বাংলারজমিন

সোনাগাজীতে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় এএসআই প্রত্যাহার

ফেনী প্রতিনিধি

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

ফেনীর সোনাগাজীতে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় সোনাগাজী মডেল থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সুজন কুমার দাসকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার কোনো এক সময় তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয় কর্তৃপক্ষ।
জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূইয়া সার্কেল) সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের অপরাধ বিভাগের পুলিশ সুপার হাসান মাহমুদ তদন্ত করছেন। তবে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, ওই বিধবা গৃহবধূর জমিজমা সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া হোসেনের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নির্যাতিতা বিধবা গৃহবধূ। আদালতকে তিনি জানান, অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তাও তাকে ধর্ষণ করেছেন। তবে পুলিশের ভয়ে তিনি মামলার এজাহারে এএসআই সুজন কুমার দাসকে আসামি করেননি।
নির্যাতিত বিধবা গৃহবধূর একাধিক স্বজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ১০ই সেপ্টেম্বর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিন, তার স্ত্রী রোশনা খাতুন এবং তাদের পালিত কন্যাকে (নির্যাতিত বিধবা গৃহবধূ) পিটিয়ে আহত করেন সাহাব উদ্দিনের ভাই কালা মিয়া ও তার ছেলে মাসুদসহ কয়েকজন।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত গৃহবধূ। ঘটনাটির তদন্তে থানার কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এএসআই) সুজন চন্দ্র দাস ওই নারীর কাছে নগদ অর্থ (যাতায়াত খরচ) দাবি করে। দরিদ্র ওই নারী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। একপর্যায়ে থানায় রহিমা সুন্দরী নামে এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গৃহবধূ।
এরপর গত ১৫ই সেপ্টেম্বর গৃহবধূ নারীটি প্রতারক নারী রহিমার সঙ্গে দেখা করলে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে সঞ্জু শিকদার, আফলাছসহ ৫ জন যুবক অসহায় গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় গৃহবধূর সঙ্গে থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের রিং, ৮ আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা।
পরে জ্ঞান ফিরলে রহিমার কাছে এই নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করারও হুমকি দিয়ে ফের দুই যুবককে ডেকে এনে ধর্ষণ করান রহিমা।

পরে ধর্ষণের ঘটনাটি জানাতে ওই নারী থানায় গেলে কর্তব্যরত এএসআই সুজন চন্দ্র দাস প্রতারক রহিমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেন। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কানে পৌঁছলে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে ওই নারী বাদী হয়ে দাগনভূঞা উপজেলার খোকন শিকদারের ছেলে মুচি সঞ্জু শিকদার, সোনাগাজীর চর দরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের কন্যা ও স্বামী পরিত্যক্তা রহিমা সুন্দরী ও বখাটে আফলাছ হোসেনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পরদিন ১৮ই সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে সঞ্জু শিকদার ও রহিমা সুন্দরীকে আটক করে পুলিশ। আটক রহিমা প্রায় তিন বছর ধরে মডেল থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় বুয়ার কাজ করছিল।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত এএসআই সুজন কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।  
এদিকে ধর্ষণের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খালেদ হোসেন বলেন, মামলার আসামি সঞ্জু সিকদার ও রহিমাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ২৭শে মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানির মামলা করতে এসে নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন সোনাগাজী মডেল থানা তৎকালীন ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। ওই ঘটনার কারণে চাকরিচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ওসি মোয়াজ্জেম এখনো জেলহাজতে রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status