দেশ বিদেশ
ঠিকাদারির লাভের অঙ্ক ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
২০১৯-১০-১০
সরকারি প্রকল্পে বারবার ব্যয় বাড়ানোর কথা শোনা যায় প্রায়ই। কাজ কম করে ঠিকাদার টাকা ভাগিয়ে নেয়ার ঘটনাও অহরহ। কিন্তু মানসম্মত কাজ করে লাভের মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত দেয়ার নজির খুব একটা নেই। এবার সেই নজির স্থাপন করেলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পায় বুধবার। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে ফেসবুকে। আলোচনা চলছে চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও। সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি এ নিয়ে বলেছেন, সব ঠিকাদাররা খারাপ না। ভালো ঠিকাদারও রয়েছে গণপূর্তে। তার প্রমাণ হচ্ছে আবু তৈয়ব। চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ সেনানিবাসের পাশে বায়েজিদ সবুজ উদ্যান নামে একটি পার্ক করেছে গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্পের বরাদ্দ ছিলো ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ২০১৭ সালের এপ্রিলে কাজটি পান উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সমপাদক আবু তৈয়ব। মানসম্মতভাবে ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শেষ করেন তিনি। এরপর লাভের ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা গণপূর্ত বিভাগকে ফেরত দিয়েছেন আবু তৈয়ব। গতকাল প্রধান অতিথি হিসেবে এ পার্কটি উদ্বোধন করেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। তবে বুধবার সকালে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। ছাত্রলীগের চলমান কর্মকাণ্ডের মধ্যে আবু তৈয়বের এ কাজের প্রশংসা করেন অনেকে। আরিফ উদ্দিন নামে এক যুবক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, শুধু ছাত্রলীগার হলে হবে না, নীতি নৈতিকতা সমপন্ন হতে হবে। চারদিকে খাই খাই অবস্থার মধ্যে আপনি (আবু তৈয়ব) বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আমার দেখা সেরা ছাত্র নেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন। সাইফুল আলম নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ছাত্ররাজনীতি মানে ভোগ নয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। বর্তমান সময়ের ছাত্রলীগ নেতাদের কুকর্মের কারণে যখন আমরা বিব্রত তখন একজন আবু তৈয়বকে নিয়ে আমরা গর্বিত। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সমপাদক ইউনুস গণি বলেন, আবু তৈয়বের এ ধরণের কাজ প্রশংসার দাবিদার এবং একটি দৃষ্টান্তও বটে। নতুন যারা ছাত্রলীগ করবে বা ব্যবসা বাণিজ্য করবে তাদের কাছে এটি অনুপ্রেরণা। তাকে অনুসরণ করা উচিত। তিনি আরো বলেন, মূলত দুঃসময়ে যারা রাজনীতি করে তাদের মধ্যে দলের প্রতি বিশেষ আনুগত্য ও ভালোবাসা থাকে। ফলে দলের দুর্নাম হয় এমন কোনো কাজ তারা করে না। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি ইউনিটের সদস্যদেরকে তাকে (তৈয়ব) অনুসরণ করার আহ্বান জানান উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু তৈয়ব বলেন, আমি মানসস্মতভাবে কাজ করে পার্কটি তৈরি করেছি। আমার যত টাকা খরচ হয়েছে বা যত লাভ করা উচিত তা করে বাকি টাকা ফেরত দিয়েছি। কেন আমি রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করবো? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চান সেখানে আমাদেরকেও অংশীদার হতে হবে। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, নগরের বায়েজিদের সেনানিবাস এলাকায় বায়েজিদ সবুজ উদ্যান নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। দুই একরের বিশাল এ উদ্যানে ৪১ প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। রয়েছে বসার বেঞ্চ ও ৪ হাজার ফুটের ওয়াকওয়ে, শিশুদের রকমারি খেলনা, আলোক সজ্জিত পানির ফোয়ারা। পুরো উদ্যানে ২টি ফটক রয়েছে। বসার বেঞ্চ আছে একক ৩৯টি, দ্বৈত ৭টি। ৬০ ফুট ব্যাসের জলাধারের দুই পাশে উন্মুক্ত গ্যালারি রাখা হয়েছে। জলাধারে পানি রাখা হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট। ১ হাজার ২০০ ফুট সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। পার্কে আসা লোকজনের জন্য নারী-পুরুষের আলাদা টয়লেট রয়েছে। দিনের ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিং হবে উদ্যানটি। বাগানে সবুজ ঘাসে ও গাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর জন্য রয়েছে ৬০টি সিপ্রঙ্কলার। পুরো উদ্যানে ১০৮টি কমপাউন্ড লাইট, ১৬টি গার্ডেন লাইট ও ৫৫টি ফাউন্টেন লাইট রয়েছে। বলা যায় সব মিলিয়ে এক নৈসর্গিক আয়োজন এই সবুজ উদ্যানে।