অর্থাৎ ব্যবহারকারী আশেপাশে কার সঙ্গে কী কথা বলছেন তাও এর মাধ্যমে শোনা সম্ভব। এই ম্যালওয়ার বিক্রি করে প্রচুর অর্থও আয় করছে ইসরাইলি কোম্পানিটি। শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই এর আয় ছিল ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status