বাংলারজমিন

মেহেরপুরে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স, নেই পদক্ষেপ

মেহেরপুর প্রতিনিধি

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

মেহেরপুরের গাংনীতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। গত ৯ মাসে ৫০১ জন রোগী গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে। অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর মাংস খেয়ে লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে এলাকাবাসী ও খামারিরা জানান, অসচেতনতা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রোগতত্ত্ব বিভাগের একটি টিম। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভিটাপাড়ার আমিরুল ইসলাম। গত ১০ দিন আগে তার বাড়ির একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি এটি জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। তার দুদিন পরই দুই হাতে ও মুখে ফোঁড়া ও পচন দেখা দেয়। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। ডাক্তার জানান, তিনি অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত। গরু জবাইয়ে সহযোগী তার ভাই ইদ্রীস এবং ফজলু এ রোগে আক্রান্ত হন। অপরদিকে মাংস রান্না করার সময় গরুর রক্ত ও বর্জ হাতে লাগায় স্ত্রী সালেয়ারা ও মেয়ে নারগিছও অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হন। শুধু আমিরুলের পরিবার নয়, গোটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গত ৯ মাসে ৫০১ জন রোগী অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিভিন্ন হাটবাজারে প্রশাসনিক নজরদারি না থাকায় স্থানীয় কসাইরা রুগ্‌ণ গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করে। ওই মাংস খেয়েই লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কোনো মোটাতাজা গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কাউকে না জানিয়ে ওই গরুর মাংস ভাগাভাগি করে নেয়। এ গরু কোনো রোগে আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। তা ছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো লোকজনের তদারকি না থাকায় অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। ফলে দিন দিন এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তরা জানান, হাটবাজার থেকে গবাদি পশুর মাংস এনে রান্না করা ও খেয়ে এ রোগ দেখা দিয়েছে। মাংস খাবার পরপরই মুখসহ বিভিন্ন অঙ্গে চুলকানি দেখা দেয়। তার পর ফুলে ও পানি ঝরে। পরে জানতে পারি এটি অ্যানথ্রাক্স রোগ। অ্যানথ্রাক্স কি এবং কেন হয় তা জানেন না তারা। তা ছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন অসুস্থ পশু নিয়ে গেলে কোনো চিকিৎসা দেন না।
পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে এ তহ বাজার তাই কোনো রুগ্‌ণ পশু এখানে জবাই করা হয় না। কিন্তু অন্য হাটবাজারে কোনো তদারকি নেই। ফলে রোগা ও অসুস্থ গরু জবাই করা সহজ। স্থানীয় লোকজনও রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সস্তায় কিনে খায়। ফলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে। বামন্দি বাজারের কয়েকজন কসাই জানান, গত ১০ বছরের একদিনও কোনো লোকজন আসেনি পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষা করতে। কোনো নজরদারি নেই।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিডি দাস জানান, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটা-ছেড়া ও খাওয়ার কারণে সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাজারে রোগাক্রান্ত গরু যাতে জবাই না করতে পারে সেদিকে নজরদারি প্রয়োজন।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান জানায় বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ রোগের বিস্তার বেড়েছে। তা ছাড়া লোকবলের অভাবে তেমন কোনো তদারকি করা সম্ভব হয় না। অনেকেই গ্রামে পশু জবাই করেন। অসুস্থ গবাদি পশুর মালিকরাও নিজেরাই জবাই করে মাংস বিক্রি করে থাকে। এখান থেকেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এলাকায় রোগীদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করেছেন এবং ফ্রিজে রাখা মাংস পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পেয়েছেন। মাংসগুলো পুঁতে রাখেন এবং অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই করে গভীর গর্তে পুঁতে রাখার পরামর্শ দেন এ পরিদর্শক দল। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরী করে এনথ্রাক্স প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেবেন এমনটি জানালেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান।




   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status