এক্সক্লুসিভ

সিলেট জেলা বিএনপি

নতুনদের চ্যালেঞ্জের মুখে শামীম ও আলী

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে সিলেট বিএনপিতে চলছে নানা টানাপড়েন। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। অবস্থা বুঝতে পেরে সিনিয়র নেতারা বিস্ফোরণ ঘটার আগেই হস্তক্ষেপ করেন। এতে কিছুটা ক্ষোভ কমেছে। এরপরও নতুন আহ্বায়ক কমিটি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করতে ততোটা গতি পাচ্ছে না। আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় ক্ষোভের কিছুটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে এবার সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সাবেক কমিটির সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তারা আহ্বায়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। তাদের মনোনীতদের দিয়েই গঠন করা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। এ কারণে আহ্বায়ক কমিটি যতটা বিতর্কিত হচ্ছে, এর ছাপ এসে পড়ছে তাদের গায়ে।

এরপরও সব নীরবে সয়ে দলের স্বার্থে কাজ করে চলেছেন তারা দু’জন। এই অবস্থায় নতুন করে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরতে শামীম ও আলীকে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। কারণ এবার তাদের বিরোধী বলয়ে নেতাকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। সিলেট জেলা বিএনপির এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় এবার পুরোপুরি নীরব সিলেট বিএনপির প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। আন্দোলন সংগ্রামকালে তিনি একের পর এক মামলায় বিপর্যস্ত। একাধিক পরোয়ানাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি লন্ডন পাড়ি দিয়েছিলেন। ফিরে এসে আবার আইনি লড়াই চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফোকাস তার দিকে থাকায় তিনি আড়ালে রয়েছেন। সব দেখলেও সিলেটে দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় এবার তিনি নীরব। তার বলয়ের নেতারাও নীরব। অ্যাডভোকেট জামান গতবার সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া গতবারের সভাপতি প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম এখন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। অসুস্থতা কাবু করেছে তাকে। ফলে দিলদার হোসেন সেলিম জেলার রাজনীতিতেও অনুপস্থিত হয়ে পড়ছেন। যদিও দলের দুর্যোগকালীন সময়ে তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, এবার সেলিম ও জামান জেলা বিএনপির রাজনীতিতে আসছেন না। তারা দু’জনই পরিস্থিতির কারণে নীরব হয়ে পড়েছেন। তবে সভাপতি হিসেবে আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বিগত দিনে সিলেট বিএনপিকে সঠিক পথেই পরিচালিত করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি তারা সব বলয়কে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। উপজেলা ও সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে তারা ভূমিকা রাখেন। এ কারণে কারান্তরীণ হতে হয়েছে সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদকে। আর নগরীর সুবহানীঘাটে নিজ বাসায় বৈঠক করতে গিয়ে একাধিকবার পুলিশি অভিযানের মুখে পড়েন আবুল কাহের শামীম। কৌশলে পালিয়ে তিনি গ্রেপ্তার এড়ান। শামীম ও আলীর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময় বেশিদিন ছিল না।

কয়েক মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশে ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ফলে আসন্ন সম্মেলন ও কাউন্সিলে আবার সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ  
প্রার্থী হচ্ছেন। তাদের দু’জনের অবস্থানও শক্ত। জেলা সম্মেলন ও কাউন্সিলের আগে তাদের নেতৃত্বে হবে ১৬ ইউনিটের কমিটি। কাউন্সিল হলে এবারো শামীম ও আলী তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারেন। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হওয়া রাজনীতির মারপ্যাঁচে কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে দু’জনই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবুল কাহের শামীম সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতির পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য। দলের ভেতরে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আর গতবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগেই সিটি নির্বাচন সহ নানা বিষয়ে আলী আহমদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এরপর দলের প্রতিও ছিল অবিচল আস্থা।

এ কারণে তিনি প্রার্থী হয়েই চমক দেখান। আলী আহমদ সব বলয়কে সঙ্গে করে চলেছেন। সিনিয়রদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছেন। এবার সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি পদে আবুল কাহের শামীমের পাশাপাশি জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর নাম। এই তালিকায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের নামও। কাইয়ূম চৌধুরী সিলেট বিএনপিতে বহুলভাবে পরিচিত। তিনি সাইফুর রহমানের জমানায় সিলেটের উন্নয়নের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া সব বলয়ের নেতাদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এবার আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক হতে কাইয়ূম চৌধুরী শেষ মুহূর্তে এসে তীব্র লড়াই গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তার পরিবর্তে আহ্বায়ক করা হয় কামরুল হুদা জায়গীরদারকে। আহ্বায়ক পদ না পেলেও এবার জেলা বিএনপির সভাপতি হতে কাইয়ূম চৌধুরী আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি আহ্বায়ক কমিটি সভায় উপস্থিতি সহ গোটা জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। তাকে নিয়ে সিলেট বিএনপির একাংশ মাঠে নামছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলী আহমদ যোগ্য প্রার্থী হলেও এবার তার সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আভাস দিয়েছে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমরান আহমদ চৌধুরী। দীর্ঘ দিন ছাত্রদলের সভাপতি থাকায় গোটা জেলায় তার পরিচিতি ও যোগাযোগ রয়েছে। এমরান আহমদ চৌধুরীকে ঘিরে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের বলয় তৈরি হচ্ছে।

এমরান আহমদ চৌধুরীর পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট হাসান পাটোয়ারী রিপনও লবিং চালাচ্ছেন। অ্যাডভোকেট হাসান পাটোয়ারী রিপন আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি সিলেট বারে বিএনপির নেতাকর্মীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে মামলায় আক্রান্ত হওয়া নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় তার ভূমিকা ছিল। এ কারণে গোটা জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচিতি রয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আব্দুল আহাদ খান জামাল। তিনিও এবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, এখন জেলার বিষয়টি তাদের চিন্তাভাবনায় নেই। তারা এখন ব্যস্ত হবেন উপজেলা ও পৌর ইউনিট নিয়ে। কারণ এই ইউনিটগুলো শক্তিশালী হলে সিলেট বিএনপি শক্তিশালী হবে। এরপর জেলা কমিটির দিকে নজর দেয়া হবে। তবে যা হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে। বিগত কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে হয়েছিলো। এ কারণে এবারো কাউন্সিলের বাইরে অন্য কোনো চিন্তা নেই কারো। ফলে ভোটাররা যাদের নির্বাচিত করবে তাদের হাতেই যাবে আগামী দিনের নেতৃত্ব।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status