শেষের পাতা

সুফিয়া-নাজমাদের ভয়ঙ্কর মিশন

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

৯ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

পূর্বাঞ্চল রেলপথে যাত্রীবাহী বিভিন্ন ট্রেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অর্ধশত নারী অপরাধী। তাদেরকে ব্যাকআপ দিচ্ছে সংঘবদ্ধ এই দলের পুরুষ সদস্যরা। ট্রেনে উঠার মুহূর্তে, কামড়ায় ঠাসাঠাসি ভিড়ে তারা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের পিকপকেটিং করছে। নারী যাত্রীদের গলা, কান থেকে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়া ছাড়াও ব্যাগ কেটে বের করে নিচ্ছে টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। পুরুষ যাত্রীদেরও পকেট কাটছে যাত্রীবেশী নারী-পুরুষ মিলিত এই অপরাধী দল। সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির সদস্যরা এমন ৪ নারী অপরাধীকে আটক করে। তারা হচ্ছে- নাসিরনগরের দৌলতপুর গ্রামের মৃত ধন মিয়ার স্ত্রী সোফিয়া বেগম (৫০), মাসুদ মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩০), সোহাগ মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০) ও এলাচ মিয়ার স্ত্রী জহুরা বেগম (২৭)। ওইদিন বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় এ ৪ জনকে। ৫ই সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্ত:নগর মহানগর গৌধুলী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠার পরই ফারিয়া বিনতে আলম শাওলি নামে এক যাত্রী দেখতে পান তার ভ্যানিটি ব্যাগ কাটা। ব্যাগে রক্ষিত ৬ ভরি স্বর্ণের গহনা নেই। যার মধ্যে ছিলো কানের দুল, একজোড়া চুড়ি, ব্রেসলেট, ২টি চেইন ও লকেট। শাওলীর স্বামী শাহনিয়াজ আলমও দেখেন তার পকেট কাটা। নেই স্মার্ট ফোনটি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোজাম্মেল হক জানান- এই ঘটনার সূত্রেই আটক করা হয় ট্রেনে ও প্ল্যাটফরমে অপরাধ করে বেড়ানো ৪ নারীকে। এরা রেলপথের সংঘবদ্ধ অপরাধী দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আগের অনেক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান, ফাড়ির ইনচার্জ। বিভিন্ন সময় তারা রেলওয়ে পুলিশের হাতে আটকও হয়। নাজমা গর্ভবতী থাকা অবস্থাতে একবার ধরা পড়েছিলো। এবার ২১ মাস বয়সী সন্তান আরমানকে নিয়ে ধরা পড়লো সে। শাওলীর পিতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক সমতটবার্তার সম্পাদক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধি মনজুরুল আলম বাদী হয়ে এ ঘটনায় পরদিন আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান- তাদেরকে আটক করার খবর পেয়ে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে ফাঁড়িতে যাই। আটককৃতদের ছবি উঠিয়ে আমার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠালে সে তাদের মধ্যে সোফিয়া ও আরেকজনকে চিনতে পারে। সে আমাকে জানায়, ট্রেনে উঠার সময় তাদেরকে দেখেছে সে। একজনের গায়ে সবুজ রংয়ের উড়না ছিলো বলেও জানায়। সোমবার ধরা পড়ার সময়ও সোফিয়ার গায়ে সবুজ রংয়ের উড়না ছিলো। এনিয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা চলতে থাকার মুহূর্তেই সোফিয়া তার গা থেকে সবুজ রংয়ের উড়নাটি চট করে সরিয়ে ফেলে।

একারণে তার প্রতি সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ জানায়- এরআগেও সোফিয়া ধরা পড়েছিলো। তখন বয়স্ক মহিলা এই অজুহাত দেখিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়। এঘটনার ২ দিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে কুমিল্লাগামী এক যাত্রীর পকেট কেটে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায় অপরাধীচক্রের সদস্যরা। ২১শে আগস্ট বিকেলে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়ার পথে মনিরুজ্জামান পলাশ নামে এক যাত্রীর পকেট থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পলাশ জানান- ট্রেনে উঠার সময়ই প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগটি সামনের পকেটে নিয়ে আসেন। এই সতর্কতার পরও রক্ষা হয় না। অতিরিক্ত ভিড়ের সুযোগে সামনের পকেট থেকে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়। নিয়মিত এমন ঘটনার শিকার হচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। ট্রেনে উঠার সময়, কামড়ায় ভিড়ের সুযোগে নারী-পুরুষ যাত্রীদের পকেট, ব্যাগ কেটে বা অন্যকৌশলে নগদ টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে কেটে পড়ছে অপরাধী চক্রের সদস্যরা। সূত্র জানায়- নারী অপরাধীরা টার্গেটমতো মালামাল হাতানোর পরই সেটি পুরুষ সদস্যের হাতে তুলে দেয়। পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা সীমানাতেই এধরনের ঘটনা ঘটছে বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে আসনের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশী যাত্রী ঢাকা পথে যাতায়ত করে। ভিড়ের এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। ফলে, এই স্টেশন তাদের কাছে শিকার ধরার লোভনীয় জায়গা হয়ে উঠেছে।

এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে উঠতে যে প্লাটফরম ব্যবহার করতে হয় সেটিতেও নেই পর্যাপ্ত কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ২/১ টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও সেগুলো অচল দীর্ঘদিন ধরে। প্লাটফরমে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও নেই। ফলে আধারেই রাতের ট্রেনে উঠতে হয় যাত্রীদের। আখাউড়া রেলওয়ে থানার একজন কর্মকর্তা সেফাতুর রহমান জানান- এ ধরনের অপরাধী কতো সংখ্যক বা এরা কারা এ ধরনের কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। অধিকাংশ যাত্রী তাদের মালামাল চুরি হওয়ার পর লিখিত কোন অভিযোগ করেন না। সন্দেহবশত ধরলেও সে কারণে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status