প্রথম পাতা

দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনার মামলায় বাচ্চুকে আসামি করে চার্জশিট দিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করেছে দুদক। কী কারণে দুদক এ রকম কাজ করেছে, এটি জাতি জানতে চায়।

দুদক বা দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফজলে নূর তাপস বলেন, অবশ্যই, আমি এ কারণে গতকাল একটি সভায় বলেছি, দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন, তিনি কোনো প্রভাবের কারণে ব্যবস্থা নেননি, তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। যদি তিনি মনে করেন, তিনি কারো কথায় প্রভাবিত হবেন না তাহলে আমরা মনে করি, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ নেবে দুদক।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যানকে নিয়ে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে শেখ ফজলে নূর বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি কয়েক দফা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আমরা মনে করি, জাতি মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন, শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, সে প্রেক্ষিতে দুদকের এ বিষয়ে জবাবদিহিতা আবশ্যকীয়। তবে, কেন এখন পর্যন্ত আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, তা  জাতি জানতে চায়।

তিনি বলেন, আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। আমরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও দেখেছি, বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে, ব্যাংকিং সেক্টরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটার মূল ব্যক্তি হলেন, বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। যার কারণে সরকার তাকে সেই পদ থেকে অপসারণ করেছে। কিন্তু আজ অবধি বেসিক ব্যাংক-সংক্রান্ত যতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি শুধু কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের সেই মামলায় সম্বপৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা হয়নি। যদিও তার স্বেচ্ছাচারিতা এবং একক সিদ্ধান্ত ঋণগুলোর ব্যাপারে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেটা আমাদের স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন তদন্তের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে। বাচ্চুকে কারা বাঁচিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র কারা করছে সেই প্রশ্নের জবাব দুদক চেয়ারম্যানই দিক।

এদিকে, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক চেয়ারম্যান একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থার চেয়ারম্যান। ওনার চেয়ারম্যানশিপ নির্ধারণ করা হয় সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে ও বাছাই কমিটির মাধ্যমে। চেয়ারম্যান পদত্যাগ করবেন কিনা এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। খুরশীদ আলম বলেন, কিছুদিন আগে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এখানে চার হাজার কোটি টাকার বিষয়। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি অনেক টাকা উদ্ধার হওয়ার পথে। মানিলন্ডারিং মামলার প্রধান বিষয় টাকার উৎস এবং টাকাটা কোথায় গেছে তা খুঁজে বের করা। এখন টাকার যদি গন্তব্য বের করা না যায় তাহলে তো এ চার্জশিট আদালতে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তার মানে এই না যে, অনন্তকাল পর্যন্ত চার্জশিট হবে না। আমি যতটুকু জানি টাকার গন্তব্য খুঁজে বের করা হলে চার্জশিট হয়ে যাবে। চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুর নাম থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, তার সংযুক্তি থাকলে অবশ্যই নাম থাকা উচিত। যদি গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ থাকে তাহলে অবশ্যই নাম আসবে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় ৫৬ টি এবং পরের বছর আরো ৫টি মামলা করে দুদক। এসব মামলা করার পর ৪০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযোগপত্র দেয়নি সংস্থাটি। মামলায় ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের আসামি করা হলেও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাউকেই আসামি করা হয়নি। বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জড়িত থাকার কথা বলা হলেও মামলায় তাদের আসামি করা হয়নি। তবে বেসিক ব্যাংকের ঘটনায় করা মামলাগুলোয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা অনেক দিন ধরে কারাগারে। ঋণগ্রহীতা কেউ কেউ ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা জামিনে বেরিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status