প্রথম পাতা

যুবলীগের নেতৃত্ব নিয়ে নানা আলোচনা

কাজী সোহাগ

১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

ক্যালেন্ডারের পাতায় আর মাত্র ৩৪ দিন। আগামী ২৩শে নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল। ওইদিন থেকেই নতুন নেতৃত্ব হাল ধরবে যুবলীগের। কেমন হবে আগামীর যুবলীগ, কারা আসছেন নেতৃত্বে ? শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কার পর কেমন হবে যুবলীগের কমিটি এ নিয়ে এখন সরব আলোচনা। দীর্ঘ ৭ বছর পর কমিটি নিয়ে এ আলোচনায় থাকছে নানা দিক। ২০১২ সালে সর্বশেষ যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ক্যাসিনো কেলেংকারি, অনিয়ম, দুর্নীতি আর টেন্ডারবাজির অভিযোগে যুবলীগের ভাবমূর্তি শূণ্যের কোটায় বলে মনে করছেন খোদ যুবলীগের নেতা-কর্মীরাই। তাদের মতে এখন সময় এসেছে নেতৃত্ব বদলের। সংগঠন গোছানোর। আমূল পরিবর্তন ছাড়া যুবলীগের অতীত উজ্জল ভাবমূর্তি ফিরবে না বলে তাদের ধারণা। যুবলীগের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ কয়েক নেতার বিতর্কিত কর্মকান্ডে হতাশ ও আশাহত তৃণমুল যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। তাই শীর্ষ নেতৃত্বেই আমূল পরিবর্তন চান তারা। ক্লিন ইমেজ আর যুবকদের হাতেই যুবলীগকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তাদের বিশ্বাস।

এজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে চেয়ে আছেন তারা। নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, যুবলীগের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে শেখ হাসিনাই যথেষ্ট। তিনি সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে আমরা মনে করি। এদিকে রোববার বিকেলে কাউন্সিলের দিক-নির্দেশনা নিতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা। বৈঠকে যাবেন না সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। কাউন্সিলের আগে বৈঠকটিকে বিশেষ গুরুত্বপুর্ন বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। বৈঠক থেকে নেতৃত্ব নিয়ে একটা বার্তা পাবেন বলে তাদের ধারণা। ক্লিন ইমেজের পাশাপাশি মূল নেতৃত্ব যুবকদের হাতে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ৪০ বছর বয়সীরা যুবলীগের নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন বিধান ছিল গঠনতন্ত্রে। কিন্তু ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় কংগ্রেসের পর এই বিধানটি বিলুপ্ত করা হয়। ৬ষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ৬৪ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী, বর্তমানে তার বয়স ৭১। এছাড়াও সংগঠনটির সিনিয়র নেতাদের বেশীর ভাগেরই বয়স ৬০ পার হয়েছে। এই অবস্থান যুবনেতাদের বয়স কত হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

এদিকে যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা এরইমধ্যে নীরবে তাদের তৎপরতা শুরু করেছেন। দিনের বেলায় আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অফিস থেকে তারা ছুটছেন ধানমন্ডির কার্যালয়ে। আর রাতে ছুটছেন নেতাদের বাসায় বাসায়। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে নিজেদের নামটা পৌঁছে দেয়া তাদের লক্ষ্য। আবার অনেকে চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে থাকার। আবার কোন কোন নেতা এরইমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। পাঁচ তারকা হোটেলসহ রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে পার্টি দিচ্ছেন। যুবলীগের কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অনেকটা মিশ্র অভিপ্রায়ের কথা জানা গেছে। যুবলীগের সাবেক নেতাদের চাওয়া- তরুণ, যুববান্ধব ও সৎ নেতৃত্ব। আর বর্তমানরা চান, ছাত্র ও যুবরাজনীতির অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ কর্মিবান্ধব, গতিশীল ও সহজপ্রাপ্য কাউকে। দলের বেশিরভাগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাবরের চেয়ে এবার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। তারা বলছেন, এবার সরাসরি নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই তিনি নিজেই বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এবার সংগঠনে স্থান পাবেন পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক, ত্যাগী নেতারা। এ ছাড়া ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এরকম দেখে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যেই খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেই আলোচনায় আছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেখ ফজলে নুর তাপস, শেখ মারুফ, বতর্মান কমিটির ১ নং সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন ও শেখ ফজলে ফাহিম, যিনি এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও আছেন শহীদ সেরনিয়াবাত, ফারুক হোসেন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মাহবুবুর রহমান হিরন, সুব্রত পাল, আবুল বাশার, ফারুক হাসান তুহিন, মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের জন্য মুখিয়ে থাকেন সহস্রাধিক সাবেক ছাত্রনেতা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে এবার আলোচনায় আছেন- ইসাহাক আলী খান পান্না, বাহাদুর বেপারি, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। আওয়ামী লীগের এ সহযোগী সংগঠনের নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, এখানে কেউ প্রার্থী হন না। অনেকে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন বা নেতাদের কাছে নিজেকে তুলে ধরেন। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের কংগ্রেসে কখনো ভোট হয়নি। স্বভাবত, কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। দলীয় সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নেতৃত্ব খুঁজছেন। অনেক নেতার প্রোফাইল তার হাতে।

তিনি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান করছেন। এর মধ্য থেকে বাছাই করে স্বচ্ছ ইমেজের ও সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন দুইজনকে এ বৃহৎ সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হবে। যুবলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে প্রতিটি কংগ্রেসেই যুবলীগের ভেতর থেকেই সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার ব্যতিক্রম হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। কারণ হিসেবে সংগঠনের নেতারা বলছেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব। যুবলীগের মোট প্রেসিডিয়ামের পদ ২৭।

পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় মোট ২৯ জন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ২৮ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনের বয়স ৬০ বছরের নিচে। বাকি ২৩ জনের বয়সই ষাটের বেশি। পাঁচজন যুগ্ম সম্পাদকের প্রত্যেকের বয়সই ৫৫ বছরের অধিক। নয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে শুধু একজনের বয়স ৫০-এর কম। বাকি আটজনের বয়সই পঞ্চাশোর্ধ্ব। সম্পাদকমন্ডলীর ৬০ জনের মধ্যে ৪৫ জনই পঞ্চাশোর্ধ্ব। সহসম্পাদক ২০ জনের মধ্যে ১৫ জনেরই বয়স ৫০-এর বেশি। সদস্য ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জন ৫০ পার করেছেন। তবে এবার বয়সের এই বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাই তৃনমূল যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, অপেক্ষাকৃত যুবকদের হাতেই এবার দেয়া হবে নেতৃত্বের ভার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status