মত-মতান্তর

টাকা লাগবে, টাকা?

শামীমুল হক

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

টাকা লাগবে, টাকা? ধুত্তোরি! টাকা লাগে না কার? চলতে হলে টাকার প্রয়োজন। স্ট্যাটাস মেইনটেন করতে টাকার প্রয়োজন। সমাজপতি হতে গেলে টাকার প্রয়োজন। নেতা হতে গেলে টাকার প্রয়োজন। সরকারি চাকরি পেতে হলে টাকার প্রয়োজন। টেন্ডার বাগিয়ে নিতে হলে টাকার প্রয়োজন। মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে টাকার প্রয়োজন। দিন চালাতে হলে টাকার প্রয়োজন। টাকার প্রয়োজন কোথায় নেই? প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন শুধু টাকার। তবে প্রশ্ন হলো কত টাকার প্রয়োজন। একজীবনে কত টাকা হলে মানুষ চলতে পারে? একশ’? দুইশ’? হাজার? লাখ? কোটি? শত কোটি? হাজার কোটি? আসলে সমস্যা হলো এখানেই। টাকার প্রয়োজন হিসাব ছাড়া। একজন দিনমজুর দিনে আয় করে ৫০০ টাকা।

তিনি এখান থেকে ব্যয় করে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেন। উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। একজন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসে যে টাকা পান সে টাকা দিয়ে কায়কষ্টে দিন পার করেন। ঘর ভাড়া, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা ব্যয় আর দৈনন্দিন খরচ মিটিয়ে ডাল-ভাত খেতে পারলেই খুশি। আর একজন সরকারি চাকরিজীবী মাসের বেতনকে হিসাবেই নেন না। উপরি উপার্জনে নজর থাকে তার। প্রতিযোগিতা চলে কে কত উপরি উপার্জন করবে সেদিকে। শোনা যায়, স্বাক্ষর করলেই কোনো কোনো দপ্তরের একজন সরকারি কর্মকর্তা পান লাখ লাখ টাকা। জি কে শামীম এমন টাকা নাকি দিয়েছেন দেড় হাজার কোটি। আর সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজের আয়ের তো হিসাবই নেই। ইদানীং ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে দেশবাসী অবাক হয়ে দেখছে টাকার দৃশ্য। ব্যাংকগুলো যেখানে টাকার জন্য ধুঁকছে সেখানে ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে টাকা রাখার ভল্ট। টেন্ডার মুঘল জি কে শামীম, খালেদ, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক, রুপন ভূঁইয়া এমনকি তার কর্মচারীর বাসায়ও পাওয়া গেছে কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, টাকা এখন পাওয়া যাচ্ছে নদীর পাড়েও। বস্তা বস্তা টাকা ফেলে দেয়া হয়েছে নদীতে। যেখানে টাকার জন্য মানুষ কত কৌশল করে সেখানে ফেলা দেয়া হয় টাকা।

কারণ কি? এত টাকা হয়েছে ঘরে, যা রাখা দুষ্কর। তাই বেছে নেয়া হয়েছে নদীকে। ইতিমধ্যে দেশবাসী জেনে গেছে এসব টাকার উৎস কোথায়? সেদিকে না গিয়ে শুধু বলতে চাই, টাকা লাগবে, টাকা? ওরা এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষ ডাকলে হয়তো দেশের অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটতো। ঘরে বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকা পিতার বোঝা হয়তো কমতো। কিন্তু টাকার নেশায় যারা অন্ধ তারা কি ওদের কথা শোনার সময় আছে? চিন্তা করার সময় আছে? তাদের চিন্তা, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে বাড়ি করা। ব্যাংকের ভল্ট নিজ ঘরে রাখা। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যারা ধরা খেয়েছে তাদের কি কিছু হবে? ক’দিন পরই জেল থেকে ছাড়া পেলে হয়তো রাজপথে দেখবো ওদের গলায় ফুলের মালা দিয়ে স্লোগান তুলছে তার চেলাপেলারা- ‘অমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র।’
 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status