খেলা

‘যা বিশ্বাস করতো না কেউ’

ইশতিয়াক পারভেজ, নাগপুর (ভারত) থেকে

১০ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

সকালেই অনুশীলনে হাজির বাংলাদেশ দল। মাহমুদুল্লাহরা একে একে বোলিং, ব্যাটিং আর ফিল্ডিংয়ে ঘাম ঝরায় দুপুর পর্যন্ত। এরপর সেখানে পৌঁছে ভারত দল। তাদেরও হালকা মেজাজে দেখা গেল না। ঘটনা পরিষ্কার। হারলেই সিরিজ খোয়ানোর লজ্জা। অবশ্য বাংলাদেশের সামনে হারানোর কিছুই নেই। আছে দারুণ কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা। জিতলেই ইতিহাস, প্রথমবার বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট শক্তি ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উৎসব হবে। অথচ মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে শুরু হয়েছিল হায়! হায়! ক্রিকেটারদের আন্দোলনে প্রায় অচল হতে বসেছিল ক্রিকেট। তা থামার পরই আসে আরো বড় বিপদ। ফিক্সারের প্রস্তাব পেয়ে তা গোপন রাখার অপরাধে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে আইসিসি নিষিদ্ধ করে ২ বছরের জন্য (এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা)। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টি-টোয়েন্টি ও মুুমিনুল হককে টেস্টে আপদকালীন অধিনায়ক করে পাঠানো হয় ভারতে। যেখানে ছিল আরো বড় ধ্বংসের শঙ্কা। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই দিল্লি জয় করে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ দল। এতে মুগ্ধ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান রাসেল ডমিঙ্গো। বাংলাদেশ দলের এ প্রোটিয়া কোচ বলেন, ‘এই সফরের আগে খুব কঠিন কিছু সময় গেল। ক্রিকেটারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। যে উদ্যম আর তাড়না তারা গত দশ দিনে দেখিয়েছে তা ছিল দুর্দান্ত। তারা নতুন কিছু করতে চেয়েছে। শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে এসেছে তাও দেশের বাইরে। দুই সপ্তাহ আগেও যদি কেউ বলতো নাগপুরে সমতা নিয়ে আমরা আসবো, কেউ বিশ্বাস করতো না।’

হ্যা, সত্যি কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। সাকিব ছাড়াও নেই দলের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। ব্যক্তিগত কারণে তিনি স্বেচ্ছায় ভারত সফর থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাই দলে তরুণ ও নতুন মুখের ছড়াছড়ি। সিনিয়র বলতে শুধু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহীম। তাদের হাত ধরেই তরুণরা করছেন প্রত্যয়ী পারফরম্যান্স। তরুণ আফিফ হোসেন যখন হেঁটে অনুশীলনে যাচ্ছিলেন ভারতীয় সংবাদ কর্মীদের ক্যামেরার ফ্লাস জ্বলে উঠলো বারবার। একজন বলে ওঠেন, ওর নাম আফিফ, দারুণ ক্রিকেটার হবে মনে হচ্ছে। তরুণ আর অভিজ্ঞদের মিশেলে গড়া বাংলাদেশ দল নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও উচ্ছ্বসিত। তারা জানেন রোহিত শর্মার দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় ছিনিয়ে নেয়ার সামর্থ্য রাখে। দলের এমন উদ্যোম হারিয়ে  যেতে দিতে চান না প্রধান কোচ ডমিঙ্গোও। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের নিয়ে খুবই তৃপ্ত। কাল (রোববার) একটা দারুণ সুযোগ। ছেলেরা  রোমাঞ্চিত। দিন শেষে ভারত বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। এখানে কেউ বাংলাদেশের সুযোগ দেখবে না। কিন্তু যদি আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে আমাদেরও সুযোগ থাকবে।’

মুশফিক অনুশীলন শেষে বের হতেই তার পেছনে পেছনে ক্যামেরা হাতে ছুটতে শুরু করলো ভারতীয় সংবাদকর্মীরা। কঠোর নিরাপত্তার কারণে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর কাছে যেতে না পারলেও দূর থেকেই তার ছবি তুলতে ভিডিও করতে ব্যস্ত তারা। এমনকি দলের একেবারে নবীন সদস্য লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিল্পবও আছেন তাদের নজরে। যেভাবে শেষ ম্যাচে ভারতের অধিনাক রোহিত শর্মাকে আউট করেছেন এই তরুণ তাতেই মুগ্ধ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। বাংলাদেশ কোচও তার তুরুপের তাসকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমি সবসময়ই লেগ স্পিনারদের পছন্দ করি এবং আমি জানি, বিল্পব মূলত ব্যাটসম্যান, যে লেগ স্পিন করতে পারে। তবে আমি ওর প্রাণশক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও ওয়ার্ক এথিকে মুগ্ধ। ওর মতো একজনকে দলে পাওয়াটা দারুণ। গত ম্যাচে (রাজকোট) রোহিতের সামনে বোলিং করেও ৩.৫ ওভারে ২৩ রানে দুই উইকেট ছিল তার। পরে শেষ বলে একটি ছক্কা হজম করে সে। তরুণ একজন হয়েও চাপের মুখে অমন বোলিং, সে সত্যিই ভালো বোলিং করেছে।’ অনুশীলন শেষে স্বল্পভাষী বিল্পবও বলে গেলেন, ‘চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন আশা করি ভালো হবে।’

এই ম্যাচ নিয়ে দুই দেশের সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদেরও উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। নাগপুর ক্রিকেট এসোসিয়েশনের আয়োজন দেখে মনে হয়, তারা বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে। নাগপুর ক্রিকেট এসোসিয়েশনের মিডিয়া ম্যানেজার বলেন, ‘এত চাপ হবে এই ম্যাচে তা অনুমান করিনি। তবে বাংলাদেশ বলে আগেই মানসিক প্রস্তুতি ছিল তারা এই লড়াই জমিয়ে তুলতে পারে। আশা করি কাল (আজ) দারুণ লড়াই দেখবে নাগপুরবাসী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status