শেষের পাতা

মেয়াদ শেষেও আলোর মুখ দেখেনি যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

শাহনেওয়াজ বাবলু

১৬ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয় ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি। এরপর কেটে গেছে ৩৪ মাস। অথচ কমিটি ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি সংগঠনটি।   এমনকি বিগত সময়গুলোতে কমিটি ‘হচ্ছে, হবে, দিচ্ছি’ বলে গণমাধ্যমকে বিভিন্ন সময় আশ্বস্ত করেছেন যুবদল নেতারা। এদিকে যুবদলের এই কমিটির মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র তিন মাস। এর মধ্যে আদৌ কি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। জানা গেছে, চলতি মাসেই হতে পারে যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এটি হতে পারে ২৭১ সদস্যের। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে সরাসরি কাউন্সিলের দাবি জানিয়েছেন অনেকে। এই পাঁচ জনের কমিটির মধ্যে রয়েছে আলাদা বলয়। সারা দেশের কমিটিতে রয়েছে আলাদা আলাদা আধিপত্য। কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছে মনোমালিন্য। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার পেছনে এসবও বড় কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। সংগঠনটির তৃণমূল নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ায় কার্যালয় তেমন আসা হয় না। সবাই যে যার মতো কর্মসূচি পালন করেন দায়সারাভাবে।

গত ৯ই অক্টোবর রাতে যুবদল নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে যুবদলের আংশিক কমিটির শীর্ষ ৫ নেতাসহ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা না করা কিংবা কাউন্সিলের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। নাম প্রকাশ যুবদলের এক নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কমিটির বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। আমরা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পক্ষে মত দিয়েছি। তবে কাউন্সিলের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই আপাতত কাউন্সিল না করার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি। কারণ এই মুহূর্তে কোনও কাউন্সিল করা যাবে না। কাউন্সিল করলেও অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়বেন। তখন তারা নিজেদের আর কোনও পরিচয় দিতে পারবেন না। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে অনেকেই পদ পেয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারবেন। দলের এমন সময়ে কাউকে বাদ দিয়ে কমিটি করাটা সংগঠনের জন্য অতোটা সুখকর হবে না। চলতি মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার জন্য তারেক রহামন নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান যুবদলের ওই নেতা। এদিকে গত ২রা জুলাই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্রকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন যুবদলের পদপ্রত্যাশী নেতারা। আর কমিটি না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন তারা। ওইদিনই বিকালে নয়াল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবদলের নেতারা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন। গত কয়েক বছরের সরকার দলের দমন পীড়ন ও মামলা হামালাকেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কারণ বলেন যুবদলের শীর্ষ নেতারা। তবে শিগগিরই কমিটি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে গত দশ বছর ধরে কোন রাজনৈতিক পরিবেশ নাই। আর এমন একটা সময়ে আমাদের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে যখন, আমাদের দলের লোকেরা সরকারের দমন পীড়ন ও মামলা হামলার মধ্যে ছিলাম। তাই কাউন্সিল করতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে যাবে। যুবদলের কমিটি কি পূর্ণাঙ্গ হবে? না কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে জানতে চাইলে নিরব বলেন, আপাতত আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করব। কাউন্সিল হবে কিনা এটা সম্পূর্ণ দলের সিদ্ধান্ত। আর সংগঠনের গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ীই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।
এতো বছর পার হয়ে গেলেও কেন আলোর মুখ দেখেনি যুবদলের কমিটি এ বিষয়ে তেমন কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি বিএনপির সিনিয়র ও সাবেক যুবদলের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন ধারণা নাই। আমি কিছু জানিও না।

যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যুবদলের সাবেক সভাপতি হিসেবে আমার সঙ্গে সাংগঠনিক যে যোগাযোগ করা দরকার সেটা করা হয়নি। যে কারণে আমি এই সংগঠনের বিষয়ে নিজেও কোন কথা বলতে বা পরামর্শ দিতে যাইনি। তাই যুবদলের কমিটির কি অবস্থা বা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে কি না এই বিষয়ে অফিশিয়ালি কিছুই জানি না। ৩৪ মাস আগে হওয়া যুবদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির ৫ জন শীর্ষ নেতার মধ্যে আছেন- সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। একই দিনে ঘোষণা করা হয়েছিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের আংশিক কমিটি। এই দুই ইউনিটেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন, সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা কামাল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফউদ্দিন জুয়েল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটির নেতাদের মধ্যে সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, সিনিয়র সহসভাপতি শরিফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান মিন্টু, আরটি মামুন ও আনন্দ শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান শাহীন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status