শেষের পাতা

বিএনপি সরকারের রেল বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল দেশের জন্য আত্মঘাতী

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রেসক্রিপশনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের জনবান্ধব রেলকে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল দেশের জন্য আত্মঘাতী। তিনি বলেন, আমি মনে করি, রেল বন্ধ করে দেয়া, দেশের জন্য একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। একটা দেশের যোগোযোগের জন্য রেলপথ, সড়ক পথ এবং নৌপথ সেই সঙ্গে বিমান- সবগুলো পথই চালু থাকা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন এক আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা ছিল যে, যেটা লাভজনক নয় তা বন্ধ করে দেয়ার। সেই নির্দেশনায় বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে রেল যোগাযোগটাকেই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার জন্য অনেকগুলো রেললাইন এবং রেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি একই সঙ্গে রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের র‌্যাকে নতুন কোচ প্রতিস্থাপনেরও উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ হলো এদেশের সাধারণ এবং মধ্যবিত্তের অন্যতম একটি চলাচলের মাধ্যম।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই সিলেট এবং চট্টগ্রামে দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালুসহ রেলকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তিনি বলেন, রেল যোগাযোগটা যাতে আরো উন্নত হয় তার ব্যবস্থা হিসেবে আমরা উত্তরবঙ্গসহ সমগ্র বাংলাদেশেরই রেল যোগাযোগ স্থাপনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ সময় বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় সেটাতে রেল লাইন স্থাপনসহ সেতুটিতে বহুমুখীকরণে তার সরকার উদ্যোগে গ্রহণ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যমুনা সেতুর মূল নকশা প্রণয়ন হয়ে যাওয়ার পর সরকারে আসলেও আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এই সেতুর সঙ্গে আমাদের রেলের লাইন,গ্যাস এবং বিদ্যুতের লাইন থাকতে হবে। এটি মাল্টিপারপাস হবে এবং সেই মোতাবেকই আমরা এর সঙ্গে রেল সংযোগ সম্পৃক্ত করি। তিনি বলেন, এই রেল লাইন স্থাপনের ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমাদের রাজধানী ঢাকার ভাল যোগাযোগের সুব্যবস্থা হয়ে যায়। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর যেসব রেলপথ বা লিংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেসবও সরকার নতুনভাবে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি, যেসব স্থানে রেল যোগাযোগ ছিল না সেখানেও রেল যোগাযোগ চালু করা হচ্ছে। ফলে, সাধারণের যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্য পরিবহন এবং বাজারজাত সহজ করে দিলে আমাদের দেশের কৃষকরাই সব থেকে লাভবান হবে। তিনি এ সময় চিলমারী বন্দর পুনরায় চালুকরণসহ উত্তরাঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানের প্রচার প্রসার এবং সংরক্ষণেও তার সরকার এগিয়ে আসবে বলে উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এসময় কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এবং লালমনিরহাটে একটি অ্যারোস্পেস এন্ড এরোনটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে সরকার সেখানে প্লেন তৈরি করার স্বপ্ন দেখছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতিটাও প্রয়োজন। আর যেন উত্তরবঙ্গবাসীকে মঙ্গা শব্দটা শুনতে না হয় সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং রেল বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন এবং ভিডিও চিত্র পরিবেশন করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহমেদ গণভবন প্রান্তের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন কুড়িগ্রাম স্টেশন থেকে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। বক্তব্য শেষ করে বাঁশি ফুঁকে ও সবুজ পতাকা উড়িয়ে নতুন ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যানবাহন চালক,পথচারিসহ সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, সকলকে রাস্তায় চলাচলে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন,অহেতুক একটি প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যানবাহন চালকদের ও একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটবে। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ৪ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার, সেতু এবং বাইপাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন সড়ক কত বড় বা ভারী যানবাহন চলতে পারে সে বিষয়টা একটু খেয়াল রাখা দরকার। কারণ অনেক সময় অনেকে এই বিষয়টি মানতে চান না। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের কথা আমরা বলছি। ইতোমধ্যে আমরা নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়ন করেছি। কাজেই যারা রাস্তায় চলাচল করেন তারা যখন রাস্তা পার হবেন তখন ডান এবং বাম এই দুইদিকে দেখে সচেতনভাবে পার হতে হবে। আবার রাস্তায় যারা যানবাহন গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালাবেন তাদেরও সচেতন হতে হবে। বাস, ট্রাক চালকদেরও সচেতন হতে হবে। উদ্বোধন করা অন্যান্য প্রকল্প হচ্ছে- ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টোক সড়কের ৭২তম কিলোমিটার বানার নদীর উপর ২৮২ দশমিক ৫৫৮ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ, ভোমরা স্থল বন্দর সংযোগসহ সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক এবং মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগধীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুসমূহ (১৩টি সেতু) স্থায়ী কংক্রিট সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবন প্রান্তে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো.নজরুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসানসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status