শেষের পাতা

এবার তহবিল চায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

সাম্প্রতিক সময়ে চরম অর্থ সংকটে পড়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। অন্যদিকে গচ্ছিত রাখা বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান আমানত ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটিকে। এই চাপ থেকে বের হওয়ার কৌশল হিসেবে এখন সরকারি আমানতে নজর দিয়েছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি একযোগে ২০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আমানত চেয়ে চিঠি দিয়েছেন রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ ইদ্রিছ। চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আধাসরকারি চিঠির (ডিও লেটার) সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর সচিব ও সিনিয়র সচিবদের এ ব্যাংকটিতে সরকারি আমানত গচ্ছিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

রাকাব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয সূত্রে জানা যায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং  স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি পাঠায় রাকাব। এতে ব্যাংকটির বর্ধিত কৃষিঋণের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই আমানত চাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, রাকাবের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) প্রায় দুবছর ধরে ১০০ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ ব্যাংকটির আমানতের চেয়েও বিতরণ করা ঋণের স্থিতি বেশি। ফলে তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা রাকাবে যেসব ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বড় অঙ্কের মেয়াদি আমানত রেখেছে, তার কয়েকটির মেয়াদপূর্তি হলেও তা ফেরত দিতে পারছে না। সমপ্রতি রূপালী ব্যাংক এক চিঠিতে রাকাবে এফডিআর হিসেবে রাখা তাদের ১০০ কোটি টাকা দ্রুত দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত না পেয়ে সরকারি ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদি আমানত নিয়েই চলছিল রাকাবের কার্যক্রম। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৮ কোটি টাকাই নেয়া হয় ১০টি সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মেয়াদপূর্তির পর কয়েকবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বে আমানত নগদায়ন করেনি রাকাব। একইভাবে সোনালী ব্যাংকের ১০০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৩০০ কোটি, ইইএফ তহবিলের ১৫৮ কোটি, সেতু কর্তৃপক্ষের ১১০ কোটি, সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের ৬০ কোটি, জীবন বীমা করপোরেশনের ৯০ কোটি এবং গৃহায়ন তহবিলের ৬০ কোটি টাকার আমানত মেয়াদপূর্তির পরও ফেরত দিতে পারেনি রাকাব। মেয়াদ শেষ হওয়ায় এসব আমানতের বেশিরভাগই একাধিকবার নবায়ন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, মূলত এডিআর-সীমা অতিক্রম করায় এমন তারল্য সংকটে পড়েছে রাকাব। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকটিকে কয়েক দফা সতর্কও করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়।

রাকাবের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। যদিও একই সময় ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে বিশেষায়িত ব্যাংকটির এডিআর ১০৪.৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার কোনো ব্যাংকের এডিআর ৮৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এছাড়া বিতরণ করা ঋণের ২০.১৫ শতাংশ খেলাপি হয়েছে রাকাবের। গত জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। এছাড়া ৭৭৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতেও রয়েছে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি।

ব্যাংকটির হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪২ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগের অর্থবছরেও ব্যাংকটি মুনাফা দেখিয়েছিল। তবে পরে বিশেষ নিরীক্ষায় ব্যাংকটির লোকসানের তথ্য উঠে আসে।
জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাকাবে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ ইদ্রিছ। এর আগে তিনি জনতা ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ ইদ্রিছ বলেন, পুরো ব্যাংক খাতেই তারল্য সংকট চলছে। রাকাব তার বাইরে নয়। ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জনসহ সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সম্মতি নিয়েই এসব আমানত চাওয়া হয়েছে।

১৯৮৭ সালে রাজশাহীসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি খাতে অর্থায়নের লক্ষ্যে বিশেষায়িত এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সরকার। শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বাড়ানো, সেচ, শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, কৃষি শিল্প ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় অর্থায়ন করে থাকে রাকাব। বর্তমানে ব্যাংকটি ৩৮২টি শাখা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার ৩৩২টি পল্লী শাখা।

সংশ্লিষ্টরা জাননা, ব্যাংকটি কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিকাঠামোকে সুবিধা দিতে পরিচালিত হয়। কর্তৃপক্ষ যদি বিশেষ নজর না দেয় তা হলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে ব্যাংকটি। তাই ব্যাংকটির আর্থিক সংকটের কারণ বের করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরার্মশ দিয়েছেন তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status